গায়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে তখনও কেঁপে চলেছেন ইয়ং পিং। চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। দুর্ঘটনার বর্ণনা দিলেন তিনিই। বললেন, “রাত সওয়া আটটা নাগাদ লামা দ্বীপ থেকে রওনা দিয়েছিল আমাদের বিলাসবহুল ফেরিটি। সব কিছুই চলছিল ভাল মতো। কয়েক মিনিটের মাথায় হঠাৎ একটা বিকট আওয়াজ হল। কী হয়েছে বোঝার আগেই দেখলাম হু হু করে জল ঢুকছে ফেরির ভিতর। মুহূর্তের মধ্যে হাঁটু থেকে বুক পর্যন্ত উঠে এল কনকনে ঠান্ডা নদীর জল। তার পর বুঝতে পারলাম একদিকে হেলে গিয়েছে ফেরিটি। চেয়ার-টেবিল সব তখন গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। অনেকটা টাইটানিকের মতোই। দশ মিনিটের মধ্যে ডুবে গেল আমাদের ফেরিটা। ওই ঠান্ডা জলের মধ্যে প্রায় ২০ মিনিট ছিলাম। তার পরে উদ্ধার করা হয় আমাকে। প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছিল আর হয়তো বাঁচব না। উফ, কী বীভৎস!”
পয়লা অক্টোবর, অর্থাৎ সোমবার ছিল চিনের জাতীয় দিবস। ভিক্টোরিয়া বন্দরে চলছিল আতসবাজির খেলা। হংকং ইলেকট্রিক কোম্পানি তাদের কর্মীদের সপরিবারে নদীবক্ষ থেকে সেই আতসবাজির খেলা দেখাতে বিলাসবহুল ফেরির ব্যবস্থা করেছিল। সব মিলিয়ে ওই ফেরিটিতে ছিলেন ১২০ জনেরও বেশি। স্থানীয় সময় রাত সাড়ে আটটা নাগাদ লামা দ্বীপের কাছে আচমকাই একটি যাত্রিবাহী ফেরির সঙ্গে ধাক্কা লাগে তাদের। যাত্রিবাহী ফেরিটি বিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও ডুবে যায় ওই বিলাসবহুল ফেরিটি। মারা যান ৩৭ জন। তাঁদের অধিকাংশই শিশু বলে জানা গিয়েছে। আহত অন্তত ১০০ জন। যাত্রী সুরক্ষায় গাফিলতির অভিযোগে এখনও পর্যন্ত দু’টি ফেরিরই মোট ছ’জন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। |
বেঁচে যাওয়া আর এক মধ্যবয়স্কা মহিলা বললেন, “আমাদের ফেরিটা যখন ডুবে যাচ্ছিল, অনেকে মরিয়া হয়ে কাঁচের জানলা ভেঙে নদীতে ঝাঁপ দেয়। সব কিছু এত দ্রুত হল যে লাইফজ্যাকেট পর্যন্ত বাঁধার সময় পায়নি অনেকে।” এক মহিলা আকুল ভাবে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “যে চেয়ারটাতে বসেছিলাম সেটাতেই কী ভাবে যেন পা আটকে গিয়েছিল। সবাই যখন নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কেটে বাঁচার চেষ্টা করছে আমি তখন অসহায় ভাবে মৃত্যুর অপেক্ষা করছিলাম। এক বন্ধু এসে হ্যাঁচকা টান মেরে আমার পা-টা ছাড়িয়ে দিল। কিন্তু ওঁকে আর দেখতে পাচ্ছি না।” এখনও পুরোদমে দেহ উদ্ধারের কাজ চলছে। পাশাপাশি খোঁজা হচ্ছে অর্ধেক ডুবে থাকা ফেরিটির ভিতরও। যদি এখনও কেউ সাহায্যের অপেক্ষায় থাকেন। তাই আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন অনেকেই। নিজেরা বেঁচে ফিরলেও অনেকেরই প্রিয়জনেদের খোঁজ নেই এখনও। কেউ স্ত্রী-কে খুঁজছেন, কেউ আবার সন্তানদের। প্রশাসন তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে। তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণাও করা হয়েছে। সরকারি সূত্র বলছে, ১৯৭১ সালের পর হংকংয়ের ইতিহাসে জলপথে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা নজিরবিহীন। সে বার টাইফুনের কবলে পড়ে একটি ফেরি ডুবে যায়। তাতে মারা গিয়েছিলেন ৮৮ জন। |