স্বামীজি থেকে চোল সাম্রাজ্য,
ডঙ্কা বাজছে পাড়ায়-পাড়ায়
বিবেকানন্দের সমাধিস্থলটা হুবহু বানাতেই হবে। তা না হলে থিমটাই তো মাটি! চিন্তায় কিছুতেই এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারছিলেন না রূপনারায়ণপুরের কল্যাণগ্রাম পাঁচ নম্বর শারোদৎসবের শিল্পী সির্দ্ধাথ রায়। দিনরাত এক করে সারক্ষণই মণ্ডপেই পড়ে রয়েছেন। শুধু তিনিই নন, নাওয়া-খাওয়া ভুলে তাঁর সঙ্গে সমান ভাবে কাজ করে চলেছেন প্রণব দেব, স্বরূপ আইচ, অভিষেক চট্টোপাধ্যায়েরাও।
প্রাচীন মন্দিরের ধংসাবশেষই হোক বা বিবেকানন্দের সমাধিস্থল কিংবা পরিবেশবান্ধব পাট শিল্পের কারুকাজের মণ্ডপ। পাড়ায় পাড়ায় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। নিজেদের সেরা উজাড় করে দিচ্ছেন কর্মকর্তারা। অর্থ, সময় কোনও কিছুরই পরোয়া নেই।
প্রতি বছরই নতুন থিম নিয়ে হাজির হয় কল্যাণগ্রাম ৫ নম্বর পুজো কমিটি। এ বারও তার অন্যথা হচ্ছে না। পুজো কমিটির সম্পাদক সুমিত দাস জানালেন, বিবেকানন্দের জন্ম সার্ধ শতবর্ষে তাঁরা স্বামীজিকেই থিম হিসাবে বেছে নিয়েছেন। চারিদিকে গাছ গাছালি ঘেরা ছোট্ট একফালি মাঠে তাঁরা তৈরি করছেন বিবেকানন্দের সমাধিস্থল। মণ্ডপের ভিতরে থাকবে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের কাজ। বিবেকানন্দের জীবনী এবং তাঁর যোগ প্রক্রিয়া নিজের শৈল্পিক ভাবনায় ফুটিয়ে তুলছেন শিল্পী। স্বামীজির সমাধিস্থলের ‘রেপ্লিকা’ তৈরির পাশাপাশি মণ্ডপের কারুকাজ কিছুটা স্বতন্ত্রও। রূপনারায়ণপুরের বাসিন্দা এই শিল্পী সিদ্ধার্থ রায় বলেন, “মণ্ডপে এসে দর্শনার্থীরা যদি স্নিগ্ধতায় ভরে ওঠেন তবেই আমার সার্থকতা।” পুজো কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক মধুমিতা গুপ্তর দাবি, “শিল্পীর আবেগের ছোঁয়ায় এ বার তাঁদের মণ্ডপ অন্য পাড়ার পুজোকে ছাপিয়ে যাবেই।”
ইতিহাস না জানলে মানব জীবনে পূর্ণতা পায় না। এমনটাই দাবি করছেন রূপনারায়ণপুরের রূপনগর দুর্গোৎসব কমিটির কর্মকর্তারা। তাই এ বার তাঁদের থিম ‘চোল সাম্রাজ্য’। এই সাম্রাজ্যের বিজয়নগর হাম্পির একটি প্রাচীন মন্দিরের ধংসাবশেষ এ বার তাঁরা মণ্ডপসজ্জায় ফুটিয়ে তুলেছেন। মণ্ডপসজ্জার দুই শিল্পী চিন্ময় মান্না ও দিবাকর দাস বললেন, “এখানে এসে ইতিহাস সঙ্গে কয়েকশো বছর আগের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন দর্শনার্থীরা।” প্রাচীন এই মন্দিরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। জনৈক এক কর্মকর্তা দুলাল সেন জানান, প্রায় দু’শো বছর আগের পাথর কাটা মূতির্র্র আদলে প্রতিমা তৈরি করছেন তাঁরা। এই পুজো কমিটির সদস্যেরাও বিবেকানন্দের জন্ম সার্ধশতবর্ষ মনে রেখে স্বামীজির জীবনী সম্বলিত প্রদর্শনীর আয়োজন করছেন।
দেবী আবির্ভাবের যে পৌরাণিক কাহিনী ভক্তদের মুখেমুখে ফেরে তারই দেখা মিলবে এ বার রূপনারায়ণপুরের দেশবন্ধু পার্ক সর্বজনীন মণ্ডপে। কমিটির অন্যতম কর্ণধার তথা সাহিত্যকর্মী অনাথবন্ধু চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁরা এ বার পরিবেশ সহায়ক সরঞ্জাম দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করছেন। মণ্ডপসজ্জার মূল উপকরণ পাট। কমিটির কোষাধ্যক্ষ শক্তিশঙ্কর পালের দাবি, “এই মণ্ডপ এ বার সমাজের কাছে পরিবেশ সচেতনতা বিষয়ক একটি বার্তা দিতে চলেছে।” বিষয়টি ফুটিয়ে তুলতে কাটোয়ার শিল্পী হরমোহন ঘোষ নিরলস চেষ্টা চালাচ্ছেন। শিল্পী দাবি করেন, দুর্গার আবির্ভাব থেকে দেবী হয়ে ওঠা পর্যন্ত ঘটনাবলীর নিখুঁত বিবরণ এই মণ্ডপে দেখতে পাবেন দর্শনার্থীরা। পুজো কমিটির সম্পাদক সুদীপ রায়ের দাবি, “শারোদৎসবের মূল বিষয় থেকে সরে গিয়ে অনেকেই বাহ্যিক আড়ম্বরের দিকে ঝোঁকেন। আমরা সেটা চাই না। তাই আমরা এ ভাবে মন্ডপ বানাচ্ছি।” পুজোর আকর্ষণ বাড়াতে প্রতি দিনই থাকছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। লড়াই জমল বলে। অপেক্ষা মাত্র দু’টো সপ্তাহের।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.