জমি-জট সামলাতে ভরসা বিদ্যুতের নয়া সাবস্টেশন
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন এলাকায় এ বার থেকে নতুন প্রযুক্তির গ্যাস ইনসুলেটেড সাবস্টেশন (জিআইএস) তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংবহন সংস্থা। এই ধরনের সাবস্টেশন তৈরি করতে গেলে যেমন অনেক কম জমি লাগে, রক্ষাণবেক্ষণের খরচও কম। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি জিআই সাবস্টেশন তৈরি করেছে সিইএসসি রাজ্যের এক বিদ্যুৎ কর্তা জানাচ্ছেন, অনেকটা জমির উপরে প্রায় খোলা অবস্থায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে প্রচলিত সাবস্টেশনগুলির ট্রান্সফর্মার, কেবল বক্স, স্যুইচ-গিয়ার। ফলে রক্ষণাবেক্ষণে যেমন বেশি খরচ হয়, খারাপও হয়ে যায় চট করে। ছোট গাছের ডাল, এমনকী ঘুড়ির সুতো আটকেও সাবস্টেশন বসে গিয়ে লোডশেডিং হয়ে যায়। কিন্তু জিআই সাবস্টেশনে ট্রান্সফর্মার-সহ প্রতিটি যন্ত্রাংশ ছোট জায়গার মধ্যে সুরক্ষিত একটি ঘরের মধ্যে থাকায় এই সমস্যা নেই।
জিআই সাবস্টেশনের অন্দরমহল। —নিজস্ব চিত্র
সংবহন সংস্থা সূত্রে খবর, দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (২০১২-’১৭) তারা রাজ্যে ৪৩-৪৫টি নতুন সাবস্টেশন তৈরি করবে। এর অর্ধেকের বেশি জিআই প্রযুক্তির সাবস্টেশন গড়ে তুলতে চায় তারা। এর জন্য জায়গাও চিহ্নিত করা হয়েছে। বিধাননগর পার্ক, বাগনান, খেজুরি, সিরাকোল, নারায়ণপুর প্রভৃতি জায়গায় এই নতুন প্রযুক্তির সাবস্টেশন তৈরির কথাই ভাবা হচ্ছে।
এক লপ্তে অনেকটা জমি পাওয়াই এখন বড় সমস্যা সংবহন সংস্থার কর্তাদের কাছে। বহু জায়গাতেই জমির অভাবে সাবস্টেশন তৈরির কাজ বন্ধ রয়েছে। জমি জটে সাবস্টেশন তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় হাই-ভোল্টেজ লাইন টানার কাজও করতে পারছে না সংবহন সংস্থা। বসানো যাচ্ছে না টাওয়ারও। সাবস্টেশনের জন্য জমি কিনতে গেলে জেলা প্রশাসনের ঠিক করে দেওয়া দামের থেকে অনেক বেশি ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কেউ-কেউ আবার চাকরির দাবি জানিয়েও কাজে বাগড়া দিচ্ছেন। কর্তাদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে জিআই সাবস্টেশন বসালে বিদ্যুৎ পরিষেবাও যেমন উন্নত করা যাবে, জমি সমস্যারও কিছুটা সুরাহা হবে। সংবহন সংস্থার এক কর্তা বলেন, “গ্যাস ভিত্তিক সাবস্টেশন তৈরির সব থেকে বেশি লাভ, কম জমির প্রয়োজন। কম জমি কেনা মানেই, সংখ্যায় কম জমি-মালিককে সন্তুষ্ট করা। এতে কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের অনেকটাই সুবিধা হচ্ছে।”
শুধু রাজ্য সংবহন সংস্থাই নয়, অনেকটা একই কারণে সিইএসসি কর্তৃপক্ষও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আগামী দিনে তারা যত নতুন সাবস্টেশন তৈরি করবে, সবগুলিই হবে জিআই প্রযুক্তির। ইতিমধ্যেই সংস্থাটি কলকাতা এবং তার আশেপাশে ১৩২ কেভি এবং ৩৩ কেভি-র ১২টি জিআই সাবস্টেশন তৈরি করে ফেলেছে। চলতি অর্থবর্ষে তারা আরও ১২টি জিআইএস তৈরির কাজ শুরু করেছে।
বিদ্যুৎ কর্তাদের হিসাবে ৪০০ কেভি (কিলো ভোল্ট)-র একটি প্রথাগত সাবস্টেশন তৈরি করতে যেখানে কমপক্ষে ৫০ একর জমি লাগে, জিআই প্রযুক্তিতে সেখানে ১৫-২০ একর জমিই যথেষ্ট। আর ১৩২ কেভির একটি জিআই সাবস্টেশনের জন্য ৩-৪ একর জমি হলেই চলবে। প্রচলিত প্রযুক্তিতে সেখানে ১০ একর জমি লাগে।
জিআই প্রযুক্তিতে এত কম জমি লাগার কারণ, একটি বাড়ির ভিতরে অধিকাংশ যন্ত্রাংশ পর-পর জুড়ে সাবস্টেশনটি তৈরি করে ফেলা যায়। আর সেই ঘরের ভিতরে সালফার হেক্সাফ্লোরাইড (এসএফসিক্স) নামে এক ধরনের তড়িৎ-অপরিবাহী গ্যাস দেওয়া হয়। একটি বাড়ির মধ্যে সুরক্ষিত থাকে বলেই জিআই সাবস্টেশনের উপরে অনেক বেশি নির্ভর করা যায়। সংবহন সংস্থার প্রথম জিআই সাবস্টেশনটি সল্টলেকের সেক্টর-ওয়ানে গড়ে উঠেছে। গত মাসেই সেটি চালু হয়েছে।
জমি জটের ফাঁসে শুধু রাজ্যের সংবহন সংস্থাই নয়, বিপাকে পড়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনও। স্থানীয় মানুষ জমি দিতে চাইছে না বলে গ্রিড কর্পোরেশন মুর্শিদাবাদে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সাবস্টেশন তৈরি করতে পারছে না। ওই সাবস্টেশনটির মাধ্যমে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানি করার কথা। একই ভাবে আলিপুরদুয়ারেও জমি জটে কর্পোরেশন একটি সাবস্টেশন তৈরি করতে পারছে না। ফলে আগামী দিনে ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে গ্রিড কর্পোরেশেন এখন বিকল্প উপায়ের কথা ভাবতে শুরু করেছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.