অতীতে পরস্পরকে ছেড়ে কথা বলেনি কোনও পক্ষই। একপক্ষ অনুপস্থিত থেকেছে অন্য পক্ষের দলীয় সভায়। আবার দলেরই সাংসদের বিরুদ্ধে কালো পতাকা দেখানোর মতো অভিযোগও উঠেছে অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে। বীরভূমে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর এই ‘অম্ল-মধুর’ সম্পর্কের কথা জেলার লোকেদের কাছে এখন আর অজানা নয়। তবে, মঙ্গলবার রাজ্য সরকারের এক অনুষ্ঠানে এই দুই গোষ্ঠীর সকলকে একমঞ্চে দেখে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
তবে কি আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন দুই বিরোধী গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনল?
এর আগেও খানিকটা হলেও দু’পক্ষকে এক মঞ্চে হাজির করিয়েছিল নলহাটির পুর-নির্বাচন। সেবার দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের একটি সভায় এক মঞ্চে দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ও সাংসদ শতাব্দী রায়ের ঘনিষ্ঠ তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আর এ দিন খাদ্য দফতর আয়োজিত দুবরাজপুরের বীরনারায়ণপুর সাঁওতাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণের অনুষ্ঠানে এই প্রথম অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে একমঞ্চে দেখা গেল শতাব্দী রায়, সিউড়ির বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ ও আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এই তিন জনই জেলা সভাপতির বিরোধী গোষ্ঠীর বলেই জেলা রাজনীতিতে পরিচিত।
অথচ কয়েক দিন আগেও এসএসডিএ-র (শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদ) একটি অতিথি নিবাসকে কেন্দ্র করে শতাব্দীর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিক্ষোভ-মিছিল করেছিলেন অনুব্রত-গোষ্ঠীর নেতা বিকাশ রায়চৌধুরী। |
কিন্তু এ দিনের অনুষ্ঠানে অনুব্রতবাবুর পাশে বসেই আড্ডার ছলে দেখা গেল শতাব্দীকে। অনুষ্ঠানে দুপুর আড়াইটের দিকেই এসে পৌঁছনোর কথা ছিল খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। কিন্তু তিনি অনুষ্ঠানে আসেন প্রায় ৪টের দিকে। তার আগে অবশ্য আড়াইটেতেই প্রায় একই সময়ে সভায় এসে পৌঁছন শতাব্দী ও অনুব্রতবাবু। শতাব্দীর একটি আসন পরেই বসতে দেখা যায় অনুব্রতবাবুকে। কিন্তু তার কিছু পরে ওই সামান্য ব্যবধানটুকুও মিটে যায়। সাংসদের ঠিক পাশের সিটেই বসে পরেন জেলা তৃণমূল সভাপতি। কথাবার্তায় মেতে ওঠেন দু’জনেই।
এই ‘ব্যবধান’ আপাত-মেটার কারণ কী?
তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর, সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। রাজ্য নেতৃত্বের কাছ থেকে কার্যত কড়া বার্তা এসেছে জেলা সভাপতির কাছে। নির্বাচনের আগে সমস্ত ‘বিরোধ’ মিটিয়ে ময়দানে নামতে হবে। ‘নির্দেশ’ পেয়েই রাজ্য সরকারের এই অনুষ্ঠানে একমঞ্চে দুই গোষ্ঠীই!
চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি শতাব্দীর সঙ্গে। তবে, জেলায় তৃণমূলের কোনও অংশের মধ্যেই কোনও বিরোধ নেই, এই কথা দাবি করে অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “সরকারের অনুষ্ঠান। খাদ্যমন্ত্রী, স্থানীয় সাংসদ ছিলেন। আমিও গিয়েছিলাম। একটি স্বাভাবিক ঘটনা মাত্র।” জেলা সিপিএম নেতৃত্ব এই ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। দলের জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “এটা ওঁদের ঘরের ব্যাপার। এ বিষয়ে আমাদের কিছুই বলার নেই।”
এ দিন একমঞ্চে দেখা গেলেও এই ছবি ঠিক কতদিন দীর্ঘস্থায়ী হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছেন তৃণমূলেরই নিচু তলার কর্মী-সমর্থকেরা। |