|
|
|
|
ছাত্র-সমাজ কি রাজনীতি বিমুখ, প্রশ্ন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
ভাল ছাত্রছাত্রীরা কি সত্যিই রাজনীতি বিমুখ? প্রশ্নটা তুলে দিল এক বক্তৃতা প্রতিযোগিতা।
মেদিনীপুর শহর যুব-তৃণমূলের উদ্যোগে মঙ্গলবার এক বক্তৃতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। দু’টি বিষয়ের উপর বক্তৃতা করার সুযোগ ছিল প্রতিযোগীদের ১) ভাল ছাত্রছাত্রীদের রাজনীতিতে আসার প্রয়োজনীয়তা, ২) বিবেকানন্দকে জানা যুব-জীবনে কতটা প্রয়োজন। প্রতিযোগিতায় যে সব ছাত্রছাত্রী যোগ দেন, তাঁদের সকলেই দ্বিতীয় বিষয়টি বেছেছেন। যাঁরা বিবেকানন্দ বিষয়ে বক্তৃতা করেছেন, এক-দু’জন বাদে তাঁদের সকলেরই বয়স মধ্য তিরিশ পেরিয়েছে।
তাহলে কী ছাত্রছাত্রীরা এখন সত্যিই রাজনীতিতে আসতে চাইছেন না? প্রশ্নটা ঘুরপাক খেল বিচারকদের মধ্যেও। প্রতিযোগিতার অন্যতম বিচারক, মেদিনীপুরের অলিগঞ্জ গার্লস স্কুলের সম্পাদক সুব্রত সরকার বলছিলেন, “কয়েকটি ঘটনাই যেন ভালো ছাত্রছাত্রীদের রাজনীতি বিমুখ করে দিচ্ছে। বিষয়টি আমাদের সকলকেই ভাবতে হবে।” কেন ভালো ছাত্রছাত্রীদের অধিকাংশ রাজনীতি বিমুখ? তার উত্তরও যেন উঠে এল বক্তৃতা প্রতিযোগিতা থেকে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করে অভিজিৎ বেরা নামে এক যুবক বলেন, “একটা সময় রাজনীতি বলতে মানুষ বুঝতেন আদর্শ। বর্তমানে এমন কিছু মানুষ রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছেন, যাঁদের মানবিকবোধ নেই। রুচিবোধ নেই। তাঁদের দেখে অনেকের ধারণা হয়েছে, রাজনীতি মানেই যেন ক্ষমতা। কিছু চাওয়া- পাওয়া।” বক্তৃতা করতে গিয়ে শপথ চক্রবর্তী নামে এক যুবক বলেন, “ভালো ছাত্রছাত্রীরাই রাজনীতিকে সমৃদ্ধ করতে পারে। মনে রাখতে হবে, আজ যদি ভালো ছাত্রছাত্রীরা রাজনীতিতে না- আসেন, তাহলে ৪০ বছর পর দেশের ভালো প্রধানমন্ত্রী পাবো না।” তাঁর কথায়, “ছাত্রছাত্রীদের এই মানসিকতা নিয়েই রাজনীতিতে আসা উচিত যে আমরা সমাজকে কিছু দেবো। নেওয়ার চেষ্টা করব না। মনে রাখা উচিত, রাজনীতিটা জীবিকা নয়।” আবার সঞ্জীব তোরুই নামে এক প্রতিযোগির বক্তব্য, “সত্যিই তো, ভালো ছাত্রছাত্রীদের কেউই সাধারণত রাজনীতিতে আসতে চায় না। কেন? আমাদের ভাবতে হবে। দেশকে সুন্দর ভাবে গড়ে তোলার জন্য রাজনীতিতে তাঁদের আসার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।”
প্রতিযোগিতায় বক্তব্য রেখেছেন শৌর্য দাস, সৌমেন ঘোষ, মৌ ঘোষ, মহেন্দ্র গড়াই’য়ের মতো ছাত্রছাত্রীরা। তবে এঁদের কেউই রাজনীতির বিষয়টির উপর বক্তব্য রাখেননি। বক্তব্য রেখেছেন ‘বিবেকানন্দকে জানা যুব- জীবনে কতটা প্রয়োজন’, তা নিয়েই। কেন রাজনীতির বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য রাখলেন না? দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র সৌমেন বলছিলেন, “রাজনীতি ততটা বুঝি না। বিষয়টি নিয়ে আমার তেমন আগ্রহও নেই।” এই আগ্রহ না- থাকার জন্য ঘুরে বাম- আমলকেই দুষেছেন সুব্রত বসু নামে এক যুবক। সুব্রতবাবু মেদিনীপুরের তৃণমূল পুরপ্রধান প্রণব বসুর ভাই। বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করে তিনি বলেন, “রাজ্যে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করে রাখা হয়েছিল যে ভালো ছাত্রছাত্রীদের রাজনীতিতে আসতে দেওয়াই হয়নি। বরং তাঁদের নেশার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।” প্রায় একই মত শঙ্কর মাঝি’র। বক্তব্য রাখতে গিয়ে শিক্ষাকর্মী শঙ্করবাবু বলেন, “ভালো ছাত্রছাত্রীরা রাজনীতিতে এলে নীতি- নির্ধারণে সুবিধে হবে। তবে দীর্ঘদিন ধরে এমন একটা পরিস্থিতি চলেছে যে ছাত্রছাত্রীদের অনেকে ইচ্ছে থাকলেও নানা বাধায় রাজনীতিতে আসতে পারেননি।”
প্রতিযোগিতা শেষে এক অভিভাবক বলছিলেন, “পরিস্থিতি কী এখনও পাল্টেছে? আগে একপক্ষ শিক্ষা কেন্দ্রে দাপাদাপি করেছে। এখন দু’পক্ষই ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে। তাই এতো অশান্তি। শিক্ষকদের উপর নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। যাঁরা কলেজে পড়াশোনার পরিবেশ সচল রাখতে চাইছেন, তাঁদের গায়ে বিভিন্ন দলের তকমা সেঁটে দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ওই অধ্যাপক- শিক্ষক- শিক্ষাকর্মী অমুক দলের লোক। অশান্তির ফলে আখেরে পড়াশোনাই ব্যাহত হচ্ছে।” তাঁর কথায়, “মনে হয় অশান্তি দেখেই সাধারণ ঘরের ছেলেমেয়েরা রাজনীতি থেকে দূরে থাকছেন।” প্রতিযোগিতার আয়োজক যুব তৃণমূলের শহর সভাপতি স্নেহাশিষ ভৌমিকও মানছেন, “রাজনীতির বিষয়টি নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের একাংশ বক্তব্য রাখলে ভালো হত। তাহলে ছাত্র- সমাজ বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছে, বোঝা যেত।” একটা প্রতিযোগিতা। কিন্তু, এই প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়েই যেন অনেকগুলি প্রশ্ন উঠে গেল। |
|
|
|
|
|