জলপাইগুড়ির অফিসার, কনস্টেবলদের মেদ ঝরানোর পথ দেখাতে পথে নেমে পড়েছে খোদ পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি। সকাল ৬ টা বাজতে না বাজতেই চোখেমুখে জল দিয়ে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন পুলিশ লাইনের কনস্টেবল, অফিসাররা। সকালে ব্যায়াম, দৌড় এবং প্রাণায়াম বাধ্যতামুলক। এমনটাই নির্দেশ পুলিশ সুপারের। সে নির্দেশের এদিক ওদিক হওয়ার উপায় নেই। কারণ, প্রায় প্রতিদিনই সকাল ৬ টা বেজে ১৫ মিনিটের মধ্যে পুলিশ সুপার নিজেই উপস্থিত হচ্ছেন লাইনে, পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে ব্যায়াম করছেন পুলিশ সুপারও। তার পর কিলোমিটার দুয়েক দৌড়, এবং প্রাণায়াম। সপ্তাহ খানেক যাবত এভাবেই সকাল শুরু হচ্ছে জলপাইগুড়ি পুলিশ লাইনে। জেলার পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি নিজে ছিপছিপে। পুলিশ লাইনের দায়িত্বে থাকা রিজার্ভ ইনস্পেক্টর শান্তনু তরফদারেরও সুঠাম চেহারা। তবে পুলিশের অধিকাংশ কনস্টেবল এবং অফিসারদের মেদ এবং ভুঁড়ি নিয়ে চিন্তিত পুলিশ সুপার। পুলিশ লাইন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার দায়িত্ব নিয়ে প্রথম লাইন পরিদর্শনে গিয়ে পুলিশ কর্মীদের চেহারার গড়ন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। সকালে ছুটোছুটি করার নির্দেশও তিনি দেন। সেই মতো লাইনে সকালে যোগ ব্যায়াম শুরুও হয়েছিল। দিন কয়েক পরে হঠাৎ এক সকালে পুলিশ সুপার নিজেই হাজির। কী ভাবে ব্যায়াম হবে, কতটা পথ ছুটতে হবে দেখিয়ে দিলেন। কেউ কেউ ভাবলেন, বিষয়টি এর থেকে বেশি দূর গড়াবে না। যদিও এর পরে নিয়মিত প্রতি সকালেই সেখানে যাচ্ছেন পুলিশ সুপার। ঘড়ি ধরে ঘণ্টা দেড়েক শরীরচর্চা চলছে। |
পুলিশ সুপারের কথায়, “শুধু নির্দেশ দিলেই হবে না। নিজেও সেই নির্দেশ মেনে সকলের সঙ্গে সামিল হতে হবে। তবেই তো বাহিনীর মনোবল বাড়বে। আর পুলিশের তো শরীরচর্চা আবশ্যিক। তাই নিজেও সকালে উঠে পুলিশ লাইনে যাচ্ছি।” কেন এই নির্দেশ? পুলিশ সুপার জানালেন, শরীরচর্চা না করলে মেদবৃদ্ধি পায়। শরীরও সতেজ এবং সক্রিয় থাকে না। যে হেতু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করাই পুলিশের প্রধান কাজ, তাতে প্রচুর ছোটাছুটি করতে হয়। সেটা না পারলে বাহিনীর সুনাম নষ্ট হবে। পাশাপাশি, ‘ভুঁড়িওয়ালা পুলিশ’ নিয়ে নানা রসিকতা ক্রমশ বাড়বে বলেও আশঙ্কা রয়েছে পুলিশ মহলে। একইসঙ্গে যোগ-প্রাণায়াম করলে মাথাও ঠান্ডা থাকে। যা পুলিশের পক্ষে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এই সব কারণেই শরীরচর্চার নির্দেশ বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন। তবে দীর্ঘদিন অনভ্যাসের পরে হঠাৎ সকালে উঠে মেদ বহুল শরীর নিয়ে ছোটাছুটি করলে, হিতে-বিপরীতও যে হতে পারে সে সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল পুলিশ সুপার। তাই দৌড় শুরু করার আগে তাই বলেও দিচ্ছেন পুলিশ সুপার। তাঁর সতর্কতা, ‘কেউ যদি না পারেন, তবে থেমে যাবেন।’ মিনিট পনেরো ব্যায়ামের পরে শুরু হচ্ছে দৌড়। পুলিশ লাইন থেকে বের হয়ে ক্লাব রোড, রেসকোর্স পাড়া হয়ে আবার পুলিশ লাইনে ফেরা। প্রায় ৭০ জন কনস্টেবলকে নিয়ে পুলিশ সুপারকে ছুটতে দেখে প্রাতর্ভ্রমণকারীরা বলেই ফেলছেন, “এতো অবাক কাণ্ড। পুলিশেও তো দেখছি পরিবর্তন এসেছে! বেশ ভালোই লাগল।” শরীরচর্চা সেরে এক অফিসারের বললেন, “সেই কবে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে সকালে উঠে শরীরচর্চা করতে হতো। তার পরে ওসব আর হয়ে ওঠেনি। সে কারণেই হয়তো ভুঁড়িও হয়েছে। এখন দেখছি ভাল ফল মিলছে। স্যার (পুলিশ সুপার) নিজে থাকায় বাড়তি উৎসাহ পাচ্ছি।” |