আইন অনুযায়ী ১৮ বছরে ভোটাধিকার পাওয়ার কথা। কিন্তু আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে সদ্য ১৮ পেরোনো বা ১৮ ছোঁয়া ছেলেমেয়েরা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন কি না, এই প্রশ্নটিকে ঘিরেই আপাতত উত্তাল রাজ্য-রাজনীতি। তরুণদের ভোট আটকানোর অভিযোগ তুলছে কংগ্রেস-সিপিএম এবং সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছে শাসক পক্ষ। বঙ্গ-রাজনীতি মশগুল সেই তরজাতেই।
কিন্তু ওই তরুণ ভোটারেরা পঞ্চায়েতে ভোট দিতে পারবেন কি না, সেই সংশয়ের কারণ কী?
বিরোধী দলগুলির দাবি, গত এক বছরে যাঁরা আঠারোর কোঠা পেরিয়েছেন, তাঁরা রাজ্যের বর্তমান সরকারের কাজে খুশি নন। সুযোগ পেলে তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধেই ভোট দেবেন। আর এটা বুঝতে পেরেই তাঁদের ভোট আটকানোর চেষ্টা চলছে। সেই জন্যই পঞ্চায়েত দফতর পুরনো ভোটার তালিকা মেনে নির্বাচন করাতে চাইছে, যাতে নতুন ভোটারেরা ভোট দিতে না-পারেন।
বিরোধীদের এই দাবির কোনও ভিত্তি নেই বলে মনে করেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেস-সিপিএম একজোট হয়ে মিথ্যা প্রচার করছে। সুব্রতবাবুর দাবি, “নতুন ভোটারেরা আমাদেরই ভোট দেবেন। ভোটার তালিকায় সদ্য ১৮ পেরোনো সকলকেই ঠাঁই দেওয়া হবে। অনাবশ্যক গুঞ্জন তুলে যাঁরা ভাবছেন, পঞ্চায়েত ভোট পিছিয়ে যাবে, তাঁরা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। আমরা সিপিএমের অস্ত্রেই ওদের ঘায়েল করব।”
কী সেই অস্ত্র?
পঞ্চায়েতমন্ত্রীর কথায়, ২০০৮ সালে সিপিএম যে-ভাবে ভোট করেছিল, এ বার সেই পদ্ধতি অনুসরণ করবে পঞ্চায়েত দফতর। ওই বছর পুরনো ভোটার তালিকা ধরে আসন পুনর্বিন্যাস হয়েছিল এবং পরের বছরের তালিকায় আসা নতুন ভোটারদেরও ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। একই ভাবে এ বারেও ২০১২ সালের ভোটার তালিকা ধরে আসন পুনর্বিন্যাসের কাজ সেরে ফেলা হচ্ছে। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি সংশোধিত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবেনির্বাচন কমিশন। এই ধরনের সংক্ষিপ্ত সংশোধনীতে ২-৩ শতাংশের বেশি নাম সংযোজিত হয় না। সে-ক্ষেত্রে প্রতি বুথে খুব বেশি হলে ৫০-৬০ জনের নাম যুক্ত হওয়ার কথা। এই নতুন ভোটারদের নাম তালিকাভুক্ত করেই চূড়ান্ত ভোটার তালিকার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। তাতে আসন পুনর্বিন্যাসে হেরফের হবে না। নতুন ভোটারেরাও ভোট দিতে পারবেন।
সুব্রতবাবুর দাবি, পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আনা নিয়ে রাজনীতি করছে সিপিএম এবং কংগ্রেস। আইন অনুযায়ী নির্বাচন এগিয়ে আনতে অসুবিধা নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কংগ্রেস অবশ্য মঙ্গলবারেও নতুন ভোটারদের প্রসঙ্গ ফের তুলেছে। ব্যারাকপুরে গাঁধীজয়ন্তীর এক অনুষ্ঠানে কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা চলছে। অহেতুক আক্রমণ
করা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে। ১৮ বছরের ছেলেমেয়েরা কেন ভোট দেওয়া থেকে কিংবা ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন? এটা হতে দেওয়া যায় না। কংগ্রেস নতুন ভোটারদের ভোটার তালিকায় আনার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে।” সিপিএম-ও যে এই প্রশ্নে কংগ্রেসের পাশে থেকে সরকারের বিরোধিতা করবে, তা স্পষ্ট। সোমবার ধর্মতলার সভাতেই ১৮ বছর বয়সিদের প্রশ্নে শেষ দেখে ছাড়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন সিপিএম নেতা গৌতম দেব।
ইতিমধ্যে সচিব বদলিকে কেন্দ্র করে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সরকারের বিবাদ তীব্র হচ্ছে। কমিশন বর্তমান সচিব তাপস রায়কে সরাতে চায় না। সরকারও মহাকরণের এক প্রতিনিধিকে কমিশনে পাঠাতে বদ্ধপরিকর। ফলে এই বিরোধ আরও প্রকট হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সচিব বদলির সরকারি নির্দেশ নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছে। সেগুলি হল:
• কমিশনে কয়েকটি পদ খালি থাকা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার সেগুলো পূরণ করতে উদ্যোগী হয়নি। এখন সচিবকে বদলি করা হচ্ছে কেন?
• নির্বাচন কমিশন সচিব বদলের আর্জি জানায়নি। তা হলে কেন তাঁকে সরানো হবে?
• কমিশনে লোকের প্রয়োজন হলে তারা সরকারকে জানাবে, এটাই নিয়ম। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। কমিশনের সঙ্গে কোনও আলোচনা না-করেই সচিব বদল করা হচ্ছে কেন?
• নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলে কমিশনের কাউকে বদলি করা যায় না। অথচ পঞ্চায়েতে আসন পুনর্বিন্যাসের কাজ শুরু হওয়ার পরে ওই বদলির আদেশ দেওয়া হল। কেন?
কমিশনের এই সব প্রশ্নকে অবশ্য আমল দিতে রাজি নয় সরকার। পঞ্চায়েতমন্ত্রীর দাবি, নির্বাচন কমিশন আইনের নির্দিষ্ট ধারা মেনেই সরকার বদলির আদেশ দিয়েছে। সেটা উভয় পক্ষেরই মেনে নেওয়া উচিত। |