নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
আর পাঁচজন দাবাড়ুর সঙ্গে অরবিন্দ চিদম্বরম-কে মেলাতে গেলে হোঁচট খেতে হবে। সে তার চালচলনে হোক, বা পছন্দ-অপছন্দে। কিন্তু বুদ্ধির দৌড়ে গত এক বছরে ভারতীয় দাবায় আলোড়ন ফেলে দিয়েছে বছর তেরোর বালক।
জাতীয় দাবার সুবর্ণ জয়ন্তীর প্রথম রাউন্ডেই সোমবার ছোট্ট অরবিন্দের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন দিব্যেন্দু বড়ুয়া। কিন্তু তিনবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে রীতিমতো চমকে দেয় অরবিন্দ। ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে পরের দিনই অবশ্য হারতে হল তাকে। তবে টুর্নামেন্টের শীর্ষ বাছাই বি. অধিবানের কাছে। তাতে কি খুব চিন্তায় পড়ে গেল মাদুরাইয়ের অরবিন্দ? একেবারেই না। দিব্যি ঘুরে-ঘুরে দেখতে লাগল অন্য বোর্ডের খেলাগুলো।
সেই পায়চারি অবশ্য চালু ছিল নিজের গেম চলাকালীনও। অন্য দাবাড়ুরা যেমন নিজেদের চাল দেওয়ার ফাঁকে ধীরেসুস্থে পায়চারি করে অন্যদের বোর্ডে নজর বোলায়, সে ভাবে নয়। বরং অনেক ছটফটে, দ্রুত চালচলন অরবিন্দের। খেলার সময় নিজের চেয়ারেও এক ভাবে বসে থাকতে পারে না। দু’পা গুটিয়ে চেয়ারে তুলে বসতেই বেশি স্বচ্ছন্দ। দর্শকদের ভিড়ও তার টেবিলের পাশেই। |
ছোট্ট অরবিন্দের আইডলও এক ‘ছোট্ট’ বিশাল তারকা বিশ্বের এক নম্বর ২১ বছর বয়সি দাবাড়ু নরওয়ের ম্যাগনাস কার্লসেন। নিজের আদর্শের মতোই অরবিন্দেরও ৬৪ খোপে হাতেখড়ি আট বছর বয়সে। গোয়ায় জুনিয়র জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয় ১২ বছর বয়সে। যেটা জাতীয় রেকর্ড। এ বছর এশীয় জুনিয়র দাবায় চতুর্থ। দিব্যেন্দু নিজে ১৬ বছর বয়সে হারিয়েছিলেন তৎকালীন বিশ্বের দু’নম্বর ভিক্টর কর্শনয়কে। এ দিন বলছিলেন, “অরবিন্দের ওপেনিং খুব ভাল নয়। তবে গেম রিডিং ভাল। খেলাটা দারুণ বোঝে। একটা ছোট্ট স্ট্র্যাটেজিগত ভুল করে ফেলেছিলাম। সেখান থেকে আমাকে ফেরার সুযোগ দেয়নি। ওর ভবিষ্যত উজ্জ্বল।”
দাবা বোর্ডের বাইরে অরবিন্দের জগৎ বলতে ক্রিকেট। মুরলীধরন আর ওয়ার্ন দুই বিশ্বসেরা প্রাক্তন স্পিনারের ভক্ত বছর পাঁচেক আগে ক্রিকেট খেলতে-খেলতেই বসে পড়েছিল বোড়ে-গজ-মন্ত্রী নিয়ে। ৮৪ বছরের দাদুকে অরবিন্দ টানাটানি করত তার সঙ্গে ক্রিকেট খেলার জন্য। দাদু বলেছিলেন, “এই বয়সে আমার পক্ষে ব্যাট-বল পেটানো কি সম্ভব? বরং আমি যেটা খেলতে পারি, তুমিও সেটা খেলো।” ব্যস! সেই শুরু। অরবিন্দের যখন সাড়ে তিন বছর বয়স তার বাবা মারা যান। মা, দেইবানাই চিদম্বরমই তার জীবনে সব। অরবিন্দের বিমা-এজেন্ট মায়ের কথায়, “আট বছর বয়সে ও দাবা খেলতে শুরু করার পর থেকেই ওর ধ্যান-জ্ঞান দাবা।” প্রথম দু’দিনই দুই গ্র্যান্ডমাস্টারের সামনে পড়েছে এই ১৩ বছরের বালক। জয়-হার সমান-সমান। সবাই দাবাপ্রেমীরা উৎসুক, বাকি ১২ দিনে কী হয়! |