এ বার পুজোয় ছ’টা নতুন জামা পেয়েছে প্রকৃতি। তবু মন জুড়ে কালো মেঘ। তার চাই ‘কেয়ার করি না’ জামা। যেটা প্রথম দিনই মায়ের সঙ্গে কেনাকাটার ফাঁকে দেখে রেখেছিল। বাধ্য হয়েই ভর দুপুরেই মেয়েকে নিয়ে দোকানে ছুটলেন প্রকৃতির মা, কাটোয়ার লেনিন সরণির বাসিন্দা পূরবী দত্ত।
প্রকৃতিই নয়, খুদেরা কেউই এ বার পুজোর কেনাকাটায় কোনও ‘কম্প্রোমাইজ’ করতে নারাজ। শুধু কি জামা-প্যান্ট! সঙ্গে চাই মানানসই জুতো, সাজগোজের সামগ্রী, বেল্ট, ব্যাগ আরও কত কী।
এ জন্য বাড়ির খুদেদের কিন্তু বেশ রেগেই গিয়েছেন কাটোয়ার বাসিন্দা, নিগন স্কুলের শিক্ষক মনোহর দাস। তাঁর কথায়, “মায়েদের সঙ্গে বাচ্চারাও বসে সিরিয়াল দেখছে। আর সেই দিকেই ঝুঁকছে।” বেশির ভাগ অভিভাবকরাই বলছেন, এখনকার বাচ্চারা দোকানে গিয়ে নিজে পছন্দ করে জামা-প্যান্ট কিনবে। এ ব্যাপারে যেন বড়দের ‘নো-এন্ট্রি’। |
অর্থ্যাৎ পুজোর ফ্যাশনের ব্যাপারে বড়দের এক তরফা ছড়ি ঘোরানো এ বার বোধ হয় বন্ধ হতে চলেছে। কচি গলায় খুদেরা এখন জানিয়ে দিচ্ছে, কোনটা তাদের চাই-ই। আর কোনটা তারা ছুঁয়েও দেখবে না। ভিড় ঠেলে দোকানে ঢুকে এ বার তারাই বেছে নেবে ‘ট্রেন্ডি’ পোশাক। স্কুলে বসেও তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনাও।
ছোট ছেলেরা এ বার আবার কার্টুনের দিকেই ঝুঁকছে বেশি। দাঁইহাটের সুভাষ রোডের বধূ অদিতি পোদ্দারের কথায়, “এখন বাচ্চা ছেলেদের কার্টুনের উপরেই ঝোঁক বেশি।” ছেলেকে নিয়ে বেশ কয়েকটা দোকান ঘোরার পরে ওর মনের মতো পোশাক পেলাম। ভিড় ঠেলে এতটা রাস্তা হাঁটতে ছেলেটার মুখে কোনও বিরক্তি দেখলাম না।”
কাটোয়া কাছারি রোডে একটি বিপণন কেন্দ্রের কর্ণধার লাল্টু শেখের বক্তব্য, “বাচ্চারাই এ বার দোকান ঘুরে পছন্দসই জিনিস খুঁজে নিচ্ছে। মানাচ্ছে কি না তাও দোকানেই খুঁটিয়ে দেখে নিচ্ছে তারা।” আর এক বস্ত্র বিপণীর পক্ষে মহাদেব সাহা দাবি করেন, কী পোশাক চাই, তা এখন শিশুরাই জানিয়ে দিচ্ছে মা-বাবাকে। এখন তো দোকানের ভিতরে শুধু খুদেদের জন্যই আলাদা কাউন্টার খুলতে হচ্ছে তাঁদের।
এ বার পুজোয় ছোট স্কার্ট, টপ, হট প্যান্ট, লং ফ্রক, লেগিন্স সেই সঙ্গে চেন দেওয়া কিংবা আলো দেওয়া জুতো পরেই মণ্ডপ কাঁপাবে খুদে ‘ক্যাটরিনা-করিনা’-র দল। ছোট ছেলেদের জন্য রয়েছে কার্টুন চরিত্রের উজ্জ্বল রঙের টি-শার্ট, কুর্তা, আর নানা রঙের ঘড়ি।
শুধু কি নিজের জন্য? মা-বাবা কী পড়বে তা নিয়েও এখন মতামত দিচ্ছে ওরা।
তাই ছোটদের ‘ছোট’ করে দেখার দিন কিন্তু শেষ। বড়রা সাবধান! |