স্কুল-কলেজ-অফিস ছুটি। তাই অন্য দিনের তুলনায় অনেক কম বাস নেমেছিল রাস্তায়। আর তার জেরে এমনিতেই ঠাসাঠাসি মেট্রোয় পুজোর বাজারমুখী জনতার ঢলে মাত্রা ছাড়াল ভিড়। মঙ্গলবার, সপ্তাহের মাঝে ছুটির দিনটাকে কাজে লাগাতে গিয়ে নাকাল হলেন মানুষ। কখনও বাসের অপেক্ষায় হা-পিত্যেশ দাঁড়িয়ে, কখনও বা যাত্রী-বোঝাই মেট্রোর দমবন্ধ ভিড়ে।
মেট্রোর আপ-ডাউন দুই লাইনেই এ দিন বেশির ভাগ স্টেশনে প্রায় সুনামির মতো আছড়ে পড়েছে ভিড়। ট্রেন থেকে যাত্রীদের নামার অপেক্ষা না করেই চলেছে ওঠার জন্য ধাক্কাধাক্কি। ফলে প্রতিটি দরজার সামনেই কার্যত ছিল মারামারির পরিস্থিতি। নামা-ওঠা করতে গিয়ে কেউ বা আছাড় খেয়েছেন, কেউ বা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ভিড়ের প্রবল চাপে।
পুজোর মাসের প্রথম ছুটি। অনেকেই বেরিয়েছিলেন পুজোর বাজারে। বাস কম, ফলে অধিকাংশের ভরসা ছিল মেট্রো। তার মধ্যেই ছুটির দিনের নিয়ম মেনে ১৫ মিনিট অন্তর চলেছে মেট্রো। মাঝে বিকেল পাঁচটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দশ মিনিট অন্তর। দু’টি মেট্রোর ব্যবধান বেশি থাকায় শুরুর স্টেশন দমদম বা কবি সুভাষ থেকেই ভিড় হয়েছে। শোভাবাজার বা কালীঘাটের মতো মাঝের স্টেশনগুলিতে অনেকে মেট্রোয় উঠতেই পারেননি।
মেট্রোর এক নিত্যযাত্রী সুলেখা বসু যেমন জানান, দুপুর সওয়া দু’টো নাগাদ দমদমমুখী ট্রেনে গীতাঞ্জলি স্টেশন থেকেই এ দিন যাত্রী ছিল অন্য দিনের তুলনায় বেশ বেশি। তাঁদের অধিকাংশই পুজোর বাজারমুখী। ভিড় বাড়তে থাকে নেতাজি বা মহানায়ক উত্তমকুমার থেকে। কালীঘাটে পৌঁছে মাত্রা ছাড়ায় তা। বহু স্টেশনেই ভিড়ের চাপে দরজা খোলা-বন্ধে সমস্যা হয়। সুলেখাদেবী বলেন, “এসপ্ল্যানেডে ট্রেনে উঠে ভিড়ের চাপে পড়ে যান এক মহিলা। পিছনে এত ধাক্কাধাক্কি যে, তিনি উঠতেই পারছিলেন না। তাঁকে প্রায় মাড়িয়ে দিয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো কামরায় উঠছিলেন মানুষ। কোনওমতে ওই মহিলা উঠলেও অসুস্থ বোধ করতে থাকেন।”
এমন পরিস্থিতি চলেছে কার্যত সারা দিনই। মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক প্রত্যুষ ঘোষ বলেন, “ছুটির দিন মেট্রোয় ভিড় ছিল ঠিকই। তবে পরিষেবায় তেমন বিঘ্ন ঘটেনি। রাত আটটা পর্যন্ত যাত্রী-সংখ্যা ছিল ৩ লক্ষ ৬৬ হাজার। তবে পুজোবাজার করতে যাওয়া মানুষের কথা ভেবে আগামী শনি ও রবিবার বেশি সংখ্যক ট্রেন চালানো যায় কি না, তা দেখা হচ্ছে।”
বাসের ভরসায় থাকা জনতার ভোগান্তিও ছিল একই রকম। ছুটির দিনে সকাল থেকেই পথে বাস কম। নিউ মার্কেটে বাজার করতে আসা ভিড়টার অনেকেই বাস না পেয়ে তুমুল হয়রান হন। যেমন, ডোমজুড়ের তপন কর্মকার। বললেন, “বাজার শেষ। প্রায় ২৫ মিনিট দাঁড়িয়ে আছি। বাস নেই। ট্যাক্সিও যেতে চাইছে না।” বোনকে নিয়ে বাজার করতে এসেছিলেন সিঁথির ঈপ্সিতা দাস। তিনি বলেন, “দুপুরে খুব কষ্ট করে মেট্রোয় চেপে নিউ মার্কেটে এসেছি। প্রতিটি দোকানের বাইরে লম্বা লাইন। বাস নেই। অগত্যা সেই ভিড় মেট্রোতেই বাড়ি ফিরতে হবে।” ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস’-এর যুগ্ম সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় স্বীকার করেছেন, এ দিন অন্যান্য দিনের তুলনায় বাস অনেকটাই কম চলেছে। কলকাতা ও দুই ২৪ পরগনা মিলিয়ে যেখানে হাজার তিনেক বাস চলে, সেখানে এ দিন চলেছে হাজারেরও কম। তপনবাবু বলেন, “অফিস, স্কুল, কলেজ সব ছুটি। শুধু পুজোর বাজার করা মানুষের কথা ভেবে সব বাসমালিক রাস্তায় বাস বার করেননি।” যদিও ‘মিনিবাস অপারেটর কো-অর্ডিনেটর কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক অবশেষ দাঁ বলেন, “মিনিবাস অন্যান্য দিনের মতোই চলেছে।”
এ দিন সকালে কলকাতায় সিএসটিসি-র ৩৩০টি বাস পথে নামে। তাদেরই দূরপাল্লার বাস বেরোয় আরও ৭০টি। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে বাস। ভুগতে হয় যাত্রীদের। একই অবস্থা ট্রাম এবং সিটিসি-র বাসের ক্ষেত্রেও। দৈনিক যেখানে প্রায় ২১২টি বাস ও ১২০টি ট্রাম চলে, সেখানে এ দিন পথে বেরিয়েছিল ১৮৬টি বাস ও ৮৬টি ট্রাম। কেন? সিটিসি-র চেয়ারম্যান শান্তিলাল জৈন বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
এ দিকে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিউ মার্কেটে ভিড় বাড়তে শুরু করে। এক সময়ে তা জনপ্লাবনকেও হার মানায়। জুতো থেকে জামাকাপড়, সব দোকানের বাইরেই দুপুর থেকে ছিল লম্বা লাইন। পুলিশ জানিয়েছে, ভিড়ের কারণে পার্ক স্ট্রিটমুখী জওহরলাল নেহরু রোডে বাস-সহ অন্যান্য গাড়ির নিয়ন্ত্রণ করা হয়। নিউ মার্কেট ও ধর্মতলা চত্বরে এত ভিড় হয় যে, পার্ক স্ট্রিট থেকে ধর্মতলা পৌঁছতেই গাড়িতে লেগে গিয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট। পুলিশের মতে, ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ এ দিন নিউ মার্কেট চত্বরে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন। বিকেলের বৃষ্টি তাঁদের ভোগান্তি বাড়ায় আরও। |