সেট-টপ বক্স ব্যবহার বাধ্যতামূলক হওয়া নিয়ে কেন্দ্রের নির্দেশে আরও এক বার আপত্তি জানাল রাজ্য।
নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে দেশের চারটি মেট্রো এলাকায় প্রতিটি টেলিভিশনে সেট-টপ বক্স লাগানোর নির্দেশ জারি করেছে তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রক। ওই দিন থেকে কলকাতা শহর এলাকায় টেলিভিশনে ‘অ্যানালগ’ (সাধারণ কেব্ল সংযোগে) সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যাবে। সেট-টপ বক্সের মাধ্যমে চালু হবে ডিজিটাল সম্প্রচার। এই নির্দেশে আপত্তি জানিয়ে এক মাস আগেই রাজ্যের তরফে নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম চিঠি পাঠালেন কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী অম্বিকা সোনিকে।
বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সোমবার নয়াদিল্লির সমাবেশে তিনি বলেন, ‘‘গরিব মানুষের সেট-টপ বক্স কেনার সার্মথ্য নেই। কেন্দ্র তাঁদের বিনোদন বন্ধ করে দিতে চায়?” মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, গরিব কেব্ল অপারেটরদের ব্যবসাও ধাক্কা খাবে।
রাজ্যের বক্তব্য, সেট-টপ বক্সের উপযুক্ত জোগান না থাকায় অনেক গ্রাহকের কাছে এখনও যন্ত্রটি পৌঁছে দেওয়া যায়নি। ফলে ১ নভেম্বর সাধারণ কেব্ল পরিষেবা বন্ধ করে দিলে বহু মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেবে। তা থেকে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি পর্যন্ত দেখা দিতে পারে। তাই কেন্দ্রের নির্দেশ আপাতত স্থগিত রাখা উচিত। তবে যন্ত্র নিয়ে এ বার রাজ্যের বক্তব্য সম্পূর্ণ মানতে পারছে না কয়েকটি বড় ‘মাল্টি সিস্টেম অপারেটর’ (এমএসও) সংস্থা। আবার যন্ত্রের সমস্যা স্বীকার না-করলেও যন্ত্র ব্যবহারে গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতা ছড়ানো হয়নি বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রককেই দোষারোপ করছে অপারেটরদের সংগঠন।
প্রথমে এই সময়সীমা ছিল ৫ জুলাই। তার আগে কেন্দ্রকে ‘যুক্তি’ দিয়ে রাজ্য জানিয়েছিল, সেট-টপ বক্সের জোগান না থাকায় গ্রাহকদের ওই যন্ত্রটি সরবরাহ করতে পারেননি কেব্ল অপারেটরেরা। কিন্তু এ বারের পরিস্থিতি আর আগের মতো নয় বলে দাবি কেএমডিএ অঞ্চলের চারটি প্রধান এমএসও সংস্থার। তাদের বক্তব্য, যন্ত্র জোগানের থেকে বড় সমস্যা এ বার গ্রাহকদের সচেতনতা নিয়ে।
কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রক জনগণনার হিসেব উল্লেখ করে জানিয়েছে, কলকাতা মেট্রো এলাকায় ৩১ লক্ষের মতো বাড়ি রয়েছে। তার মধ্যে ৬১ শতাংশ বাড়িতে কেব্ল সংযোগ আছে। তবে এমএসও সংস্থাগুলির ধারণা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রক বাড়িপিছু একটি করে সংযোগ হিসেব করেছে। কিন্তু বাস্তবে এখন গড়ে একটি বাড়িতে অন্তত দু’টি করে সংযোগ থাকে। গ্রাহকদের অধিকাংশই দু’টি সেট-টপ বক্স লাগানোর ঝক্কি নিতে চাইছেন না। কেন্দ্রীয় নির্দেশ শেষ পর্যন্ত কঠোর ভাবে প্রয়োগ করা হয় কি না, তা দেখতে চাইছেন অনেকেই।
রাজ্যের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় নির্দেশ পালিত হওয়ার জন্য প্রতি স্তরে সচেতনতার প্রয়োজন। কিন্তু সচেতনতা ছড়াতে যথেষ্ট উদ্যোগী হয়নি কেন্দ্র। নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “এ সব না করেই কেন্দ্র নির্দেশ পালন করানোর হুমকি দিলে লোকে রাস্তায় নামবে। তার দায় কি কেন্দ্র নেবে?” একই কথা বলছে কেব্ল অপারেটরদের সংগঠন। অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল ব্যবস্থায় রূপান্তরের সব পর্বে নজরদারি চালানোর জন্য মন্ত্রী অম্বিকা সোনিকে অনুরোধ জানিয়েছিল অপারেটরদের সংগঠনগুলি। ‘আইডিয়াল কেব্ল অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক অলক শর্মা বলেন, “অগস্টে সিআইআই-এর বৈঠকে ট্রাইয়ের চেয়ারম্যান রাহুল খুল্লার, তথ্য সম্প্রচার সচিব উদয় বর্মণকেও বলা হয়, সচেতনতা বৃদ্ধির দায়িত্ব কেন্দ্রের নেওয়া দরকার। তা না করেই ব্ল্যাক আউট করলে প্রবল বিক্ষোভ দেখা দেবে। এতে রাজ্যের কোনও ভূমিকা নেই।” |