কাজে সাহায্য করার কেউ ছিল না। বরাত পেয়েও কাজ শেষ করতে না পারায় ফস্কে যেত সুযোগ। যখন মূর্তি গড়া শেষ হত, তা কেনার লোক পাওয়া যেত না। প্রচুর খেটেও লোকসান ছাড়া অন্য কিছু হত না। এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে স্বামীর পাশে দাঁড়ান বর্ধমানের বাদামতলার পূর্ণিমা পাল। সংসারের কাজের ফাঁকে মূর্তি তৈরির কাজেও হাত লাগান। পাঁচ বছর এই কাজ করতে করতে নিজেই হয়ে উঠেছেন শিল্পী। নাওয়া-খাওয়া ভুলে দুর্গা গড়েছেন চলেছেন পূর্ণিমাদেবী। হয়েছে নাম-ডাকও।
বর্ধমানের খালেরবিল মাঠ লেনের এই কুমোরটুলি যথেষ্ট পুরনো। বংশানুক্রমে এখানেই ঠাকুর গড়ছেন সমীর পাল। কিন্তু তাঁর সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পরে গোড়ার দিকে সংসারের কাজেই ব্যস্ত থাকতেন পূর্ণিমাদেবী। কিন্তু সংসারের প্রয়োজনে এক সময়ে তিনিও এসে দাঁড়ান স্বামীর পাশে। তাঁর কথায়, “কাজে কেউ সাহায্য করার মতো না থাকায় বরাত নেওয়া প্রতিমাও সময় মতো জোগান দিতে পারত না আমার স্বামী। ফলে বিক্রি না হয়ে শেষ পর্যন্ত সে সব পড়েই থাকত। লোকসানের বহর দিন দিন বাড়ছিল। প্রচণ্ড খেটেও আমাদের তখন খেতে না পাওয়ার দশা। তাই এক দিন স্বামীকে বললাম, আমাকেই একটু গড়ে-পিটে নাও।” তিনি জানান, প্রথম প্রথম একটু সঙ্কোচ হত। কিন্তু ধীরে ধীরে কাজের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছেন। |
পূর্ণিমাদেবী জানান, প্রথম দিকে তিনি গভীর রাতে প্রতিমার শরীরে মাটি লাগানো, খড়িমাটি বোলানো, রং করা ইত্যাদি কাজ করতেন। তার পরে কুমোরটুলিতে ঠাকুর গড়ার চাহিদা বাড়ে। একা সমীরবাবুর পক্ষে প্রতিমা গড়ে সব দিক সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। তাই এ বারও এগিয়ে এলেন পূর্ণিমাদেবী। নিজেই স্বাধীনভাবে গড়তে শুরু করলেন সপরিবার দুর্গা।
তাঁর গড়া দুর্গা প্রতিমা এখন বিক্রি হয় বারো থেকে শুরু করে পঞ্চাশ হাজার টাকা দামে, জানালেন পূর্নিমাদেবী। এতে দারুণ খুশি তাঁর স্বামীও। তিনি বলেন, “ও সময় মতো পাশে না দাঁড়ালে এত দিনে আমার চালায় তালা পড়ে যেত। আর এখন তো ও আমার মতো ত্রিশ বছরের পুরনো শিল্পীর সঙ্গেও পাল্লা দিয়ে ঠাকুর গড়ছে। কুমোরটুলিতে এসে খরিদ্দারেরা এখন জানতে চান, পূর্ণিমা তাঁদের জন্য প্রতিমা তৈরি করে দিতে পারবে কি না!’’
নিজেরা প্রতিমা তৈরি কjলেও একমাত্র মেয়েকে সে কাজে আনতে চান না সমীরবাবু ও পূর্ণিমাদেবী। তাঁদের মেয়ে সোমা এখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। পূর্ণিমাদেবী বলেন, “ওকে ভাল ভাবে মানুষ করতেই তো আমার এই লড়াই।” |