|
|
|
|
প্রতিবন্ধকতা ভুলে মণ্ডপ সাজিয়েই আনন্দ পুজোয় |
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
কেউ মূক-বধির। কারও হাত নেই। কেউ আবার ভাল করে চলতে পারেন না। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় থেমে যায়নি ওঁদের জীবন। বরং তমলুকের নিমতৌড়িতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মশালায় হাতের কাজের প্রশিক্ষণ শেষে জীবনের নতুন অধ্যায় খুলে গিয়েছে। এতদিন ছোটখাটো নানা কাজ করতেন। এ বার আস্ত দুর্গাপুজোর মণ্ডপ সাজানোর ভার পড়েছে। মাটির ভাঁড়, পাট, হোগলা পাতা, কাঠের চামচের মতো হাজারো সামগ্রী নিয়ে যত কারিকুরি। কলকাতার গড়িয়ার মিলনী সঙ্ঘ, হলদিয়ার হাজরা মোড় সর্বজনীন ও ঘাটালের কুশপাতা সর্বজনীনের মণ্ডপে গেলে পাওয়া যাবে ওঁদের শিল্পীসত্তার পরিচয়।
ওঁরা মানে ময়নার সুমিত্রা বর্মন, নন্দকুমারের তনুশ্রী সিংহ, নন্দীগ্রামের রেবনা গিরিরা এখন নিমতৌড়ির ওই সংস্থার কর্মশালায় বসে শেষ তুলির টান দিচ্ছেন। পাট আর হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে ময়ূর, হাঁস, ঘোড়া। পুজোর দিন যত এগিয়ে আসছে, ততই ব্যস্ততা বাড়ছে ওঁদের। কর্মশালার ৪৫ জন শিল্পীর ৩৫ জনই মহিলা। অধিকাংশ মূক ও বধির। কয়েকজন শারীরিক প্রতিবন্ধীও রয়েছেন।
প্রশিক্ষক সৌম্য চন্দ, রামকৃষ্ণ দাস, কনিকা অধিকারীরা বলেন, ‘‘ওঁদের মধ্যে অনেকেই মনের ভাব মুখে প্রকাশ করতে পারেন না। কিন্তু শিল্পীসত্তাটা তো রয়েছে। আমরা কেবল তাতে সহযোগী হয়েছি মাত্র। |
|
কাজ চলছে নিমতৌড়ির সেই কর্মশালায়। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
ওদের কাজ শেখার ও শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করার আগ্রহ আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি আমাদেরও অনুপ্রাণিত করেছে।” সৌম্যবাবু বলেন, “গত কয়েক বছর ধরেই আমরা দুর্গাপুজার মণ্ডপসজ্জার জন্য বিভিন্ন সামগ্রী বানাচ্ছি। তবে, এ বারই প্রথম তিনটি দুর্গাপুজোর মণ্ডপসজ্জার পুরো দ্বায়িত্ব নিয়েছি। এই কাজে আমাদের প্রধান ভরসা এই প্রতিবন্ধী শিল্পীরাই।” গড়িয়া মিলনী সঙ্ঘের মণ্ডপ হচ্ছে হোগলাপাতার শিল্পসামগ্রী দিয়ে। হাজরা মোড় সর্বজনীনে মাটির ভাঁড় ও কুশপাতা সর্বজনীনে কাঠের চামচ দিয়ে মণ্ডপ সাজানো হবে। তিনটি মণ্ডপই প্রাচীন মন্দিরের আদলে। সজ্জার উপকরণ সাধারণ হলেও প্রতিবন্ধী শিল্পীদের তৈরি শিল্পসামগ্রী দর্শকদের মন ভরাবে বলে আশাবাদী কর্মশালার প্রশিক্ষকেরা।
নন্দীগ্রামের আমড়াতলা গ্রামের রেবনা গিরি, নন্দকুমারের রামচন্দ্রপুর গ্রামের তনুশ্রী সিংহ, দক্ষিণ ময়না গ্রামের সুমিত্রা বর্মনরা তমলুকের নিমতৌড়ির এই কর্মশালায় কাজ শেখার পাশাপাশি লেখাপড়াও শিখছেন। বছরের অন্য সময় তাঁরা এই কর্মশালায় বসে পাট, খড় দিয়ে তৈরি করেন রাখি, শুভেচ্ছা পত্র, দেওয়াল-ছবি প্রভৃতি। হাতের কাজ শিখে শুধু স্বাবলম্বী হওয়াই নয়, এখন রোজগারের বাড়তি টাকা বাড়িতে পাঠান সুমিত্রা, রেবনারা। রোজগারের টাকায় নিজেদের ছাড়াও বাড়ির লোকেদের জন্য কিনেছেন পুজোর পোশাক। এঁদের মধ্যে পার্বতী জানার দুই হাত নেই। দু’পায়ের আঙুল দিয়েই কলম ধরে লেখাপড়া করেন পার্বতী। শিল্পসামগ্রীও বানাচ্ছেন পা দিয়ে। মূক ও বধির মেয়েদের সাথে কাজ করার ফাঁকে পার্বতী বলেন, “অগস্ট মাস থেকে মণ্ডপসজ্জার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। মনের মতো কাজ করতে পেরে আমি খুশি। ইচ্ছে আছে নিজেদের তৈরি জিনিস দিয়ে সাজানো মণ্ডপগুলো ঘুরে দেখব। মণ্ডপে আসা মানুষজনকে মুগ্ধ করতে পারলে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে।” |
|
|
|
|
|