বিষ-মদ খেয়ে ডুয়ার্সের নাগরাকাটা থানার বামনডাঙা চা বাগানের এক দম্পতি সহ ৪ জনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠলেও প্রথমে তা আমল দেয়নি পুলিশ-প্রশাসন। কিন্তু, মৃতদের একজনের পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করায় ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই ৪ জনের মধ্যে ২ জনের মৃত্যু হয় বাড়িতেই। তাঁদের দেহ বাড়ির লোকজন পুলিশ-প্রশাসনকে না-জানিয়েই কবর দেন। অন্য দুজনকে নাগরাকাটার শুল্কাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে সেখানে তাঁদের মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে একজনের দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়। অন্যজনের মৃত্যু হৃদরোগে হয়েছে বলে চিকিৎসক জানালে দেহটি বাড়ির লোকজন খবর দেন। এই অবস্থায় এলাকাবাসীর চাপের মুখে পড়ে সোমবার কবর খুঁড়ে ৩ জনের দেহ তুলে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ। মালবাজারের এসডিপিও অরিন্দম সরকার বলেন, “বিষ-মদে মৃত্যু হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে ৩টি দেহ তুলে ময়নাতদন্ত করানো হচ্ছে। পরে ভিসেরা পরীক্ষাও করানো হবে।” পাশাপাশি, বিষ-মদ বিক্রিতে জড়িত সন্দেহে ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। |
মালবাজারের মহকুমা শাসক নারায়ণ বিশ্বাস বলেন, “বিষমদ খেয়ে মৃত্যুর অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। তা খতিয়ে দেখতেই কবর থেকে মৃতদেহ তুলে ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” পুলিশ জানায়, গত ২৭ সে সেপ্টেম্বর রাতে ওই চা বাগানের টন্ডু ডিভিশনের আপার লাইন এলাকাতে একটি বাড়িতে মদ খেয়ে একই এলাকার চারজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই রাতেই মৃত্যু হয় এক দম্পতির। তাঁদের নাম সূর্য মালপাহাড়িয়া (৫৫), এবং লখনি মালপাহাড়িয়া (৫০)। বাড়ির লোকজন পরদিন তাঁদের দেহ কবর দেন। কিন্তু, মদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে, এই সন্দেহে ২৮ সেপ্টেম্বর নাগরাকাটার শুল্কাপাড়া ব্লক হাসপাতালে সাগর ওঁরাও (৪০) ও বিয়ানি ওঁরাও (৩৫) কে ভর্তি করানো হয়। ওই রাতে হাসপাতালে ভর্তি দুজনও মারা যান। কিন্তু বিয়ানি ওঁরাও হৃদরোগে মারা গিয়েছেন বলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়। ‘ডেথ সার্টিফিকেটে’ সেই কথা লেখা হয়। বিয়ানির দেহ ময়নাতদন্তের জন্যেও পাঠানো হয়নি। শুধু মৃত সাগর ওঁরাও এর দেহই ময়নাতদন্তের জন্যে পাঠানো হয়। ওই দিন অচৈতন্য অবস্থায় মনজিত লোহার নামের এক যুবকও হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাঁকে সোমবার ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। মনজিত বলেন, “২৮ তারিখ লখনি ও সূর্য মালপাহাড়িয়ার বাড়িতে গিয়ে সে দেখে যে তারা দুজন অচৈতন্য হয়ে পড়ে আছে। তাদের পাশে একটি বোতলে বেশ খানিকটা মদ রয়েছে। ওই মদ খেয়ে ফেলার পর আমার মাথা টলতে থাকে ও চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। পরে হাসপাতালে জ্ঞান ফেরে। মৃত সাগরের ছেলে মিঠুন জানান, নাগরাকাটায় বিষ-মদ বিক্রিতে কারা জড়িত তা খুঁজে বার করতে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এদিকে, সোমবার কবর খুঁড়ে যে তিনজনের দেহ তোলা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে বিয়ানি ওঁরাও-এর মৃত্যুর ‘হৃদরোগে’ হয়েছিল বলে শুল্কাপাড়া হাসপাতাল থেকে জানানো হয়। বিয়ানির দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানোর পরে শুল্কাপাড়ার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভজিত হাওলাদার অস্বস্তিতে পড়েছেন। তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। মালবাজার মহকুমার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলার অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনুপ দেব সিংহ বলেন, “এখন কোনও মন্তব্য করব না।” |