জম্পুই পাহাড়ের কমলা লেবু উৎপাদকদের উৎসাহ দিতে এ বারে নাগপুর থেকে উড়ে এলেন কয়েক জন বিজ্ঞানী। রাজ্য সরকারের উদ্যান এবং ভূমি সংরক্ষণ দফতরের আমন্ত্রণে নাগপুরের জাতীয় বিজ্ঞান গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা এসে হাতে কলমে শিখিয়ে গেলেন, কী ভাবে জম্পুই পাহাড়ের কমলা বাগানগুলির পুনরুজ্জীবন এবং কমলার উৎপাদন বাড়ানো যায়।
পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিঙের কমলার সঙ্গে টেক্কা দিতে পারে ত্রিপুরার জম্পুই পাহাড়ের কমলা। কিন্তু গত এক দশক ধরে বিভিন্ন কারণে জম্পুইয়ের কমলা উৎপাদন কমে গিয়েছে। আগে কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হত। এখন কমতে কমতে সেটা দাঁড়িয়েছে পাঁচশো হেক্টরে। প্রধানত রিয়াং এবং মিজো সম্প্রদায়ের মানুষরা কমলা চাষে বেশি উৎসাহী। উৎপাদন কমে যাওয়ার স্থানীয় কমলা চাষিদের আর্থিক অবস্থা দিন দিনই করুণ হচ্ছে। রোজগারের জন্য বিকল্প কিছু চাষ করছেন তাঁরা। রাজ্য সরকারের হর্টিকালচার দফতরের এক অফিসার জানান, বংশানুক্রমিক কমলা চাষে কয়েক বছর আগে পর্যন্ত উৎপাদকরা ভালই লাভ করেছেন। তবে বিভিন্ন কারণে বাগানগুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে না পারায়, কমলা চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন তাঁদের অনেকেই। তা সত্ত্বেও পুজোর পর স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ প্রতি বছর পর্যটকদের আকর্ষণ করতে ‘কমলা উৎসব’ করে থাকেন।
পাশাপাশি, জম্পুই পাহাড়ের কমলার সুনাম ধরে রাখতে পারলে ত্রিপুরার পর্যটন ব্যবসাও যে বৃদ্ধি পাবে, সে কথাও রাজ্য সরকার জানে। তাই গত দু’বছর ধরেই জম্পুইয়ের ধ্বংসপ্রায় কমলা বাগানগুলি পুনরুদ্ধারের জন্য হর্টিকালচার দফতর বাইরে থেকে বিজ্ঞানীদের ডাকছে। কী কী কারণে কমলার উৎপাদন কমে যাচ্ছে, সেটা সরেজমিনে দেখে তার প্রতিকারে এ বারেও আমন্ত্রিত বিজ্ঞানীরা চাষিদের এবং সংশ্লিষ্ট কর্মীদের পরামর্শ দিয়েছেন। এ বারে আমন্ত্রিত বিজ্ঞানীদের মধ্যে ছিলেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর এগ্রিকালচার রিসার্চ-এর অধীনস্থ নাগপুরের ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার ফর সাইট্রাস-এর আই পি সিংহ, আর কে সোনাকার, লাল্লান রাম প্রমুখ। তাঁরা জানিয়েছেন, উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার অন্যতম কারণ কমলা বাগানের পরিচর্যা এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। ফলে বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে। বিজ্ঞানীদের পরামর্শ, উপযুক্ত সময়ে হর্মোন ট্রিটমেন্ট, প্রুনিং, জৈব সার ইত্যাদির প্রয়োগের মাধ্যমে বাগানগুলির রক্ষণাবেক্ষণ করলে কমলা গাছগুলি সজীব থাকবে। পাশাপাশি, উৎপাদনও বাড়বে।
হর্টিকালচার দফতরের পদস্থ কথা সুধৃতি দাস বলেন, এখানে এখনও প্রায় ২ হাজার পরিবার কমলা চাষের উপর নির্ভরশীল। উৎপাদন ভাল হলে এক একটি পরিবার বছরে ৫-৬ লক্ষ টাকা আয় করেন। দফতর নিজেও ৫৪ হেক্টর জমিতে এনরেগা প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন করে কমলা বাগান তৈরি করে চাষীদের উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করছে। |