উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ যাতে পালাতে না পারেন, তা সুনিশ্চিত করতে ব্রিটেন সরকারের দৈনিক খরচ হচ্ছে ১১ হাজার পাউন্ড।
ইকুয়েডর দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়া অ্যাসাঞ্জ চান না সুইডেনে তাঁকে প্রত্যর্পণ করা হোক। তাই যত দিন তিনি থাকবেন, তত দিনে তাঁর জন্য খরচ কোথায় গিয়ে ঠেকবে কেউ জানে না। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড এই দৈনিক খরচের হিসেব জানিয়েছে যা ছাপা হয়েছে একটি ব্রিটিশ সংবাদপত্রে। অ্যাসাঞ্জের পিছনে পুলিশি-প্রহরার বন্দোবস্তে ইতিমধ্যেই খরচ হয়ে গিয়েছে দশ লক্ষ পাউন্ড। গত জুন থেকে ইকুয়েডরের দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা। তবে দূতাবাসের বাইরে এক পা রাখলেই তাঁকে গ্রেফতারের নির্দেশ রয়েছে পুলিশের উপরে। |
পশ্চিম লন্ডনে নাইটসব্রিজের ওই দূতাবাসের বাইরে থেকে অ্যাসাঞ্জের উপরে নজরদারি চালাচ্ছেন অফিসাররা। মেট্রোপলিটান পুলিশের এই ব্যয়বহুল নজরদারি বন্ধ করার দাবি তুলেছেন অনেকে। লন্ডনের মেয়র বরিস জনসন জানিয়েছেন, ২০ জুন থেকে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুলিশের জন্য খরচ হয়ে গিয়েছে ৯ লক্ষ পাউন্ড। গত সপ্তাহেই নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জে ইকুয়েডরের বিদেশমন্ত্রী রিকার্ডো পিন্টোর সঙ্গে ব্রিটেনের বিদেশমন্ত্রী উইলিয়াম হাগের কথা হয়েছে। অ্যাসাঞ্জকে নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তই এখনও হয়নি বলে জানান উইলিয়াম।
রিকার্ডো উল্টে অ্যাসাঞ্জকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ব্রিটেন ছাড়ার অনুমতি না পেলে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতাকে অন্তত এক দশক ওই দূতাবাসেই কাটাতে হতে পারে। যদিও অ্যাসাঞ্জের পিছনে এই বিপুল খরচ নিয়ে ব্রিটেনেই বিভিন্ন স্তরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
দূতাবাসের অন্দরে কী ভাবে কাটাচ্ছেন অ্যাসাঞ্জ? লাল ইটের ম্যানসনের বাইরে সিঁড়ির কাছে এক জন পুলিশ। লিফটের কাছে আর এক জন। যাতে দৌড়ে ছাদে গিয়ে হেলিকপ্টারে উড়ে পালাতে না পারেন অ্যাসাঞ্জ। গোটা দূতাবাসের চারপাশে চার জন মেট্রোপলিটান অফিসার। আড়াই লক্ষ পাউন্ডের মোবাইল কম্যান্ড স্টেশন তৈরি হয়েছে দোরগোড়ায়। লন্ডনের প্রতিটি বরোর অফিসার, পুলিশের বিশেষ বিভাগ এবং ছদ্মবেশী স্কোয়াডকেও মজুত রাখা হয়েছে। অ্যাসাঞ্জ যে ঘরে আপাতত রয়েছেন, সেখানে মেঝেতে শুধু একটা ম্যাট্রেস পাতা। একটা বিশেষ নীল আলোর ল্যাম্প, যাতে ঘরের উপর দিকে তাকালে মনে হয় নীল আকাশ রয়েছে মাথায়। ল্যাপটপ তো আছেই। একটা অগোছালো বইয়ের তাক। একটা ছোট গোল টেবিল। সকলের সঙ্গে এক শৌচাগার ব্যবহার করেন। কূটনৈতিক অফিসারদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া।
তাঁর নিজের কথায়, “মনে হচ্ছে আমি একটা মহাকাশকেন্দ্রে রয়েছি। এটা জেলখানার মতো ভয়ঙ্কর নয়। ছোট্ট একটা জায়গায় কী ভাবে থাকতে হয়, শিখে গিয়েছি। আর এতে যেটা সব চেয়ে সুবিধে সেটা হচ্ছে, আমার কাজের বিষয়কে আমি রক্ষা করতে পারি।”
অ্যাসাঞ্জের দাবি, “দূতাবাসের প্রথম দু’টো মাস বেশ ভালই কেটেছিল। একটা বড় রাজনৈতিক লড়াই ছিল। একটা গতি ছিল। এক একটা দিন এখানে কী ভাবে কাটাব, সেটা ঠিক করাটাই চ্যালেঞ্জ ছিল।” সেই সময়টা পেরিয়ে এখন যে স্থিতাবস্থা রয়েছে, সেটা অ্যাসাঞ্জের পক্ষে উদ্বেগের। কারণ তিনি মনে করেন, “অবিচারটাই যখন নিয়মে পরিণত হয় তখন সেটা খুব ভয়ের।” রোজ ১৭ ঘণ্টা কাজ করেন। পুলিশের চলাফেরায় ঠিকমতো ঘুম হয় না তাঁর। অবসর সময়ে ল্যাপটপে ফিল্ম বা টিভি শো দেখেন। তবে দোকানে ঘুরে বেড়ানো, বন্ধুদের সঙ্গে খেতে যাওয়া, খোলা আকাশ-সমুদ্র-পাহাড়ের স্পর্শ না পেয়ে খারাপ লাগে। লাল ইটের বাড়ি ছেড়ে কবে সে সব আবার ফিরে পাবেন, জানা নেই উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতার। |