সচিব বদলিকে কেন্দ্র করে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ল রাজ্য সরকার।
সোমবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে মহাকরণে চিঠি পাঠিয়ে কমিশনের সচিব পদে একতরফা বদলির বিরোধিতা করেছেন। কমিশনের মতে, আগাম আলোচনা ছাড়াই কোনও অফিসারকে বদলি আইন বিরুদ্ধ। সরকার তা পুনর্বিবেচনা করুক। যদিও কমিশনের আপত্তি এ দিন ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় মহাকরণে পাল্টা তোপ দেগে বলেছেন, “সরকার চাইলে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইন মেনেই তাদের যে কোনও অফিসারকে বদলি করতে পারে। এ জন্য আগাম আলোচনার প্রয়োজন নেই। তাই কমিশনের আপত্তি অমূলক।” গত শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের যুগ্মসচিব তাপস চৌধুরীকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সচিব পদে বদলির নির্দেশ জারি করে রাজ্য সরকার। এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেই চিঠি দিয়েছেন মীরাদেবী। মহাকরণের খবর, এ দিন পর্যন্ত কমিশনের বর্তমান সচিব তাপস রায়ের বদলির আদেশ বেরোয়নি। রাজ্য প্রশাসনের একাংশের ধারণা, পঞ্চায়েত ভোটের আগেই সচিব বদল নিয়ে সরকারের সঙ্গে কমিশনের সরাসরি সংঘাত শুরু হল।
সরকারি সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে গত ৬ মাস ধরেই কমিশনের সঙ্গে সরকারের মতপার্থক্য চলছিল। মুখ্যমন্ত্রী এই নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের উপর রুষ্ট ছিলেন। সংবিধান স্বীকৃত এই সংস্থা ঠিক মতো কাজ করছে না বলে ঘনিষ্ঠ মহলে উষ্মাও প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। শেষ পর্যন্ত কমিশনের উপর নজরদারি চালাতেই তাঁর দফতরের যুগ্মসচিবকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সচিব পদে বদলি করা হয় বলে প্রশাসনের একটি অংশের মত। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অবশ্য ওই বদলির আদেশ মেনে নেননি। তিনি সরকারকে লিখেছেন, কমিশনের কোনও অফিসারকে বদলি করার আগে তাদের সঙ্গে আলোচনা করার কথা। আইনে সে কথা স্পষ্ট বলা আছে। তার পরেও যে ভাবে কমিশনের সচিব পদে বদলির আদেশ বেরিয়েছে, তা মানা যায় না। সরকার পুনর্বিবেচনা করুক।
এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যে কমিশনের সঙ্গে সংঘাতের পথেই যেতে চায়, সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট করেই দিয়েছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী। সুব্রতবাবু বলেন, “চিঠি আসতেই পারে। কিন্তু সরকার ভুল করেনি। কমিশনের কোন পদে কোন অফিসার যাবেন, তা সরকারই ঠিক করবে। আশা করব, এ নিয়ে অযথা ভুল বোঝাবুঝি হবে না।” সূত্রের খবর, ভোট এগোনো নিয়ে ৬ মাস আগেই পঞ্চায়েত দফতরের কাছে প্রস্তুতির ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলেন মীরাদেবী। তখন কিছু জানায়নি পঞ্চায়েত দফতর। ২১ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আনার কথা ঘোষণা করার পরে সুব্রতবাবুর দফতর নড়েচড়ে বসে। কমিশনের কাছে চিঠি পাঠিয়ে তারা পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আনার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সরকারের সেই প্রস্তাব এখনও মানেনি কমিশন। এ নিয়ে দু’পক্ষের টানাপোড়েনের মধ্যেই সচিবের বদলি নিয়ে প্রকাশ্যে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ল কমিশন-সরকার। |