হাসপাতাল থেকে গতকালই ছাড়া পেয়েছেন কুলদীপ সিংহ ব্রার। আজ ব্রিটেনের এক টিভি চ্যানেলে ওই হামলা প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ভারতের প্রাক্তন সেনা অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ব্রার জানালেন, খলিস্তানি জঙ্গিরা তাঁকে মেরে ফেলার জন্য পরিকল্পনা করেই হামলা চালিয়েছিল। খলিস্তানি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অপারেশন ব্লু-স্টারের নেতৃত্বে থাকা ওই অফিসার জানিয়েছেন, হামলাকারীদের তিনি চিনতে পারেননি। তবে তিনি নিশ্চিত যে, তারা লুঠ করতে আসেনি। বরং তারা খলিস্তানি কম্যান্ডো ফোর্সের সদস্য বা শিখ উগ্রপন্থী হওয়া কিছু অসম্ভব নয় বলেই তাঁর মত। ব্রার আজ ভারতে ফিরছেন। |
রবিবার রাতে লন্ডনের কিউবেক স্ট্রিটের সামনে দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ৭৮ বছর বয়সী ব্রার। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী-ও। হঠাৎই কালো জ্যাকেট পরা দাড়িওয়ালা চার যুবক তাঁর উপর হামলা চালায় বলে ব্রারের দাবি। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, স্ত্রী হামলাকারীদের বাধা দিতে গেলে তাঁকে দেওয়ালে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়। এর পরে ছুরি নিয়ে তাঁর উপর হামলা চালায় ওই যুবকরা। ব্রার হামলাকারীদের সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষণ লড়াই করেন। এই সময়ে স্ত্রীর চিৎকারে আশপাশ থেকে লোক ছুটে আসায় ঘটনাটা বেশি দূর এগোতে পারেনি। লোকজন ওই চার হামলাকারীদের পিছনে ধাওয়া করলেও তারা অক্সফোর্ড স্ট্রিট ধরে পালিয়ে যায়। দুষ্কৃতীদের সঙ্গে লড়াইয়ের সময়ে ব্রারের গলায় আর ঘাড়ে আঘাত লাগে। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তবে আঘাত তেমন গুরুতর ছিল না বলে সোমবারই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
১৯৮৪ সালে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে লুকিয়ে থাকা খলিস্তানি জঙ্গিদের হটাতে অপারেশন ব্লু-স্টারের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ব্রার। তাঁর দাবি, তখন থেকেই খলিস্থানপন্থীদের রোষ নজরে আছেন তিনি। প্রায় প্রতিদিনই তাঁকে মেল করে বা চিঠি পাঠিয়ে খুনের হুমকি দেওয়া হত। এমনকী এ বারের এই হামলার পরে তাঁকে ‘পরের বার’ নিশ্চিত মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন তিনি। ব্রার বলেন, “প্রতি বছর ৬ জুন অপারেশন ব্লু-স্টার দিবস উপলক্ষে ইংল্যান্ডে চরমপন্থী শিখরা আমাকে খুন করার দাবিতে ব্যানার নিয়ে মিছিল বার করে।” তাই তাঁর উপরে এই হামলা খলিস্তানপন্থী শিখরা চালিয়েছিল বলেই তাঁর মত। যদিও হামলাকারীরা আদৌ শিখ কি না তা নিয়ে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড সন্দিহান। গোয়েন্দারা হামলাকারীদের সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় সে দিনের ঘটনার যে ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে, তা-ও পরীক্ষা করে দেখছেন গোয়েন্দারা।
হামলাকারী প্রসঙ্গে ব্রার জানিয়েছেন, এত বয়সেও কী করে চার জন যুবকের সঙ্গে তিনি একা লড়াই করলেন, তা তিনি এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না। “কয়েকটা মুহূর্ত মাত্র। কিন্তু মনে হচ্ছিল অনেক ক্ষণ ধরে লড়াইটা চলছে”, বললেন ব্রার। তবে ব্রার যে শুধু অপারেশন ব্লু-স্টারের নেতৃত্বেই ছিলেন তা নয়, ’৭১-এর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ লগ্নে পাক সেনাদের আত্মসমর্পণের সময়ে তিনিই প্রথম ভারতীয় সেনা যিনি ঢাকায় গিয়েছিলেন।
কিন্তু এ হেন গুরুত্বপূর্ণ এক প্রাক্তন সেনার উপর আক্রমণ নিয়ে একেবারে নিশ্চুপ ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তবে বিশেষ সূত্রের খবর, বিদেশ মন্ত্রক এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট পাওয়ার পরেই এ বিষয়ে মুখ খলবে তারা। ব্রারের জেড ক্যাটাগরি নিরাপত্তা থাকার কথা। কিন্তু বিদেশে গেলে সেখানেও তাঁর নিরাপত্তা পাওয়া উচিত কি না তা পরীক্ষা করার কথা। এ ক্ষেত্রে সেই বিষয়ে কোনও পর্যালোচনা হয়েছিল কি না তা-ও খতিয়ে দেখছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। যদিও ব্রার দাবি করেছেন, লন্ডনে তাঁকে কোনও নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি। এ দিকে বিজেপিও আজ ব্রারের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে সোচ্চার হয়েছে। বিজেপি মুখপাত্র নির্মলা সীতারামন বলেছেন, “ব্রারের নিরাপত্তাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না কংগ্রেস।” প্রসঙ্গত, অপারেশন ব্লু-স্টারের সঙ্গে যুক্ত সেনা অফিসারদের উপর হামলার ঘটনা কিছু নতুন নয়। তৎকালীন সেনা প্রধান জেনারেল এ এস বৈদ্য যিনি অপারেশন ব্লু-স্টারের পরিকল্পনা করেছিলেন, তাঁকে ১৯৮৬ সালে গুলি করে হত্যা করে কয়েক জন অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী। সে ক্ষেত্রে ভারতীয় সেনা বাহিনীর এমন এক জন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য যাঁকে কি না বারবার খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তাঁর নিরাপত্তা এত ঢিলেঢালা কেন, উঠছে সেই প্রশ্নই। |