|
|
|
|
জোটের পুরসভার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন-জল্পনা পশ্চিমে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
কেন্দ্র থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেছে তৃণমূল। দলীয় মন্ত্রীরা পদত্যাগ করেছেন। রাজ্যেও কংগ্রেসের মন্ত্রীরা পদত্যাগ করেছেন। জোট নিয়ে শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। কংগ্রেস-তৃণমূল, দুই দলের নেতৃত্বই প্রকাশ্যে একে অপরের সমালোচনা করছেন। এই পরিস্থিতিতে জোটের পুরবোর্ডগুলির ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। চলছে নানা জল্পনা। পশ্চিম মেদিনীপুরের ৩টি পুরসভায় জোটের বোর্ড রয়েছে। ঘাটাল, রামজীবনপুর ও মেদিনীপুরে। মেদিনীপুর, রামজীবনপুরে পুরপ্রধান পদ তৃণমূলের দখলে রয়েছে। ঘাটালে পুরপ্রধান পদ কংগ্রেসের দখলে রয়েছে। জেলাস্তরেও জোট না রাখার সিদ্ধান্ত হলে এই ৩টি পুরসভায় রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে যেতে পারে।
এমন কোনও পরিস্থিতি কী তৈরি হতে পারে? জেলা কংগ্রেস সভাপতি স্বপন দুবে বলেন, “বিষয়টি নিয়ে নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করব। স্থানীয় স্তরে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।” দলেরই এক নেতার বক্তব্য, “নীতিগত প্রশ্নে আমরা তৃণমূলের সঙ্গে থাকতে পারি না। তবে এ ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতৃত্বের মতামতকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত।” অন্য দিকে, জেলা তৃণমূলের সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ মতো পদক্ষেপ করা হবে।” দলের এক নেতার কথায়, “এখনও রাজ্য থেকে কোনও নির্দেশ আসেনি। তবে সিপিএমের সুবিধা হবে, এমন কোনও কাজ তৃণমূল করবে না।”
পশ্চিম মেদিনীপুরে মোট ৮টি পুরসভা রয়েছে। এরমধ্যে ঘাটাল, রামজীবনপুর, মেদিনীপুর ও খড়্গপুর এই ৪টি পুরসভায় কংগ্রেস-তৃণমূলের মধ্যে ‘বোঝাপড়া’ ছিল। খড়্গপুরে অবশ্য তৃণমূলের পুরবোর্ডকে বাইরে থেকে সমর্থন করেছিল কংগ্রেস। চলতি বছরের শুরুতে সেই সমর্থন প্রত্যাহার করা হয়। অগষ্টে বোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। খড়্গপুরে এই দুই দলের মধ্যে ‘মধুর’ সম্পর্ক কখনই ছিল না। তবে বাকি ৩টি পুরসভায় জোটেরই বোর্ড রয়েছে।
মেদিনীপুরে পুরপ্রধান পদে রয়েছেন তৃণমূলের প্রণব বসু। উপ-পুরপ্রধান কংগ্রেসের এরশাদ আলি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এখানে কংগ্রেস-তৃণমূলের মধ্যে জোট হয়নি। দুই দল পৃথক ভাবেই লড়াই করে। নির্বাচনের পর জোট গড়ে পুরসভা দখল করা হয়েছে। ওই নির্বাচনে তৃণমূল পেয়েছিল ১০টি আসন, কংগ্রেস ৪টি, সিপিএম ৭টি, বিকাশ পরিষদ পেয়েছিল ২টি আসন। বাকি ১টি আসনে জেতেন নির্দল প্রার্থী। সদর শহরে বরাবরই কংগ্রেস- তৃণমূলের প্রভাব বেশি। গত বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে তা আরও একবার স্পষ্ট হয়েছে। কারন, ওই নির্বাচনের নিরিখে শহরের ২৪ টি আসনেই এগিয়ে রয়েছে জোট। প্রফুল্ল শাসমল, ভানুরতন গুঁই ও দেবী চক্রবর্তীর মৃত্যুতে এখন ৩ টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর- শূন্য। ভানুরতণবাবু ও দেবীদেবী তৃণমূলের প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রফুল্লবাবু সিপিএমের প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। আগামী বছরই মেদিনীপুরে নির্বাচন রয়েছে। পরিস্থিতি দেখে কংগ্রেস- তৃণমূলের একাংশ নেতৃত্ব এখনই নিজেদের ‘সম্পর্ক’ নষ্ট করতে নারাজ।
ঘাটালে পুরপ্রধান পদে রয়েছেন কংগ্রেসের জগন্নাথ গোস্বামী। উপ-পুরপ্রধান পদে তৃণমূলের উদয়শঙ্কর সিংহরায়। ২০১০ সালের নির্বাচনে এখানে কংগ্রেস পেয়েছিল ৫টি আসন, তৃণমূল ৪টি ও সিপিএম ৮টি। পরে সিপিএমের দুই কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন। ফলে তৃণমূলের আসন সংখ্যা এখন ৬টি। অন্য দিকে, রামজীবনপুরে পুরপ্রধান পদে রয়েছেন তৃণমূলের শিবরাম দাস। উপপুরপ্রধান কংগ্রেসের সুজিত পাঁজা। ২০১০ সালের নির্বাচনে এখানে তৃণমূল পেয়েছিল ৫ টি আসন। কংগ্রেস ৩ টি, সিপিএম ১টি ও বিজেপি ২টি। তৃণমূল যদি ঘাটালের বোর্ড থেকে সরে যায়, সে ক্ষেত্রে কংগ্রেসও রামজীবনপুর, মেদিনীপুরের পুরবোর্ড থেকে সরে আসবে বলেই দলেরই এক সূত্রে খবর। তবে দুই দলের জেলা নেতৃত্বই এ ক্ষেত্রে রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্যের বেশ কিছু পুরসভাতেই একই পরিস্থিতি রয়েছে। ফলে রাজ্য থেকে যে ভাবে নির্দেশ আসবে, সে ভাবেই পদক্ষেপ করা হবে। |
|
|
|
|
|