|
|
|
|
গ্রন্থমেলায় মাতল গুয়াহাটি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
প্রকাশকদের ক্ষোভ সামলে শুরু হল গুয়াহাটি গ্রন্থমেলা ও সাহিত্য উৎসব। তবে নাগাড়ে কালো মেঘ, বৃষ্টি, জল আর এলোমেলো স্টল মিলিয়ে প্রথম বেলাটা অগোছালোই কাটল। আজ গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, সাহিত্যিক মণিশঙ্কর মুখোপাধ্যায় ও সাহিত্য সভার সভাপতি রং বং তেরং। অসমীয় ছাপানো বইয়ের ঐতিহ্য, আগামী বছর দুশো বছরে পা দেবে। সেই উপলক্ষে গ্রন্থমেলায় প্রথম প্রকাশিত অসমীয় বই ফের প্রকাশ করা হচ্ছে।
প্রায় তিনশো প্রকাশক এ বারের গ্রন্থমেলায় অংশ নিয়েছেন। কিন্তু গতকাল রাত অবধি স্টল বন্টনে বৈষম্য ও অনিয়মের অভিযোগে প্রকাশকদের সিংহভাগ সরব ছিলেন। পরিস্থিতি সামলাতে নাজেহাল হয় প্রকাশনা পরিষদ। প্রকাশকদের দাবি, অনেককেই ৮০০০ টাকার বিনিময়ে প্রতিশ্রুতিমতো ২০০ বর্গফুট স্টলের বদলে মাত্র ৬০ বর্গফুট স্টল দেওয়া হয়েছে। হয়নি লটারিও। রাত অবধি এ নিয়ে চাপান উতোরের পরে আজ বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়। এ দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, “নব প্রজন্ম অসমীয় সাহিত্য থেকে বিমুখ হয়ে গিয়েছে বলে যে ধারণা প্রচলিত তা ঠিক নয়। বরং অসমীয় সাহিত্যে নবজাগরণ হচ্ছে। এই প্রথম বার গ্রন্থমেলার সঙ্গে সাহিত্য উৎসব এক সঙ্গে পালিত হচ্ছে। বইয়ের মান, গবেষণার মান বেড়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে প্রতি বছর ১০০ জন লেখককে গবেষণামূলক লেখার জন্য বৃত্তি দেওয়া হবে।” |
|
গুয়াহাটি গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করছেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। মঙ্গলবার উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি। |
মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, “কেবল রাজধানীতে বইমেলা করলে হবে না। গ্রন্থমেলা নিয়ে যেতে হবে এমন এলাকায়, যেখানে পড়ার অভ্যাস তুলনামূলকভাবে কম। সেখানে গ্রন্থমেলা করে মানুষের মধ্যে পড়ার অভ্যাস জাগাতে পারলে তবেই গ্রন্থমেলার সার্থকতা।” তাঁর মতে সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা কেবল আঁতলামি নয়, তা মনের দরজা খুলে দেয়। লেখকদের সমাজসচেতন হওয়ার আবেদন জানান গগৈ। রাজ্যের সত্রগুলিতে থাকা জ্ঞানভাণ্ডার অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করার জন্য প্রকাশনা পরিষদের কাছে তিনি আবেদন জানান। তিনি বলেন, “যতই ই-মেল, ই-বুক আসুক, ছাপা হওয়া বইয়ের ধার ও ভার মোটেই কমবে না।”
গত এক বছরে অসমের সাহিত্য, সংস্কৃতি জগতে বেশ কিছু ইন্দ্রপতন ঘটেছে। ভূপেন হাজারিকা, মামণি রয়সম গোস্বামী, হীরেণ ভট্টাচার্য মারা যাওয়ার পরে এটিই প্রথম গ্রন্থমেলা। তাই স্টলগুলিতে তাঁদের রচনার চাহিদা রয়েছে। পাশাপাশি, রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দের সার্ধশতবর্ষে তাঁদের রচনা ও তাঁদের নিয়ে রচনার পসরাও প্রচুর। বিবেকানন্দকে নিয়ে তাঁর লেখা বইয়ের অসমীয় অনুবাদ ‘অচিন অজান বিবেকানন্দ’ উদ্বোধন করবেন শংকর। প্রকাশনা পরিষদের তরফে প্রশান্ত চক্রবর্তী জানান, গ্রন্থমেলা উপলক্ষে শংকর ছাড়াও আসছেন নবনীতা দেবসেন, কে সচিদানন্দ, গিরীশ করনাড প্রমুখ।
এ দিকে, প্রায় দুই শতাব্দী পরে অসমীয় ভাষায় প্রথম প্রকাশিত বই ‘ধর্মপুস্তক’ ফের ছাপা হচ্ছে। ১৮১৩ সালে শ্রীরামপুর থেকে উইলিয়াম কেরি ও আত্মারাম শর্মা এই বইটি প্রকাশ করেছিলেন। যা বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য। শেষ পর্যন্ত, গত বছর লন্ডনের ‘ব্রিটিশ লাইব্রেরি’ থেকে ‘ধর্মপুস্তক’-এর একটি ডিজিটাল কপির সন্ধান পান সূর্য হাজরিকা। রয়্যাল অক্টেভ আকারের, ৮৬৪ পাতার বইটি থেকে প্রাচীন অসমীয় ভাষার বাক্য গঠন, বানান, ভাষা ব্যবহার বিষয়েও ধারণা মিলবে। বইটিতে কেরি সাহেবের লেখা একটি ভূমিকাও রয়েছে। সূর্য হাজরিকা ধর্মপুস্তক পুনরায় প্রকাশ করছেন। |
|
|
|
|
|