ভোগান্তি বাড়িয়ে রুটের বহু বাস গেল মিছিলের ডিউটিতে
শঙ্কা যা ছিল, সেটাই ঘটল।
সমাবেশ-মিছিলের সৌজন্যে দিনভর যানজটে ভুগল কলকাতা। আর তার সঙ্গে যোগ হল সমাবেশ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও রাত পর্যন্ত বাসের অভাবে শহরবাসীর চূড়ান্ত নাকাল হওয়া। কারণ, সমাবেশে লোক আনতে কয়েকশো বাস উঠে গিয়েছিল রাস্তা থেকে। মিটিং-মিছিল শেষ হওয়ার পরেও সে সব বাস আর রুটে চলাচল করেনি। তবে ভোগান্তির আশঙ্কায় মানুষ পথে কম বেরোনোয় এবং পথে বাস না থাকায় সমাবেশ-মিছিলের এলাকা এবং সময়টুকু বাদ দিয়ে যানবাহনের চাপ তুলনায় কম ছিল। তবে পুলিশ জানাচ্ছে, সমাবেশ-মিছিলে শহরের এই ভোগান্তি আরও কয়েক দিন চলবে।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম, কংগ্রেস এবং এসইউসি-র মহিলা সংগঠনের সমাবেশ ও মিছিলের ত্র্যহস্পর্শে এ দিন বেলা ১১টা থেকেই শহরের নানা রাস্তায় যানবাহনের গতি কমতে থাকে। পুলিশ জানায়, উত্তর ২৪ পরগনার বহু মানুষ বেসরকারি বাসে সমাবেশে আসেন। ফলে সকাল থেকেই উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন রুটে শ’চারেক বাস পথে নামেনি।
মিছিলে রুদ্ধ রাস্তা। স্কুল থেকে ফেরার পথে ঘুমিয়ে পড়েছে ছোট্ট পড়ুয়া। সোমবার, শিয়ালদহে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিতাভ নন্দী জানান, রেলকে তাঁরা অনুরোধ করেছিলেন একটি বিশেষ ট্রেন দিতে। রেল কর্তৃপক্ষ তাতে রাজি হন। নির্দিষ্ট টাইম-টেবিলের বাইরে বনগাঁ থেকে শিয়ালদহ রুটের একটি ট্রেন তারা পেয়েছিলেন। সকাল ১০টা ৪ মিনিটে ট্রেনটি বনগাঁ থেকে ছেড়ে শিয়ালদহে আসে। আবার সন্ধ্যা ছটায় শিয়ালদহ থেকে বনগাঁর উদ্দেশে ছাড়ে।
এ দিন রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের সমাবেশে যোগ দিতে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে মিছিল বেরোনোর আগেই বাসে-ট্রাকে চেপে লোক জড়ো হতে থাকে বেলা ১১টা থেকে। ডোরিনা ক্রসিং, মেট্রো চ্যানেল এলাকায় সমাবেশ শুরুর ঘণ্টা দুয়েক আগে থেকেই ভিড়ের চাপ বাড়তে থাকে। পুলিশ জানায়, পার্ক সার্কাস কানেক্টরেও সমাবেশমুখী বাস-ট্রাকের জন্য ১২টার পর থেকে ধীরে চলে যানবাহন।
বেলা বারোটা থেকেই সমাবেশের যানবাহন চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, জওহরলাল নেহরু রোডের ধারে দাঁড় করানো হয়। ধর্মতলার কে সি দাশের মোড় থেকে পার্ক স্ট্রিট পর্যন্ত গাড়ি চলাচল বন্ধ করা হয়েছিল। শিয়ালদহ স্টেশন থেকে মূল মিছিলটি শুরু হয় একটা নাগাদ। মৌলালি হয়ে তা এস এন ব্যানার্জি রোডের দিকে এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে একে একে লেনিন সরণি, এ জে সি বসু রোড, এপিসি রোড, মহাত্মা গাঁধী রোড যানজটের কবলে পড়ে। মূল মিছিলটি ধর্মতলায় আসতেই পরিস্থিতি পুলিশের আয়ত্তের বাইরে চলে যায়।
ট্রাফিককর্তারা জানান, এ দিন বেশির ভাগ যানবাহন চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়ায় ওই রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ ধীর গতিতে যান চলাচল করে। যানজটও হয়। এস এন ব্যানার্জি দিয়ে মিছিল এগোনোয় দুটোর পরে রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড, রিপন স্ট্রিট, ইলিয়ট রোড যান চলাচল সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখতে হয়।
ভোগান্তির ছবিটা অবশ্য পাল্টায়নি এতটুকুও। টালিগঞ্জে যাওয়ার পথে মিছিলে নাকাল রফিকুল ইসলামও। ধর্মতলার মোড়ে থমকে থাকা গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। কাজের দিনে এমন মিছিল সমর্থন করেন? জবাব এল, “কলকাতার তো এটাই ধর্ম!” মেয়েকে নিয়ে নিউ মার্কেটে পুজোর কেনাকাটা সারতে এসে আটকে পড়েন বেহালার অপর্ণা মণ্ডল। বছর ছয়েকের মেয়ে শুভমিতাকে নিয়ে লেকটাউনে ফেরার পথে প্রায় পঞ্চাশ মিনিট লোটাস সিনেমার সামনে অটোয় আটকে ছিলেন সত্যজিৎ মুখোপাধ্যায়। বললেন, “মেয়ে পুলকারে ফেরে। আজ মিছিল এড়িয়ে মেয়েকে বাড়ি নিয়ে যাব বলে নিজেই এসেছিলাম। কিন্তু দুর্ভোগ সেই পোহাতেই হল।”
কেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেল?
এক পুলিশকর্তার ব্যাখ্যা, মৌলালি এবং ডোরিনা ক্রসিং আটকে দিলে শহরের একটা বড় অংশ থমকে যায়। এ দিন ভরদুপুরে দু’টি মোড়েই যান চলাচল আটকে যাওয়াতে বেশ কিছুক্ষণের জন্য শহরের প্রাণকেন্দ্র আটকে পড়েছিল। পরে অবশ্য গাড়ি ঘুরিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয় বলে তাঁর দাবি।
সমাবেশ শেষ হলেও দুর্ভোগের পালা মেটেনি বহুক্ষণ। বিকেল চারটে নাগাদ মিছিল থেকে কর্মী-সমর্থকেরা বেরোতে শুরু করেন। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের এক দিক গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার ফলেও গাড়িঘোড়া চলতে পারেনি। সব মিলিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত মধ্য কলকাতার একটি বড় অংশ যানজটে বিপর্যস্ত ছিল। যানজট এড়াতে অনেকেই মেট্রো ধরে বেরিয়ে গিয়েছেন। সভা-ফিরতি অনেক মানুষও মেট্রো ধরে বাড়ি ফিরেছেন। একে সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়, তার উপরে সভার ভিড়। দুয়ে মিলে সারাদিনের মতো ভরসন্ধ্যাতেও ঠাসা ছিল মেট্রোর কামরা।
এ দিন বিড়লা তারামণ্ডলের সামনে ইন্দিরা মূর্তির কাছে কংগ্রেস নেতা-সমর্থকদের জমায়েতও শুরু হয়েছিল বেলা ১টা নাগাদ। দুপুর ২টোয় মিছিল জওহরলাল নেহরু রোড ধরে হাজরায় রওনা দেয়। রাস্তায় এক দিকে ছিল মিছিলটি। ডিভাইডারের অন্য দিক দিয়ে উত্তরমুখী যান চলেছে। মিছিল এক্সাইড মোড়ে পৌঁছনোর পরে ‘ডিভাইডারের’ এক দিক থেকে তা অন্য দিকের রাস্তায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ফলে উত্তরমুখী রাস্তায় যানবাহন থমকে যায়। গাড়ির সারি পৌঁছে যায় ভবানীপুরের যদুবাবুর বাজারে। চৌরঙ্গি রোড, আশুতোষ মুখার্জি রোড, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডে বাস-গাড়ি-ট্যাক্সিতে প্রায় আধ ঘণ্টা আটকে ছিলেন অসংখ্য মানুষ। আশপাশের গলিতেও গাড়ি আটকে যায়।
পুলিশ জানায়, দুপুর ৩টে নাগাদ মিছিলের সামনের অংশ পৌঁছয় হাজরা মোড়ে। বাকিরা পৌঁছন আরও মিনিট কুড়ি পরে। হাজরা মোড়ের মঞ্চে ততক্ষণে প্রতিবাদ-সভা শুরু করেছে কংগ্রেস। পুলিশ সূত্রের খবর, হাজরায় আশুতোষ কলেজের সামনে দক্ষিণমুখী রাস্তা ফাঁকা থাকার আশায় ওই অংশে যানচলাচল শুরু করা হলেও, ভিড়ের চাপে তা সম্ভব হয়নি। ফলে হাজরা থেকে এক্সাইড পর্যন্ত গাড়ি থমকে থাকে বিকেল পৌনে ৪টে পর্যন্ত। রাসবিহারী থেকে উত্তরমুখী গাড়িগুলি শরৎ বসু রোড, চেতলা হাট রোড, আলিপুর রোড দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। তারামণ্ডল থেকেই দক্ষিণমুখী গাড়িগুলি পাঠানো হয় হরিশ মুখার্জি রোড দিয়ে।

দুর্ভোগের পূর্বাভাস
কবে কোথায় কারা
৪ অক্টোবর আর আর অ্যাভিনিউ সিদ্দিকুল্লার সংগঠন
৫ অক্টোবর শহিদ মিনার ইমামদের সংগঠন
৮ অক্টোবর আর আর অ্যাভিনিউ অ্যাবেকা
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.