|
|
|
|
কাপ-জয়ের মধুচন্দ্রিমা শেষ
মর্গ্যান মজে মিশন আই লিগে |
রতন চক্রবর্তী • শিলিগুড়ি |
টোলগে ওজবে কি আপনাকে কনগ্র্যাচুলেট করে ফোন করেছেন? বা কোনও এসএমএস?
ভ্রু কুঁচকোলেন ট্রেভর জেমস মর্গ্যান। তার পর কিছুটা রাগত ভাবেই বললেন, “ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে যাওয়া অন্তত পাঁচ ফুটবলার ফোন বা এসএমএস করেছে ফাইনালের পর। কিন্তু কারা করেছে, বলব না। একেবারেই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। বাইরে আনতে চাই না।”
ফেড কাপে এডে চিডি চার ম্যাচে পাঁচটা গোল করেছেন। টোলগের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল স্ট্রাইকারের তুলনা শুরু হয়ে গিয়েছে। আপনার কি মনে হয় দলে টোলগের অভাব মিটেছে?
এ বার আরও আক্রমণাত্মক লাল-হলুদের ব্রিটিশ কোচ। “চিডি এক রকম খেলে। টোলগে আর এক রকম। ওদের মধ্যে কেন বারবার তুলনা হচ্ছে বুঝছি না! এ বার এটায় ফুলস্টপ ফেলুন প্লিজ। অনেক হয়েছে,” বলে দেন ফেড কাপে রেকর্ড গড়া বিদেশি কোচ।
হোটেলের লবিতে ভারতসেরার ট্রফিটা রাখা রয়েছে যত্ন করে। চিডি, মেহতাব, পেন, সৌমিক, অভিজিৎরা যত বার পাশ দিয়ে যাচ্ছেন, তত বারই ছুঁয়ে যাচ্ছেন রবিবার কাঞ্চনজঙ্ঘায় জেতা কাপটাকে। বারবার তাঁদের ধরে এনে ছবি তোলা হচ্ছে। দলে দলে সমর্থক আসছেন, কাপ জড়িয়ে ছবি তুলছেন। কিন্তু সে দিকে নজর নেই কাপজয়ী কোচের। দূরে একটা আই-প্যাড নিয়ে সোফায় গা এলিয়ে বসে নিজের কাজ করে চলেছেন মর্গ্যান। মেল দেখছেন। হংকংয়ে ইস্টবেঙ্গল ফ্যান ক্লাব গড়েছেন তাঁর বন্ধুরা। সামনের সপ্তাহে ট্রফি জয় সেলিব্রেট করার জন্য আসতে তাঁকে মেল করেছেন। দ্রুত মেল-এর জবাব দিলেন, ‘সামনেই আই লিগ। এখন সময় নেই।” কাপের সামনে একবারই দাঁড়ালেন তিনি, রাজডাঙ্গা থেকে আসা ইস্টবেঙ্গল অ্যাকাডেমির ছেলেরা যখন তাদের সঙ্গে ছবি তোলার অনুরোধ করলেন। তাঁদের দেওয়া পুষ্পস্তবকটা নিয়ে রেখে দিলেন কাপের উপর। রবিবার ভোররাত পর্যন্ত জয় উপভোগ করেছেন ফুটবলারদের নিয়ে। সোমবার সকালে বারবার বলছিলেন, “এখন একটু বিশ্রাম নিতে চাই। পরশুই সল্টলেকে প্র্যাক্টিসে নামতে হবে। আই লিগের জন্য। হাতে আর সময় নেই।”
কিন্তু দেশের সেরা ক্লাবের কোচ। কলকাতা ফুটবলের দ্রোণাচার্য কতক্ষণ দূরে থাকতে পারেন? বসে পড়তেই হল উপচে পড়া মিডিয়ার সামনে। বললেন, “আই লিগ জেতা নিয়ে এখন ভাবছি না। সামনের স্পোর্টিং ক্লুব ম্যাচ জেতাই প্রথম লক্ষ্য। এটা ন’দিনে পাঁচটা ম্যাচ খেলা নয়। লম্বা লিগ। অন্য লড়াই।” লবির এমন একটা জায়গায় বসেছিলেন মর্গ্যান, যাতে ফুটবলাররা ব্রেকফাস্ট টেবিলে যাওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে দেখা করে যেতে পারেন। জানিয়ে দিলেন, এএফসি কাপ নয়, তাঁর কাছে প্রাধান্য পাবে আই লিগ-ই। এমনকী কলকাতা লিগও। “সত্যি বলতে, এএফসি কাপে আমাদের আশা নেই। গ্রুপে সেরা হতে পারলেই অনেক। কিন্তু আই লিগ জিততে পারি। এ বার ছ’টা টিম দাবিদার আই লিগের। ফেড কাপ সেমিফাইনালে ওঠা চারটে টিম, মোহনবাগান আর প্রয়াগ ইউনাইটেড। কলকাতা লিগও আমার কাছে গুরুত্ব পাবে। এএফসি কাপ মার্চ-এপ্রিলে, তখন দেখি কী পরিস্থিতি থাকে।”
ফেড কাপ দু’বার জিতলেন। কিন্তু আই লিগ এখনও অধরা। “ইস্টবেঙ্গলের দায়িত্ব নেওয়ার আগে তো আমার ক্লাব অবনমন বাঁচানোর জন্য লড়ত। সেখান থেকে গত দু’বার অল্পের জন্য আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। রানার্স হয়েছি। উন্নতি নয়?” পাল্টা প্রশ্ন তুলে দিলেন মর্গ্যান। বললেন, “ডেম্পো ব্যালান্সড দল। গতকাল এমন একটা সময় ওরা ৩-২ করে দেয় যে আমি ঘড়ি দেখছিলাম। টেনশন হচ্ছিল। তখন মনে হয় মিনিট পাঁচ-ছয় বাকি ছিল। ওরা কিন্তু দশ মিনিট সময় পেলে গোল শোধ করে দিতেও পারত। ঈশ্বর বাঁচিয়ে দিয়েছেন।”
বিমানবন্দরে যাওয়ার টিমবাসে ওঠার জন্য ফুটবলাররা একে একে হোটেলের লবিতে জড়ো হচ্ছিলেন। সবচেয়ে বেশি হইচই ছিল মেহতাবকে নিয়ে। “যখন চোট পেয়ে বসেছিলাম তখন কোচ প্রতি দিন সাহস দিতেন। আজ আমার ভাল খেলার পিছনে ওঁরই সব অবদান।” মেহতাব নিজের সাফল্যের পিছনে কোচকে সব কৃতিত্ব দিলেও বারুইপুরের ছেলের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সকে কোচ দেখছেন অন্য ভাবে। “মেহতাব যেখানে খেলতে ভালবাসে ওকে সেখানেই ব্যবহার করেছি। মেহতাবও নিজের সেরাটা দিয়েছে।” গোলকিপার কোচ অতনু ভট্টাচার্য আবার মেহতাবের মধ্যে সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের ছায়া দেখছেন। “ঠিক আমাদের সময়ের সুদীপের মতো জেদ। স্ন্যাচ করে বল কেড়ে নেওয়াটা এক রকম। বল নিয়ে উঠে পাস করাটাও।” কোচ আই লিগ পাওয়া নিয়ে আশ্বাস না দিলেও ফেড কাপে লাল-হলুদের সেরা পারফর্মার মেহতাব বলছেন, “ঠিকঠাক খেললে আই লিগও পাব। আমাদের রিজার্ভ বেঞ্চ গতবারের চেয়ে অনেক ভাল। লম্বা লিগে যেটা দরকার। সঞ্জু, ডিকারা রিজার্ভ বেঞ্চে বসছে। কোচ মাঝেমধ্যেই বলেন, সবাই সমান। কাকে ছেড়ে যে কাকে নামাই!”
চিডিকে পছন্দ করে নিয়ে এসেছেন মর্গ্যানই। প্রথম টুর্নামেন্টেই সর্বোচ্চ গোলদাতা। শান্ত স্বভাবের নাইজিরিয়ান বললেন, “স্ট্রাইকারদের প্রতি ম্যাচই চ্যালেঞ্জ নিয়ে নামতে হয়। কলকাতায় ফিরেই ফেড কাপ ভুলে যাব। আই লিগ নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির হবে। সেখানেও সাফল্য চাই।” মোহনবাগান থেকে সালগাওকরে যাওয়ার সময়ই তো ইস্টবেঙ্গল আপনাকে চেয়েছিল। তখন এলেন না কেন? “মোহনবাগান থেকে সরাসরি ইস্টবেঙ্গলে গেলে খুব খারাপ দেখাত। বিতর্ক তৈরি হত। সেটা চাইনি,” হাসতে হাসতে বলে দিলেন চিডি।
শেষের মন্তব্যটা কি টোলগেকে উদ্দেশ্য করে? হতেই পারে। |
|
|
|
|
|