|
|
|
|
দুই কোচের পৃথিবী |
‘পাকিস্তানের আগের রাতে ও-ই ভরসা দিল ঠিক খেলে দেব’ |
আচরেকরের পরের প্রজন্মে তিনিই হতে যাচ্ছেন সবচেয়ে আলোচিত ভারতীয় কোচ।
রাজকুমার শর্মা। যিনি গত পনেরো বছর ধরে তৈরি করেছেন ভারতের নতুন ব্যাটিং আইকন
বিরাট কোহলিকে। সোমবার রাতে কলম্বো থেকে ফোনে কোহলির কোচকে ধরলেন
গৌতম ভট্টাচার্য... |
....রাত্তিরে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এই আপনার মুখে শুনছি গ্যারি কার্স্টেন আজ কলম্বোয় বলেছে যে, বিশ্ব ক্রিকেটে বিরাট এমন একজন ব্যাটসম্যান যে একেবারে স্বতন্ত্র জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। কথাটা শুনে তৃপ্তিতে আমার মন ভরে গেল। একজন শিক্ষকের কাছে তাঁর ছাত্রের এর চেয়ে বড় প্রশংসা আর কী হতে পারে?
পনেরো বছর ও আমার সঙ্গে আছে। বলতে পারেন তার পর থেকে ওকে চোখের আড়াল করি না। আমার নিজের ছেলের মতো। কলম্বো থেকেও প্রতি দিন ফোনে কথা হয়। এই তো আজকেও সন্ধেবেলা ফোন করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে কী ভাবে ব্যাট করা উচিত সেটা নিয়ে। অনেকক্ষণ আলোচনাও করলাম। প্রত্যেকটা ম্যাচের আগে আমরা কথা বলি। একবার ভেবেছিলাম কলম্বো উড়েই যাই। তার পর ভয় হল আমি গিয়ে যদি ওর রানটা কমে যায় কোনও ভাবে? তখন তো আর নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না। |
|
পাকিস্তান ম্যাচে কোহলি-মার। |
পনেরো বছর আগে ওকে দেখামাত্র আমার মনে হয়েছিল এই ছেলেটা আলাদা। ওর বয়সী ছেলেরা ওকে আউটই করতে পারত না। যে ভাবে ওদের বলে খেলত, তাতে মনে হত এ নিশ্চয়ই বয়সে বড়। তখন থেকেই দায়িত্ব নেওয়ার একটা ঝোঁক ওর মধ্যে। আর চ্যালেঞ্জ ভালবাসত। চাইত ওর চেয়ে বেশি বয়সের বোলারদের খেলতে। মাঝখানে একটা সময় এসেছিল যখন কাগজেটাগজে বিরাট নিয়ে, ওর জীবনযাত্রা নিয়ে লেখালেখি হচ্ছিল, যার অনেকটাই সত্যি নয়। সামান্য কিছুটা সত্যি। তখন আমি ওর সঙ্গে কথা বলি। ওকে বোঝাই যে বড় ক্রিকেটার হতে গেলে জীবনে নিয়ন্ত্রণে আনতেই হবে। এটাও বলি যে কাগজেপত্রে এই যে বিরাট কোহলি আর রাজকুমার শর্মার নাম বেরোচ্ছে, কেন বেরোচ্ছে বলো তো? বেরোচ্ছে ক্রিকেটের জন্য। ক্রিকেটটাই আসল। আমি বিরাটকে বলি দিল্লি শহরে তোমার চেয়ে অনেক স্মার্ট ছেলে আছে। অনেক ফ্যাশনেবল ছেলেও আছে। তা হলে তোমার দিকে লোকের নজর কেন? কারণ ক্রিকেটের জন্য। ক্রিকেটকে কখনও অবহেলা কোরো না।
কোচ রাজকুমার। |
আমাকে মাঝে মধ্যেই জিজ্ঞেস করা হয় আচরেকর যে ভাবে সচিনকে তৈরি করেছেন। তার সঙ্গে বিরাট যে ভাবে তৈরি হয়েছে তার কোনও মিল আছে কি না? আমি জবাব দিই আচরেকর অনেক সিনিয়র। শ্রদ্ধেয় মানুষ। ওঁর কোচিং পদ্ধতি নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। আমি আমার মতো। বিরাটকে পনোরো বছর ধরে আমি ওয়ান ইজ টু ওয়ান কোচিং করে আসছি। আমিই ওর কোচ, আমিই ওর মনোবিদ, আমিই ওর লাইফস্টাইল এক্সপার্ট। ক্যাম্পে ভিডিও কী দেখবে সেটাও আমি বলে দিই। বিরাটের সবচেয়ে বড় গুণ হল, নিজের ওপর আত্মবিশ্বাসটা দারুণ। পাকিস্তান ম্যাচের আগের রাত্তিরে আমি বেশ ঘাবড়েই ছিলাম। ওকে ফোনে বলছিলাম, কী রে কী হবে? ও বলল, কিছু চিন্তা করবেন না। ঠিক খেলে দেব। এই কনফিডেন্সটা বিস্ময়কর।
ইদানীং আমি ওকে দেখি অনেক বেশি মোটিভেটেড। তিনটে ধরনের ক্রিকেটেও ও দারুণ ব্যাট করছে। যেটা কালকে রাহুল দ্রাবিড় বলেছে। বরাবরই ওয়ান ডে-র পক্ষে ও ভীষণ ট্যালেন্টেড ছিল। টি-টোয়েন্টি কিন্তু আমি সে ভাবে শেখাইনি। ও নিজেই নিজেকে তৈরি করে নিয়েছে। আমি ওকে বরাবর জোর দিয়েছি টেস্ট ক্রিকেটার বানানোর দিকে। এখনও বলি, ওরে লাইফটাকে আরও বাঁধ। আরও শৃঙ্খলায় আন। নইলে বড় টেস্ট ক্রিকেটার হতে পারবি না। যেটা দেখতে পাচ্ছি টেস্ট ক্রিকেটেও ও নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। আমার স্বপ্ন ওকে ভারতের সেরা টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে দেখা। আশা করব সেই দিনটা তাড়াতাড়ি কাছে চলে আসবে... |
|
|
|
|
|