অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রকে অপহরণ ও খুনের অভিযোগে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে নিউ জলপাইগুড়ি পুলিশ ফাঁড়ির শান্তিনগর থেকে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম নয়ন শর্মা (১৫)। তাঁর বাড়ি শান্তিনগরে। গত ২২ সেপ্টেম্বর বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। ২৬ সেপ্টেম্বর সাহুডাঙ্গিতে ক্যানালের পাশ থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ধৃতের নাম বিকাশ রায়, সূরজ যাদব, সঞ্জয় ঠাকুর। প্রথমজনের বাড়ি জলেশ্বরীতে ও বাকি দু’জনের বাড়ি দক্ষিণ শান্তিনগরে। সূরজ নয়নের বাবার নিমকি কারখানায় কাজ করত। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, ৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টায় নয়নকে অপহরণ করেছিল দুষ্কৃতীরা। পরে তাঁকে জলের মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়।
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমার বলেন, “ওই ঘটনায় পুরো দুষ্কৃতী দলকে আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। যে ফোন নম্বর থেকে মুক্তিপণ চেয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল তার সূত্র ধরেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়।” নয়নের বাবা নিত্যানন্দ শর্মা জানান, মুক্তিপণ চেয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত তাঁর কাছে দুষ্কৃতীদের ফোন এসেছে। তিনি বলেন, “আমার কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা ছিল না। তার পরেও তাঁদের কিছু টাকা দিতে চেয়েছি। তাঁদের কথা অনুযায়ী সমস্ত জায়গায় টাকা নিয়ে গিয়েছি। তাদের দেখা পাইনি। তার পরেও কেন আমার ছেলেকে খুন করা হল তা বুঝতে পারছি না।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২২ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাড়ি থেকে বেরনোর পর নিখোঁজ হয়ে যায় নয়ন। পরের দিন দুপুরে তাঁর বাবা নিত্যানন্দবাবুর মোবাইলে ফোন করে দুষ্কৃতীরা নয়নকে অপহরণ করা হয়েছে বলে জানায়। ছেলের সঙ্গে বাবার কথা বলিয়ে দেয় তারা। সে সময় পাঁচ লক্ষ টাকা নিয়ে তাঁকে কিষানগঞ্জ যেতে বলা হয়। বিষয়টি যাতে পুলিশ জানতে না পারে সে ব্যপারেও তাঁকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। ওই দিনই পুলিশকে বিষয়টি জানান নিত্যানন্দবাবু। তার পর থেকে বিভিন্ন মোবাইল থেকে নিত্যানন্দবাবুকে ফোন করে দুষ্কৃতীরা টাকা পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাড়া দিতে থাকে। তাদের ঠিকানা অনুযায়ী তিনি প্রত্যেকটি জায়গায় গিয়েও দুষ্কৃতীদের দেখা পাননি। ২৫ সেপ্টেম্বর সাহুডাঙ্গি ক্যানাল থেকে একটি মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তা নিত্যানন্দবাবুকে দেখানো হলেও তিনি ছেলেকে চিনতে পারেননি।
নিত্যানন্দবাবুর মোবাইলে যে তিনটি নম্বর থেকে ফোন এসেছিল তার সূত্রে ধরে তদন্তে এগোতে থাকে পুলিশ। এ দিন এনজেপি ফাঁড়ির সাদা পোশাকের পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর ২৫ সেপ্টেম্বরের মৃতদেহ যে নয়নের সে ব্যপারে নিশ্চিত হয় পুলিশ। নিত্যানন্দবাবু এবং তাঁর স্ত্রী এদিন ছেলের মৃতদেহ থেকে চিনতে পারে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, ২৩ সেপ্টেম্বর রাতেই সাহুডাঙ্গি ক্যানালে নিয়ে গিয়ে জলে ডুবিয়ে নয়নকে খুন করে দুষ্কৃতীরা। তার পরেও টাকার লোভ সামলাতে না পেরে নিত্যানন্দবাবুকে ফোন করতে থাকে তারা। শিলিগুড়ি পুরসভার ডেপুটি মেয়র তথা ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রঞ্জন শীলশর্মা বলেন, “দুষ্কৃতীদের কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার।” |