যে পাঁচ কারণে লাল-হলুদ তাঁবুতে আহা কী আনন্দ
হা কী আনন্দ!
ফেড কাপ নিয়ে শহরে ফেরার পরের দিন সকালে এটাই ক্যাচলাইন ইস্টবেঙ্গল তাঁবুর।
সকাল সাড়ে এগারোটায় পতাকা উত্তোলনে হাজির দিন দশেক আগে পিতৃহারা টালিগঞ্জের অশোকও। জোড়া ইলিশ নিয়ে হাজির বিরাটির ছোটন। আড়াই বছর ধরে একই ছন্দে, প্রিয় ক্লাব ট্রফি জিতলেই। শেষ ২৭ মাসে ইস্টবেঙ্গলের সাতটি খেতাব। তাই মঙ্গলবার সকালে দু’হাত তুলে নাচছিলেন ওঁরা। সঙ্গে আরও কয়েকশো লাল-হলুদ সমর্থক।
পাশের মোহনবাগান তাঁবুতে যখন ট্রফি এই ২৭ মাসেই ডোডো পাখির পর্যায়ে চলে গিয়েছে, তখন মর্গ্যানের ইস্টবেঙ্গলের মারকাটারি সাফল্যের ‘রাজ ক্যায়া হ্যায়।”
এই প্রশ্নে ময়দানের লজেন্স বিক্রেতা দিদি থেকে ফুটবল জনতা, সকলেই দেখিয়ে দেবেন মর্গ্যানকে। এবং আতসকাঁচের তলায় মর্গ্যানের দলের এই ২৭ মাসের পারফরম্যান্স ফেলার পর বেরিয়ে আসছে সাফল্যের পাঁচ কারণ।
জনজোয়ারে মর্গ্যান-বরণ। ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে মঙ্গলবার। -নিজস্ব চিত্র
এক) আমরা জিততে পারি: তিন বছর আগের ২৫ অক্টোবর। মোহনবাগানের কাছে ৩-৫ গোলে হেরে সে দিন চোখের জল মুছতে-মুছতে বাড়ি ফিরেছিলেন লাল-হলুদ সমথর্করা। সুভাষ ভৌমিক সরে গিয়ে ‘হটসিট’-এ বসেছিলেন ফিলিপ ডি’রাইডার। ফেড কাপ এলেও আই লিগে দলকে অবনমন বাঁচানোর লজ্জার লড়াই করতে হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতেই মেহতাবদের কাণ্ডারি হয়ে লাল-হলুদ তাঁবুতে পা মর্গ্যানের। প্রথম দিন থেকেই ফুটবলারদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে মাথায় ঢুকিয়ে দিতে পেরেছেন, “আমরা লাল-হলুদ জার্সি পরেছি জেতার জন্য।” ম্যাচে পিছিয়ে পড়লেও তাই অটুট থাকছে আত্মবিশ্বাসের ঝুলি। তার প্রভাব সদ্যসমাপ্ত ফেড কাপেও। গ্রুপ লিগে ওএনজিসি, কালীঘাট মিলন সঙ্ঘ এবং ফাইনালে ডেম্পো-- তিন ম্যাচেই পিছিয়ে পড়ে জিতেছে ইস্টবেঙ্গল।
দুই) কোচ-ই ভরসা: এ ব্যাপারে লেটার মার্কস পাবেন ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার এবং তাঁর সহ-কর্তারা। ২৭ মাসে লাল-হলুদ শিবিরে কোচের সঙ্গে অনেক মনোমালিন্য হয়েছে। গাও, টোলগে, অতনু, সন্দীপ নন্দী-সহ একাধিক বিতর্কিত প্রসঙ্গ এসেছে। কিন্তু সেখানেও কর্তাদের কাছে ‘ইগো ফ্যাক্টর’-এর বদলে ‘সাকসেস ফ্যাক্টর’ প্রাধান্য পেয়েছে। তাঁরা আস্থা রেখেছেন কোচের ওপর। ফেড কাপ জয়ের পর ‘মিশন আই লিগ’-এর লক্ষ্যে লাল-হলুদে কোন ফুটবলার থাকবেন বা কে আসবেন সে ব্যাপারটাও কোচের ওপরই ছেড়েছেন কর্তারা। মঙ্গলবার সে কথা পরিষ্কার জানিয়ে মর্গ্যান বললেন, “দল জিতলে বা হারলে সব দায় যখন আমার, তা হলে এই তাঁবুতে কে ঢুকবে আর কে ঢুকবে না, সেটাও আমিই ঠিক করব।” যা শুনে ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্যর অসন্তোষ বাড়েনি। বরং তিনি হাসতে হাসতে বলছেন, “কোচ ঠিক বলেছেন। আমরা দল গঠনে কোচের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলি না। কোচের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আর্থিক বিবেচনার দায়িত্ব আমাদের। বাকি সিদ্ধান্ত নেবেন কোচ।” কোচ-কর্তাদের এই ‘ফিল গুড’ পরিবেশটাই ২৭ মাসের সাফল্যের ইউএসপি। যার অভাবে গঙ্গাপারের অন্য বিখ্যাত ক্লাবে কোচ বদল হয়েছে চারবার।
তিন) আমি তোমাদেরই লোক: সাফল্যের কারণ হিসাবে চিডি বলছেন, “এই মুহূর্তে ইস্টবেঙ্গল একটা তেল খাওয়া ইঞ্জিন। আর সেই ইঞ্জিনের চালক ট্রেভর জেমস মর্গ্যান।” বলজিৎ বলছেন, “আমার আত্মবিশ্বাস ফেরাতে মনোবিদের কাছে পাঠিয়েছিলেন ট্রেভর। এতেই আমার ফর্ম ফিরেছে।” ফেড কাপে কালীঘাট এমএস ম্যাচে তিন গোল হজমের পরেও রাজু-অর্ণবের পাশে সেই কোচই। ফলে ফাইনালে কোচের জন্য নিজেদের উজাড় করে দিতে কোনও খামতি রাখেননি দুই স্টপার।
চার) দল নির্বাচনে এবং ফুটবলার পরিবর্তনে স্বচ্ছতা: ফেড কাপের ২০ জনের দলেও ছিলেন না মরসুমে দুর্দান্ত শুরু করা কেভিন লোবো। সমালোচকদের প্রশ্নে মর্গ্যান সে দিন বলেছিলেন, “নাম নয়। দলে ভারসাম্য জরুরি।” ফেড কাপ নিয়ে এসেও সে কথাই বলছেন লাল-হলুদ কোচ। “মাঝমাঠে রক্ষণাত্মক ভূমিকা নিয়েছে ইসফাক, খাবরা। কিন্তু যখনই গোলের জন্য ঝাঁপাতে হয়েছে, তখনই লালরিনডিকা কিংবা সঞ্জুকে নামিয়েছি। কাজেও দিয়েছে।” এই সঠিক দল নির্বাচন কিংবা পরিবর্তনই ইস্টবেঙ্গলের সাফল্যের অন্যতম বক্স অফিস। পাঁচ) একই দল ধরে রাখা: আর্মান্দো কোলাসোর ‘থিওরি’ ইস্টবেঙ্গলে আমদানি করেছেন মর্গ্যান। এ ব্যাপারে কোচের সঙ্গে লাল গোলাপ পেতে পারেন ইস্টবেঙ্গল কর্তারাও। ২৭ মাসে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি মেহতাবদের সংসারে। টোলগে-নবি-নির্মল ছাড়া খুব বড় নাম দলছুট হয়নি। প্রায় একই দলের মধ্যে বোঝাপড়া দুর্দান্ত। রক্ষণ-মাঝমাঠ-আক্রমণভাগের প্রত্যেকে জানে কার কী দায়িত্ব। নির্দিষ্ট কোনও তারকা না থেকেও দলগত সংহতির ‘ডিভিডেন্ট’ পাচ্ছে লাল-হলুদ। এর সঙ্গে অ্যালভিটো ডি’কুনহার মতো বহু ভাষা জানা ফুটবলার এবং লাল-হলুদের নতুন প্রজন্মের কর্মকর্তাদের জনসংযোগ সাহায্য করেছে মর্গ্যানকে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.