|
|
|
|
|
|
গৃহ-ঋণ |
সুদের টুকিটাকি |
পরে যদি ধার শোধের চিন্তায় ঘুম না-আসে? শুরুতেই
সুদ আর
মাসিক কিস্তির হিসেব কষুন। পরামর্শ দিলেন
প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী |
ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনার জন্য কতটা ধার পাওয়া যায়। কিংবা কী ভাবে আপনি সেই ধারের অঙ্ক বাড়াতে পারেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি আমরা। কিন্তু যার কথা না-বললে, যে কোনও ঋণের আলোচনাই অসম্পূর্ণ থাকে, তা হল সুদ। তাই এ বার সেই তুমুল গুরুত্বপূর্ণ হিসেবের দিকেই নজর দেব আমরা। |
|
সুদ কেমন?
বিভিন্ন ব্যাঙ্কে বিভিন্ন। তবে এখন সাধারণ ভাবে তা ঘোরাফেরা করছে ১০-১১ শতাংশের আশেপাশে। আপনি কোথা থেকে কত টাকার ঋণ নিচ্ছেন, সুদ নির্ভর করবে তার উপরেই।
ফিক্সড না ফ্লোটিং?
যে সুদের হার মোটামুটি ভাবে স্থায়ী থাকে, তাকে ফিক্সড (স্থায়ী) রেট বলি আমরা। আর ফ্লোটিং (পরিবর্তনশীল) বলতে বুঝি ব্যাঙ্কের বেস রেট বা প্রাইম লেন্ডিং রেট (পিএলআর) অনুযায়ী সেই হার বদলানো। কিন্তু সত্যি বলতে কী, আজ-কাল সত্যিকারের ফিক্সড সুদ আর নেই বললেই চলে। কারণ, প্রায় কোনও গৃহঋণেই পুরো মেয়াদের জন্য সুদের হার এক থাকে না। নির্দিষ্ট সময় পর তা বদলানোর পথ খোলা রাখে ব্যাঙ্ক। ফলে সব কিছু দেখে-শুনে সিদ্ধান্ত নিন। জেনে নিন, ফিক্সড বলতে সত্যিই তা কতটা স্থায়ী। এবং তা কী ভাবে বদলাবে, তার শর্ত। তবে একটা কথা মাথায় রাখা জরুরি। ফিক্সড সুদে ধার নিয়ে সময়ের আগে তা মেটালে আপনাকে জরিমানা করতে পারে ব্যাঙ্ক। ফ্লোটিংয়ে কিন্তু সেই অসুবিধা নেই।
পালা-পার্বণে ছাড়
মাঝে-মধ্যেই দেখবেন কম সুদে ঋণের প্রকল্প বাজারে আনছে ব্যাঙ্কগুলি। তার সুযোগ নিতে পারেন। কিন্তু মাথায় রাখবেন, এ ধরনের প্রকল্প কিন্তু সাময়িক। নির্দিষ্ট সময় পেরোলে বেস রেট বা পিএলআর অনুযায়ী পুরো সুদই গুনতে হবে আপনাকে।
বাড়তি খরচ মাথায় আছে?
শুধু সুদ-সহ বাড়ির দাম মেটানোই কিন্তু সব নয়। মাথায় রাখুন অন্যান্য খরচও। যেমন, ‘প্রসেসিং-ফি’। ঋণ মঞ্জুরের জন্য গ্রাহকের কাছে এই টাকা নিয়ে থাকে ব্যাঙ্কগুলি। রয়েছে সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণের (ভ্যালুয়েশন) খরচ। সাধারণত সার্চ রিপোর্ট তৈরির টাকাও গুনতে হয় গ্রাহককে। তবে কিছু ক্ষেত্রে আবার এই সব কাজের অনেকটা করে দেয় ঋণদাতা সংস্থাই।
আর বন্ধক?
পুরনো ফ্ল্যাট বা বাড়ির ক্ষেত্রে শুধু তার দলিল বন্ধক রাখলেই চলে। নতুন ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে (যা এখনও তৈরি হয়নি বা যার কাজ চলছে) গচ্ছিত রাখতে হবে ডেভেলপারের সঙ্গে আপনার ক্রয় চুক্তি। দিতে হবে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ও।
কিছু ক্ষেত্রে ফিক্সড ডিপোজিটের সার্টিফিকেট কিংবা জীবন বিমার পলিসি-ও বন্ধক হিসেবে চায় ঋণদাতা সংস্থা। সাধারণত গ্রাহকের ঋণ শোধের ক্ষমতা নিয়ে সংশয় থাকলে তবেই এ ধরনের দাবি করে তারা। তাই এমনটা ঘটলে, শুরুতেই ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলুন।
‘টপ-আপ’ বলতে...?
ফ্ল্যাট বা বাড়ি কিনতে এক বার ঋণ নেওয়ার পর তা মেরামতির জন্য ওই ঋণ শোধ করাকালীনই ফের ধার নিতে পারেন গ্রাহক। একেই টপ-আপ বলি আমরা। তবে সেই ঋণের অঙ্ক নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির বাজার-মূল্য এবং শোধ দেওয়ার ক্ষমতার উপর। সাধারণত, ঋণ নেওয়ার এক বছর পরেই টপ-আপের জন্য আবেদন করতে পারেন আপনি।
আগে মেটালে জরিমানা?
আগেই বলেছি, বর্তমান আইনে ফ্লোটিং সুদে এ ধরনের জরিমানার প্রশ্ন নেই। যদিও কিছু সংস্থা ৬ মাসের আগে পুরোটা শোধ দেওয়ার পথ খোলা রাখে না। আর ফিক্সড সুদে ঋণ নিলে, ২% পর্যন্ত জরিমানা দাবি করতে পারে সংস্থা। সে ক্ষেত্রে জরিমানা মকুবের বিষয়টি তাদের হাতে। শেষে একটা কথা বলে রাখা ভাল। ঋণের বিভিন্ন রকম পরিমাণ, সুদের হার, ইএমআইয়ের অঙ্ক, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি নিয়ে বাজারে প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প চালু করছে ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য ঋণদাতা সংস্থা। বাজার ঘুরে বা নেটে বসে বিস্তারিত খোঁজ-খবরের পর সব কিছু খুঁটিয়ে দেখে তবেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিন।
|
সিবিলে রেকর্ড কেমন?
আগে নেওয়া ঋণ না-মেটালে কিন্তু তা গোপন করা সম্ভব নয়। কারণ, তথ্য লুকিয়ে কেউ ফের ঋণের জন্য আবেদন করলে, ক্রেডিট ব্যুরো ইন্ডিয়া লিমিটেড (সিবিল)-র কাছ থেকে সে খবর পেতে পারে ঋণদাতা সংস্থা। কারও নামে কোনও অনাদায়ী ঋণ রয়েছে কিনা দেখতে সিবিল-এরই দ্বারস্থ হয় তারা। তাই গৃহ-ঋণ পেতে আগের ধার মিটিয়ে ফেলুন। নইলে কিন্তু ঋণ মঞ্জুরের সম্ভাবনা ক্ষীণ।
সুবিধা কর ছাড়েও
ফ্ল্যাট বা বাড়ি শুধু ভাল বিনিয়োগ নয়। কর-ছাড়ের সুবিধাযুক্ত লগ্নিও। গৃহ-ঋণ নিলে, তার আসলের উপর ৮০(সি) ধারায় কর ছাড় পাবেন। আর সুদের টাকাও করমুক্ত হিসেবে গণ্য হবে ২৪(বি) ধারায়। শুধু তা-ই নয়। খেয়াল রাখবেন, ফ্ল্যাটের দাম ২৫ লক্ষ টাকার মধ্যে হলে এবং তার জন্য ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিলে, সুদে এক শতাংশ ভর্তুকি পাবেন আপনি।
ভাবুন পরিবারের কথা
গোড়াতেই বলে রাখি, বাড়ি কেনার সময় বিমা আদৌ বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু পরিবারের স্বার্থেই তা করে রাখা একান্ত জরুরি। কারণ, ঋণের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই গ্রাহকের মৃত্যু হলে, তখন একেবারে অকূল পাথারে পড়ে তাঁর পরিবার। বিশেষত যদি একমাত্র তাঁর উপরেই আর্থিক ভাবে এত দিন নির্ভরশীল হয়ে থাকে তারা। তাই এই পরিস্থিতি এড়াতে এখন ঋণের সমান টাকার এককালীন প্রিমিয়ামের জীবনবিমা (টার্ম পলিসি) করাতে পরামর্শ দিচ্ছে প্রতিটি ঋণদাতা সংস্থা। যাতে গ্রাহকের অবর্তমানে ঋণের দায় তাঁর উত্তরাধিকারীদের উপর না বর্তায়। চাইলে সেই প্রিমিয়ামের টাকাও গৃহ-ঋণের সঙ্গে ধার হিসেবে পেতে পারেন আপনি।
|
ব্যাঙ্কিং লোকপাল (ওম্বাড্সম্যান) বলেন |
মঙ্গল সিংহ সয় |
• ঋণের আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাঙ্ক আপনাকে লিখিত ভাবে জানাবে কী কী জমা দিতে হবে
• কাগজপত্র পাওয়ার পর ওই চিঠিতেই ব্যাঙ্ক বলে দেবে যে, কবের মধ্যে আপনি জানবেন ঋণ পাবেন কি না
• কী কী বন্ধক রাখতে হবে, তা-ও লিখিত ভাবে জানাবে ব্যাঙ্কই। মনে রাখবেন, ব্যাঙ্ক থেকে ব্যাঙ্কে ফারাক হতে পারে, কিন্তু একই ব্যাঙ্কের দু’টি শাখায় বন্ধক রাখার নিয়ম দু’রকম হবে না
• যা যা বন্ধক রাখলেন, তার তালিকা ব্যাঙ্কের কাছ থেকে সই করিয়ে নিন। তার পর হারালে, দায় ব্যাঙ্কের।
• বুঝে নেবেন সুদের অঙ্ক। মনে রাখবেন, ‘ফিক্সড’ রেট ফিক্সড নয়। বাড়লে, আপনার সুদও বাড়বে। গোড়াতেই জেনে নিন, কী ভাবে পরিবর্তন হবে ‘ফিক্সড’ সুদের হার। কমলে, অনেক ব্যাঙ্ক আবার তার সুযোগ সঙ্গে সঙ্গে দিচ্ছে না গ্রাহককে। এ নিয়ে চিন্তিত রিজার্ভ ব্যাঙ্কও
• যে কাগজে সই করবেন, তা মন দিয়ে পড়ুন। সুদ বাড়লে, ইএমআই বা মাসিক কিস্তির সংখ্যা কত বাড়ছে, তা ব্যাঙ্কেরই জানানো উচিত। আপনি কিন্তু সংখ্যা এক রেখে ইএমআইয়ের পরিমাণও বাড়িয়ে দিতে পারেন
• ব্যাঙ্কের সঙ্গে মতে না-মিললে, লিখিত অভিযোগ জমা দিয়ে চিঠি দিন। তবে অভিযোগ জানান নিজে। উকিলের সাহায্য নিলে তা গ্রাহ্য করা হয় না।
|
অভিযোগ জানানোর ঠিকানা
ব্যাঙ্কিং লোকপালের দফতর
প্রযত্নে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া
১৫, নেতাজি সুভাষ রোড
কলকাতা- ৭০০০০১
ফোন নম্বর: (০৩৩)-২২৩০ ৬২২২/৫৫৮০/ ৪৯৮২
ই-মেল: bokolkata@rbi.org.in |
|
|
|
|
|
|