এক দিনের জের কাটতে না-কাটতেই আরও দু’দিনের কাউন্ট ডাউন শুরু!
পুজোর মুখে সমাবেশ-মিছিলে ফের জেরবার হওয়ার প্রহর গুনছে কলকাতা! কংগ্রেসের মিছিল এবং সিপিএমের সমাবেশে চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন শহরের বিস্তীর্ণ অংশে স্বাভাবিক জীবন লাটে উঠেছিল। একই আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে কাল, বৃহস্পতি ও পরশু শুক্রবারের কর্মসূচি ঘিরেও। ওই দু’দিন শহরের কেন্দ্রস্থলে একাধিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের মিছিল-সমাবেশ রয়েছে। পরপর দু’দিনের যে কর্মসূচি রাজ্য সরকারের সমাবেশ-মিছিল ব্যবস্থাপনার কৌশল নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।
সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ইউডিএফের ডাকে বৃহস্পতিবার কলেজ স্কোয়ার থেকে মিছিল শেষে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশ। ওই একই দিনে রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে গণেশ অ্যাভিনিউ, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ হয়ে বৌবাজারের পথে বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের ‘লালবাজার অভিযান’। পরের দিন শুক্রবার মিল্লি কাউন্সিল-সহ কিছু সংখ্যালঘু সংগঠনের আয়োজনে শহিদ মিনার ময়দানে জমায়েত। এই সবক’টি কর্মসূচির যোগফল পুজোর মুখে শহরের রাস্তাঘাট বেসামাল! উদ্যোক্তাদের মধ্যে কয়েকটি সংগঠনের অভিযোগ, সরকারকে আগাম জানানো সত্ত্বেও তাদের তরফে প্রথমে কোনও সাড়া মেলেনি। পরে প্রশাসন যখন আসরে নেমেছে, তখন ঘোষিত কর্মসূচি থেকে পিছোতে নারাজ উদ্যোক্তারা! |
সরকারি সূত্রের খবর, সম্প্রতি একটি সংখ্যালঘু সংগঠনের কর্মসূচি ঘিরে শহরের রাজপথে পুলিশ হিমশিম খাওয়ার পরে আবার ৪ ও ৫ অক্টোবরের কার্যক্রমের খবরে ক্ষুব্ধ ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি প্রাথমিক ভাবে ঠিক করেছিলেন, পুজোর আগে মানুষকে দুর্ভোগ থেকে রেহাই দেওয়ার কারণ দেখিয়ে শহরের কেন্দ্রস্থলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সাময়িক ভাবে হলেও ১৪৪ ধারা জারি করা হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রশাসন সেই পথে হাঁটেনি। বরং, রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই কিছু সংগঠনের নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করে চেষ্টা চালিয়েছেন, তাঁদের যাতে পথে নামা থেকে বিরত রাখা যায়। রাজনৈতিক ভাবে অপ্রিয় হওয়ার আশঙ্কা থেকেই কি কড়া পদক্ষেপ করতে দোটানায় আছে রাজ্য প্রশাসন? প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনিক মহলের একাংশে।
সিদ্দিকুল্লাদের সংগঠন মিছিল ও সমাবেশ করবে ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন, সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষণ চালু, মহিলাদের নিরাপত্তা-সহ একগুচ্ছ দাবিতে। সিদ্দিকুল্লার বক্তব্য, “আমরা প্রথমে মহাজাতি সদনে সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম। সরকারের সর্বোচ্চ স্তরের অনুমতি ছাড়া ওই সদন দেওয়া যাবে না বলে জানানো হয়। সেই সময় শিক্ষামন্ত্রী ফোন ধরেননি। পরে পার্থবাবু আমাদের বললেন, আমরা যাতে কোনও হলে অনুষ্ঠান করি। কিন্তু এখন তো আর কিছু করার নেই!” সিদ্দিকুল্লাদের সমাবেশের পরের দিন যে জমায়েত আছে, তার অবশ্য অন্যতম বিষয় এক মার্কিন পরিচালকের তৈরি তথ্যচিত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো।
রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, মহিলাদের উপরে নির্যাতন এবং ধর্ষকদের কড়া শাস্তির বদলে ধর্ষিতাদের আর্থিক ক্ষতিপুরণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কাল, বৃহস্পতিবারই লালবাজার অভিযান করবে ফ ব। দলের কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক মইনুদ্দিন শামস মঙ্গলবার বলেছেন, “আমরা দিন পনেরো আগেই পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়ে কর্মসূচির কথা জানিয়েছিলাম। আশা করব, আমাদের দাবিপত্র নেওয়ার জন্য তিনি ওই দিন তাঁর দফতরে থাকবেন!” ঝাঁটা-জুতো হাতে মহিলাদের ওই দিন রাস্তায় নামানোর পরিকল্পনা নিচ্ছে ফ ব। তারা সাংবাদিক সম্মেলন করে এ দিন পুলিশকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরে লালবাজার থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ফ ব অবশ্য এখন পিছু হঠতে নারাজ। দলের কলকাতা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দেবব্রত রায় সাফ বলেছেন, “পুলিশ বাধা দিলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে প্রশাসন দায়ী থাকবে! আমরা অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছিলাম। প্রতিটি জেলাতেই বিক্ষোভ হবে। এখানে পুলিশ জোর করতে গিয়ে কিছু ঘটলে আমাদের দায়িত্ব নয়!”
সরকার কি চাইলে এই পরিস্থিতি এড়িয়ে একটু সুসংহত ব্যবস্থা করতে পারত না? রাজ্যের এক বর্ষীয়ান মন্ত্রীর বক্তব্য, “এখনও এক দিন সময় আছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনকে কী বলেন, দেখা যাক।” তত ক্ষণ ত্রস্ত আছেন শহরবাসী! |