|
|
|
|
চাণক্য শ্লোক |
যারা গড়াপেটা বলছিল তারা নিশ্চয়ই সব জবাব পেয়ে গেল |
কোচিং জীবনের সেরা রাত নিয়ে শুধু আনন্দবাজারের জন্য লিখলেন
ট্রেভর
জেমস মর্গ্যান |
১২০ মিনিটের ম্যাচ শেষে হোটেলে ফিরে বিয়ারে চুমুক! আনন্দে ডুবেই গিয়েছিলাম যেন।
স্টেডিয়াম থেকে ফেরার অনেক পর, অনেক রাতে শেষ হল আমাদের সেলিব্রেশন। গোয়ান ফিস কারি আর খাওয়া হয়নি। আমরা সবাই ঠিক করেছি গোয়ায় আই লিগ খেলতে গিয়ে ওটা খাব।
উফ! রবিবারের রাতটাই ছিল আমার কোচিং কেরিয়ারের সেরা। আর শুধু নিজের কথা বলছি কেন? আমার দলের সব ফুটবলার কি খুব সহজে এই রাতটা ভুলতে পারবে? জেতার পর আনন্দে এতটাই মত্ত ছিলাম আমরা যে, মাঠ থেকে ফিরে সবার আগে দৌড়ই হোটেলের বার-এ। আরে বাবা, ভারত চ্যাম্পিয়ন বলে কথা! গোয়ান ফিস কারি নাই বা হল, পার্টিতে কোনও ছেদ পড়েনি। |
|
আইপ্যাডে ডুবে থাকা মর্গ্যানের। |
এ সবের পরেও রাতে আমার ঘরে দু’-একজন ফুটবলার চলে এল। ম্যাচ নিয়ে টুকটাক কথাবার্তা হল। হাসিঠাট্টাও হল খুব। তার পর কয়েকটা বিয়ার চড়িয়ে তবে শেষ হল রবিবারের রাত। তখন ভোর হতে আর বাকি কতটুকু? ইস্টবেঙ্গল টিমের সাফল্যের আসল কারণ হল এই বন্ধুত্বটাই। দীর্ঘ দিন একসঙ্গে থাকলে একটা দারুণ বোঝাপড়া তৈরি হয়ে যায়। মিলেমিশে থাকার জন্যই বিশ্বাস জন্মে যায় একে অন্যের ওপর।
এখনকার ফুটবলে এত বেশি চাপ থাকে প্লেয়ারদের ওপর যে, ম্যাচের আগে এবং পরে রিল্যাক্সড থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। পুরো ফেড কাপ জুড়ে আমার দলের ছেলেরা কিন্তু নিজের নিজের মতো করে চাপমুক্ত থাকার রাস্তা তৈরি করে নিয়েছিল। কেউ শপিং করতে বেরিয়েছে। কেউ সিনেমা দেখে এসেছে। কেউ বা শুধু কিছুটা হেঁটে এসেছে। আমি চেয়েছিলাম ওরা নিজেদের এ ভাবেই উপভোগ করুক। আসল কথাটা হল, নিজের ওপর তৈরি হওয়া চাপটাকে দূরে হঠাও। |
|
শিলিগুড়িতে ইস্টবেঙ্গল কোচ। |
যত তুমি নিজেকে চাপমুক্ত করবে, তত তাড়াতাড়ি তোমার শরীর-মনের ক্লান্তি দূর হয়ে পরের ম্যাচের জন্য তৈরি হতে পারবে। আমি সব সময় মনে করি আধুনিক বিশ্ব ফুটবলে ফিটনেসের থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ‘রিকভারি’। হালফিলের সফল দলগুলোকে দেখলেই সেটা বুঝতে পারবেন। যে টিম যত তাড়াতাড়ি রিকভার করে, সে তত সফল! এই টুর্নামেন্টেই আমাকে তিন দিনের মধ্যে এমন দু’টো ম্যাচ খেলতে হল, যেগুলো অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত গড়াল। তা সত্ত্বেও ছেলেরা যে ভাল পারফর্ম করতে পারল তার কারণ, সুইমিং পুলে সময় কাটানো। আর জিমে হালকা ব্যায়াম করে নিজেকে তাজা রাখতে পারা। আধুনিক ফুটবলে এমনকী কোচকেও তাজা থাকতে হয়। আমার রিল্যাক্সড থাকার উপায় হচ্ছে ক্রিপটিক ক্রসওয়ার্ড নিয়ে সময় কাটানো আর আইপ্যাডে গান শোনা। আর আমার পছন্দের গানের তালিকায় কিন্তু বিটল্স থেকে আধুনিকসব গানই আছে। কখনও টিভিতে অন্য খেলার চ্যানেলগুলো দেখলেও হালকা লাগে।
ফেড কাপ জিতে ওঠার পর, এই আনন্দের মধ্যেও আমার কিছু বলার আছে। কয়েক দিন আগে আমার টিমের বিরুদ্ধে বলাবলি হল, আমরা নাকি ম্যাচ গড়াপেটা করেছি। যারা এ সব বলছিল আমি তাদের শুধু বলতে চাই, আমার দলের ছেলেরা নিশ্চয় ফুটবল খেলেই তাদের এই অভিযোগের সব জবাব দিয়ে দিয়েছে। আর একটা কথা শুনছিলাম, ইস্টবেঙ্গলের ফেড কাপ জেতায় গোয়ার আধিপত্যে একটা বাধা পড়ল। সত্যি বলছি, এটা গোয়া বনাম বাংলার লড়াই কি না তা নিয়ে মন্তব্য করার সঠিক লোক আমি নই। শুধু জানি, আমি ইস্টবেঙ্গলের হয়ে কাজ করি। আর আমার কাজ হল আমার টিমকে জেতানো।
আশা করব, সেই জয়েরই যে ছবিটা রবিবার রাতে আমরা এঁকেছি, সেটা অনেক দিন পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গল ক্লাব এবং তার সমর্থকদের মনে জমা থাকবে।
|
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
|
|
|
|
|