চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এ বার আটটা প্রাথমিক গ্রুপের ভেতর ‘ডি’-কে বলা হচ্ছে মারণ গ্রুপ। সেই ‘গ্রুপ অব ডেথ’-এর দু’টো ম্যাচই বুধবারের লিগের সবচেয়ে আলোচিত লড়াই, সর্ব মোট আটটা ম্যাচের মধ্যে। রিয়াল মাদ্রিদ অ্যাওয়ে মাঠ আমস্টারডামে মুখোমুখি হচ্ছে ডাচ চ্যাম্পিয়ন আয়াখসের। ম্যাঞ্চেস্টার সিটি ঘরের মাঠ এতিহাদে জার্মান টিম বোরুসিয়া ডর্টমুন্ডের সামনে।
এবং ম্যান সিটি-র ইতালীয় বস মানচিনি বুঝছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ আর ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ এক বস্তু নয়। স্বীকারও করেছেন, “দু’টো সম্পূর্ণ অন্য ধরনের টুর্নামেন্ট। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আপনাকে সব সময় অন্য দেশের সেরা ক্লাবের সঙ্গে লড়তে হবে। কিন্তু ফুটবল খেলাটার বিচারে ব্যাপারটা একইএগারো বনাম এগারোর লড়াই। তবে ইপিএলে আমরা যেমন ক্রমাগত উন্নতি করতে-করতে গত মরসুমে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, সেই অনুপাতে ইউরোপিয়ান লিগে আমরা অনভিজ্ঞ। মাত্র দু’বছর খেলছি এবং দু’বারই সবচেয়ে কঠিন গ্রুপে পড়েছি।” |
প্রথম ম্যাচে রিয়ালের সঙ্গে শেষ তিন মিনিটে দু’গোল হজম করে ২-৩ হেরেছে মানচিনির দল। ওই ম্যাচে ইংল্যান্ডের জাতীয় দলের ডিফেন্ডার লেস্কট-কে প্রথম এগারোয় খেলানো তো দূরের কথা, রিজার্ভ বেঞ্চ থেকেই তোলেননি ম্যান সিটি ম্যানেজার। গত শনিবার ফুলহ্যামের বিরুদ্ধে প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচেও সেই একই ছবি। ম্যান সিটি গতবার ইপিএল খেতাব জেতার পথে ১৭টা ম্যাচে কোনও গোল খায়নি। যার পিছনে লেস্কটের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি বলে মনে করে ফুটবলমহল। অথচ সে জায়গায় এ মরসুমে ছ’ম্যাচে ৮ গোল খেয়েছে ম্যান সিটি। ডর্টমুন্ডের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে তাই তড়িঘড়ি মানচিনি বলেছেন, “লেস্কট আমার অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার। আমার হাতে ছয়-সাতজন ভাল ডিফেন্ডার আছে। গত সপ্তাহে মাদ্রিদে আমি একটা পছন্দের ডিফেন্স লাইন খেলিয়েছিলাম। বুধবার আমি আবার ভাবব। তবে লেস্কট আমাদের টিমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার।” যা শুনে ফুটবলমহলের ধারণা ম্যান সিটি-র আক্রমণে যদি আগুয়েরো-এডিন জেকো সবচেয়ে ধারালো অস্ত্র হন ডর্টমুন্ড ম্যাচে, তা হলে রক্ষণে লেস্কট হবেন অন্যতম ভরসা। রিয়াল আবার আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে লা লিগায় ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর হ্যাটট্রিকে চাঙ্গা হয়ে আমস্টারডাম গিয়েছে। পরপর তিন মরসুম ইউরোপের এই দুটো মেগা দল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মুখোমুখি হচ্ছে। ভালদেবেবাস-এ হোসে মোরিনহোর টিমের প্র্যাক্টিসে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল, স্প্যানিশ লিগে ডেপোরটিভো ম্যাচে বহু দিন পর রিয়ালের মাঝমাঠের স্তম্ভ জাভি আলোন্সোর বিরতি পর্যন্ত রিজার্ভ বেঞ্চে বসে থাকা! আর্সেনাল যেমন ফরাসি মিডফিল্ডার দিয়াবি-কে ফের চোটের জন্য বুধবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ‘বি’ গ্রুপে ঘরের মাঠে অলিম্পিয়াকোসের বিরুদ্ধে পাচ্ছে না (দিয়াবি ২০০৬ থেকে আর্সেনাল জার্সিতে সাত বছরে সব মিলিয়ে মাত্র ৮৭টা ম্যাচ খেলেছেন), জাভি তেমনই রিয়ালের হয়ে খেলেননি এমন ম্যাচের সংখ্যা প্রায় হাতে গোনা। তা মোরিনহো, যিনি সবাইকে চমকে দিয়ে এ দিন বলেছেন, ২০১৬-এ রিয়ালের সঙ্গে চুক্তি শেষ হলে ইংল্যান্ডের ক্লাবে তাঁর যাওয়ার ইচ্ছে, আয়াখস ম্যাচ নিয়ে মন্তব্য করেছেন, “দেপোরতিভো ম্যাচে যা হওয়ার হয়েছে, আমস্টারডামে বোর্ডে আবার ঘুঁটিগুলো স্বস্থানে ফিরে আসবে আমাদের।” ফলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ফুলব্যাকে আলভারোকেও দেখা যাবে। ২০১০-এ রিয়ালে যোগ দেওয়া মোরিনহো যখন যে দেশের ক্লাবে কোচিং করিয়েছেন, সেই দেশের লিগ জিতেছেন পর্তুগাল, ইংল্যান্ড, ইতালি, স্পেন। এ বার স্পেনের টিমকে ইউরোপিয়ান লিগ দিতে মরিয়া মোরিনহো টুর্নামেন্টে নাটকীয় জয় দিয়ে শুরু করায় রিয়ালকে ভয় পাচ্ছেন আয়াখসের বর্ষীয়ান ড্যানিশ তারকা মিডফিল্ডার পলসেন। বলেছেন, “ডর্টমুন্ডের কাছে আগের ম্যাচে আমরা হারলেও অনেক কিছু ভাল করেছিলাম। সেখান থেকেই রিয়ালের বিরুদ্ধে শুরু করতে হবে আমাদের। তবে ‘গ্রুপ অব ডেথে’ও ওরা বাকি তিনটের চেয়ে অন্য রকম দল। আমাদের জিততে হলে শুধু ভাল খেললেই হবে না, অসাধারণ খেলতে হবে।” |