অভিযুক্তদের ধরার নামে গ্রামে গিয়ে মহিলাদের উপরে অত্যাচারের অভিযোগ উঠল কাটোয়া পুলিশের বিরুদ্ধে। কাটোয়া থানার ওসি সনৎ দাসের নেতৃত্বে পুলিশ পুইনি গ্রামে গিয়ে মহিলাদের উপরে লাঠি চালায়, গালিগালাজ করে বলে অভিযোগ। ‘আহত’ মহিলারা এ বিষয়ে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। তার প্রতিলিপি জমা দেওয়া হয়েছে বর্ধমানের পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, মহকুমাশাসক ও এসডিপিও (কাটোয়া)-কে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত রবিবার রাতে। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশ কাটোয়ার পুইনি গ্রামে পিকনিক করছিলেন। সেই সময়ে সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন সিপিএমের বেশ কয়েক জন কর্মী-সমর্থক। দু’পক্ষের মধ্যে বচসা হয়। তা থেকে হাতাহাতি বাধে। দু’পক্ষেরই কয়েক জন আহত হন। আহতদের মধ্যে ৫ জনকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সিপিএম ও তৃণমূল পরস্পরের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করে। অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার কাটোয়া থানার পুলিশ পুইনি গ্রামে গিয়ে ৬ জন সিপিএম সমর্থককে গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার আদালতে তোলা হলে বিচারক ধৃতদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। এর পরে বুধবার ওই গ্রামের ৭ জন মহিলা প্রশাসনের নানা স্তরে অভিযোগ করেন, কাটোয়া থানার ওসি সনৎ দাসের নেতৃত্বে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ জনের একটি বিশাল পুলিশবাহিনী বাড়ি বাড়ি ঢুকে মহিলাদের উপর লাঠি চালায়, গালিগালাজ করে, এমনকী পোশাক ধরেও টানাহেঁচড়াও করে। আহত মহিলারা কাটোয়ার চন্দ্রপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করান। যদিও ওসি সনৎ দাসের দাবি, “আমরা কারও গায়ে হাত তুলিনি। পুলিশকে ঠিক ভাবে কাজ না করতে দেওয়ার জন্য এমন অভিযোগ তোলা হচ্ছে।”
মহিলাদের উপরে পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ শুনে ঘটনাস্থলে যান মঙ্গলকোটের সিপিএম বিধায়ক শাহজাহান চৌধুরী। বাড়ি বাড়ি ঘুরে কথা বলেন তিনি। গ্রামের বাসিন্দা চম্পা রায়ের অভিযোগ, “গভীর রাতে বাড়িতে ঢুকে পুলিশকর্মীরা চুলের মুঠি ধরে মারধর করেছে।” স্থানীয় ছবি মালিক, সাগরিকা দাসেদের অভিযোগ, “আমাদের উপর লাঠি চালিয়েছে পুলিশ। ধান ফেলে দিয়েছে।” তাঁদের দাবি, “আমাদের লোকেরা তৃণমূলের কাছে মার খেল। আর আমরা পুলিশের কাছে।” বিধায়কের বক্তব্য, “গোটা গ্রাম আতঙ্কে রয়েছে। অভিযুক্তদের পুলিশ গ্রেফতার করতেই পারে। কিন্তু পুলিশকর্মীরা অভিযুক্তদের ধরার নামে মহিলাদের গায়ে হাত তুলেছে। এ নিয়ে বিধানসভায় আমি সরব হব।” সিপিএমের কাটোয়া জোনাল কমিটির সম্পাদক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মহিলা পুলিশমন্ত্রীর আমলে মহিলাদের গায়ে হাত তুলল পুলিশ। আমরা দোষী পুলিশকর্মীদের শাস্তি চাই।” বর্ধমান জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মণ্ডল আজিজুল হক অবশ্য বলেন, “এ নিয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই।” কাটোয়ার এসডিপিও ধ্রুব দাস বলেন, “আমি বাইরে আছি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।” |