পুর চেয়ারম্যান নান্টু পাল কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে দুই দলে বিরোধ ক্রমশ বাড়ছে। পুরসভার শাসক জোটের দুই শরিক তারপর থেকে প্রকাশ্যেই একে অপরের বিরোধিতা করছেন। পুরসভার কাজে ব্যর্থতার অভিযোগে মেয়র গঙ্গোত্রী দত্তের ইস্তফা দাবি করেছে তৃণমূল। অন্য দিকে, নান্টুবাবুর বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনে তাঁর কাউন্সিলর পদ খারিজের দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস। নান্টুবাবুর দলগত অবস্থান নিয়ে কংগ্রেস ও বামেদের বিক্ষোভে পুজোর মুখে বোর্ড মিটিংও মুলতুবি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পুজোর মুখে পুরসভায় অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার শিলিগুড়ির বাঘা যতীন পার্কে এক অনুষ্ঠানে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, “আমরা শিলিগুড়ি পুরসভায় জোট ভাঙছি না। তৃণমূল চাইলে তারা বেরিয়ে যেতে পারে।” সেই সঙ্গেই তিনি নান্টবাবুর নাম না করে মন্তব্য করেন, “দল ছেড়ে অনেকে ভাবছেন সোনার থালায় ভাত খাবেন। তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না।” পাশাপাশি, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির অভিযোগ, নান্টুবাবুকে দলে টেনে তৃণমূল দল ভাঙার খেলায় নেমেছে। তাঁর বক্তব্য, “তৃণমূল যে দল ভাঙার খেলায় নেমেছে, তা আপত্তিকর। এ ভাবে কংগ্রেসকে দুর্বল করা যাবে না। এর মূল্য চোকাতে হবে তৃণমূলকে।”
তবে পুজোর প্রাক্কালে বোর্ড ছেড়ে বার হওয়ার কথা তৃণমূলও ভাবছে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেছেন, “কবে জোট ছেড়ে বের হব সেটা আমাদের নিজস্ব ব্যাপার। পুজোর মধ্যে বোর্ড থেকে বেরিয়ে গেলে পুর পরিষেবা ব্যহত হবে। তা আমরা চাই না।” সেই সঙ্গে গৌতমবাবু প্রদীপবাবুকেও কটাক্ষ করেছেন। মন্ত্রীর মন্তব্য, “মূল্য কে কার কাছে দেবে, তা জানি না। তবে নান্টুবাবুকে তো এক সময় প্রদীপবাবুরাই তৃণমূল থেকে কংগ্রেসে নিয়ে গিয়েছিলেন। প্রদীপবাবু এখন রাজ্যসভার সাংসদ। কেন্দ্রে তৃণমূলের মন্ত্রীরা ইস্তফা দেওয়ায়
সেখানে প্রদীপবাবুদের যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাঁরা যত বেশি সোচ্চার হবেন, তত তাঁদের কদর বাড়বে। সে কারণে সিপিএমের বিরোধিতা ছেড়ে এখন তাঁরা তৃণমূলের বিরোধিতা করতে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।”
প্রদীপবাবু জানান, নান্টুবাবুর বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইন মেনে যা করণীয়, সেই ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে। দলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকার এ ব্যাপারে জেলাশাসক এবং পুর কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছেন।
পুরসভার অফিসার-কর্মীদের অনেকেরই আশঙ্কা, বোর্ড পরিচালনায় থাকা দুই শরিকের মধ্যে এমন চাপানউতোর চলতে থাকলে আসন্ন পুজোয় পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। কেন্দ্রে এবং রাজ্যে কংগ্রেস-তৃণমূল বিচ্ছেদের পরে শিলিগুড়িতেও জোটের পুর বোর্ড অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। |