|
|
|
|
সোনার লঙ্কায় |
প্রেমদাসায় আজ সুলতান ফকির হয়ে
যেতে পারে, ফকির হতে পারে সুলতান |
গৌতম ভট্টাচার্য • কলম্বো |
মোহনবাগান ক্লাবে ধীরেন দে-কে যাঁরা কাছ থেকে চিনতেন, তাঁদের জানা ছিল ওঁর একটা অভ্যেসের কথা! টেনশনের কোনও ম্যাচ-ট্যাচ থাকলে কখনও তিনি ক্লাব তাঁবুর ধারকাছ মাড়াতেন না। মোহনবাগান মাঠে টিম ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে খেলছে আর ধীরেন দে গ্যালারিতে বসাএমন ছবি তাই কেউ কখনও পায়নি। শোনা যায় তিনি নাকি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আশেপাশে গাড়ি নিয়ে চক্কর মারতেন। মোহনবাগান গোল দিয়েছে বা জিতে গেছে জানলে তবে ঢুকতেন ক্লাব তাঁবুতে। রোববার ভারত-পাক ম্যাচে এন শ্রীনিবাসনের দেখা গেল সেই অবস্থা! ভারতীয় ক্রিকেটের ধীরেন দে দেখাল তাঁকে।
পাকিস্তান মাত্র ১২৮ অলআউট হয়ে যাওয়ার পরেও টেনশনে শ্রীনিবাসন প্রেমদাসা ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। যদি এই রানটাও না ওঠে? ভারতীয় শিবির খুঁজছে কোথায় গেলেনকোথায় গেলেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট! সচরাচর তো এ ভাবে চলে যান না। মধ্যরাতের পর শ্রীনিবাসনের স্বস্তির অভিনন্দনসূচক ফোন আসে টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে, সবাইকে বলে দেবেদারুণ জয়! রাতে টিম হোটেলের লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে সাপোর্ট স্টাফদের একজন যখন কথাটা বলছেন, তাঁর গলায় রীতিমতো বিস্ময়ের সুর। ‘মিস্টার শ্রীনিবাসন’-কে এ ভাবে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে কেউ কখনও দেখেনি। মোহিন্দর অমরনাথ বিতর্ক আর কলম্বোতে টিমের খারাপ খেলা তাঁকে যে কত চাপে রেখেছিল বোঝাই যাচ্ছে।
টিম হোটেলে অবশ্য রাতে মনে হচ্ছিল শ্রীনিবাসন আছেন। আর তিনিই বোধহয় মেগা পার্টিটা দিচ্ছেন! নীচের বার, লাউঞ্জ, বিজনেস সেন্টার সর্বত্র নীল জার্সি পরা সমর্থক। আর কী চিলচিৎকার। গান। রাত সওয়া দু’টো অবধি চলল। শুনলাম রায়না-কোহলিদের কিছু বন্ধুবান্ধব দেশ থেকে খেলা দেখতে এসেছিলেন। তাঁরাই আচমকা ডাকা পার্টির আয়োজক। মাঠ থেকে সদ্য ফেরা টিম ইন্ডিয়াও খানিকক্ষণের জন্য সেখানে গেল-টেল। |
|
সেমিফাইনালের দৌড় শুরু? |
কাছাকাছি সময়ে পাকিস্তান ড্রেসিংরুমে অশান্তি আর কথা কাটাকাটি। যার কেন্দ্রবিন্দুতে পাক অধিনায়ক মহম্মদ হাফিজ। টস জিতে কেন তিনি ব্যাট করলেন? সতীর্থদেরই কারও কারও প্রশ্ন। এত বড় ম্যাচে টস জিতে কী করা হবে সেটা টিমের ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ ঠিক করে। ভারত-পাক ম্যাচে টস জিতে ‘আমি’ ঠিক করলাম হয় না। ‘আমরা’ ঠিক করলাম হয়। হাফিজ কি তার বাইরে চলে গেলেন? কোচের কি অনুমোদন ছিল? ম্যাচ জেতানো উমর আকমলকে সাত নম্বরে নামালেন কেন? কেন সইদ আজমলকে ভারত ভয় পায় জেনেও তাঁকে লজ্জাবতী লতার মতো এতক্ষণ পর্যন্ত আক্রমণে আনেননি? টস জিতেও ইনিংসের ১১৯ বলের মধ্যে ৫৯ ডট বল যে খেলা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা কী? এ তো নারকীয় পরিসংখ্যান।
লাহৌর, করাচি আর ইসলামাবাদে যারা টিমের বিরুদ্ধে এ দিন শোভাযাত্রা বার করেছিল। তারা প্রশ্নের উত্তর-টুত্তর চায় না। তাদের কাছে মীমাংসা হয়ে গিয়েছে রহস্যের। হিন্দুস্থানের কাছে হেরেছ। এই টিম নিপাত যাক। সিম্পল! আর ভারত? দিল্লির এক নামী ক্রিকেটলিখিয়েকে এ দিন টিম হোটেলে ঘুরঘুর করতে দেখলাম। বললেন, “বার করার চেষ্টা করছি পোড়ো টিম ইন্ডিয়া চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তান ম্যাচে এমন রূপান্তরিত হয়ে গেল কী করে? করতে পারলে দারুণ স্টোরি হবে।”
সমস্যা হল সোমবার একটা পক্ষ জেতার আনন্দে ভরপুর থাকতে পারে। আর একটা পক্ষের জন্য বিক্ষোভকারীরা জড়ো হতে পারে। সেটা চব্বিশ ঘণ্টা পরের সময়।
আটচল্লিশ ঘণ্টা পরে কী হবে তার কিন্তু কোনও গ্যারান্টি নেই। নতুন দিন। নতুন সময়। হয়তো বা প্রতিযোগিতার সম্পূর্ণ নতুন পরিপ্রেক্ষিত।
১) পাকিস্তান যদি অস্ট্রেলিয়াকে বড় রানে হারিয়ে দেয় আর ভারত অল্প ব্যবধানে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। তখন ভারত-পাক দু’দল উঠে যাবে।
২) ভারত যদি খুব বিশ্রী ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারে তা হলে পাকিস্তান প্রথম ম্যাচ হারলেও নেট রান রেটের হিসেবে দ্বিতীয় দল হয়ে চলে যাবে। বা দক্ষিণ আফ্রিকাও উঠে যেতে পারে। তখন শ্রীনিবাসনের টেনশনের কিছু থাকবে না। ট্র্যাভেল এজেন্টকে শুধু বলে দিতে হবে কত তাড়াতাড়ি দেশে ফেরার এতগুলো টিকিট কনফার্ম করা যায়!
৩) ভারত অল্প ব্যবধানে হারাল কার্স্টেন-আপটনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষিণ আফ্রিকাকে। চলে গেল অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সেমিফাইনালে।
প্রেমদাসায় একটা অদ্ভুত দিন মঙ্গলবার। গাঁধীগিরির কোনও সুযোগ নেই। এমনকী টুর্নামেন্টে অপরাজেয় অস্ট্রেলিয়ারও না। শেন ওয়াটসনের ব্যাট যদি এক দিন না চলে! কে বাঁচাবে? তাদের বিতর্কিত ক্যাপ্টেন জর্জ বেলি তো এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে দশ বলও খেলেননি।
কার্স্টেন আর আপটনকে জিজ্ঞেস করা হল ভারতীয় ক্রিকেট সংসারের সব খুঁটিনাটি আপনারা দু’জন জানেন! এটা কি অন্যায় পেশাদার সুযোগ নয়? কার্স্টেন বললেন, “যত বাজে কথা। আজকের দিনে কোন প্লেয়ার সম্পর্কে ইনফর্মেশন ড্রেসিংরুমে ঢুকে জানতে হয় বলুন তো? সবাই সব কিছু জানে। বাড়তি কোনও সুবিধে এতে নেই।”
কার্স্টেনের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হোক বা না, ভারতের ম্যাচটা পরে থাকায় ধোনিদের অসম্ভব সুবিধে। এমন দিন যেখানে রাজা হয়ে যেতে পারে ফকির, আর ফকির রাজা জাস্ট সাত ঘণ্টার মধ্যে। সে দিন পরে ম্যাচ থাকা মানে হাতে সব মেলানোর অঙ্ক থাকা!
গোটা টুর্নামেন্ট জুড়েই ভারত খেলল সন্ধে সাড়ে সাতটার ম্যাচ। কারণ ভারতের বিশাল টিভি দর্শক থেকে আইসিসির স্পনসরদের, যাদের বেশির ভাগই ভারতীয়, তাদের বিপণনের সেরা সুযোগ। সুতরাং শোয়েব মালিক যেমন ভারতের জামাইরাজ। ভারতীয় ক্রিকেট টিম তেমনই বিশ্বপর্যায়ের টুর্নামেন্টে সব সময় আইসিসি-র জামাই রাজ। |
শেষ চারের অঙ্ক |
• অস্ট্রেলিয়া পাকিস্তানকে হারাল, ভারত দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাল। দু’নম্বর দল হিসেবে সেমিফাইনালে ধোনিরা।
• পাকিস্তান অস্ট্রেলিয়াকে হারাল। সে ক্ষেত্রে ধোনিদের বড় ব্যবধানে হারাতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
• দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরেও শেষ চারে ওঠার সুযোগ থাকবে ভারতের। তবে বড় ব্যবধানে হারা চলবে না। তার আগে অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাকিস্তানকে বড় ব্যবধানে হারতে হবে। |
|
|
|
|
|
|