মুক্ত চিন্তার অন্বেষণে পথ দেখায় লিবার‌্যালরা
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যে দিন নয়াদিল্লির রাজপথে এফডিআই ও উদারনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে, সে দিনই উদার অর্থনীতির ভয়ে ভীত ও কম্পিতদের খোঁজ নিল মমতার শহর।
ইংরেজি সাহিত্যে বিখ্যাত এক ‘অ্যাবসার্ড’ নাটক এডওয়ার্ড আলবির ‘হু ইজ অ্যাফ্রেড অফ ভার্জিনিয়া উল্ফ?’ সোমবার সন্ধ্যায় মধ্য কলকাতার এক হোটেলে হিন্দোল সেনগুপ্তের ‘দ্য লিবার‌্যালস’ বইয়ের প্রকাশ-অনুষ্ঠানের শিরোনাম, ‘হু ইজ অ্যাফ্রেড অব লিবার‌্যালাইজেশন?’ বোঝা গেল, শুধু সাহিত্যে এবং মঞ্চেই ‘অ্যাবসার্ড’ নাটক হয় না। মাঝে মাঝে রাজনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি সবেতেই অদ্ভুত সমাপতন ঘটে যায়!
বাঙালির কাছে লিবার‌্যালসের সঙ্গে আরও একটা শব্দ ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। ‘আমার মা লিবার‌্যাল ছিলেন, রিফর্মিস্ট ছিলেন,’ আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন নীরদচন্দ্র চৌধুরী। বাঙালি জানে, লিবার‌্যাল শব্দে শুধু উদারনীতি থাকে না। সামাজিক এবং আর্থিক...যাবতীয় সংস্কারের ব্যাঞ্জনাও থাকে।
হিন্দোল সেনগুপ্তের (মাঝখানে) ‘দ্য লিবার‌্যালস’ বইয়ের প্রকাশ-অনুষ্ঠানে আনন্দবাজার সংস্থার
প্রধান সম্পাদক অভীক সরকার (বাঁ দিকে) এবং মণিশঙ্কর আইয়ার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
একুশ শতকে ‘রিফর্ম’ শব্দের সেনসেক্স তলানিতে। অতএব, বই প্রকাশ অনুষ্ঠানের আলোচনাচক্রে বারংবার ঘুরে এল লিবার্যাল ও লিবার‌্যালিজম শব্দ দু’টি। আলোচনাচক্রে ছিলেন মণিশঙ্কর আইয়ার, সঞ্জীব গোয়েন্কা, হর্ষ নেওটিয়া, অরিত্র সরকার ও ইতিহাসবিদ রুদ্রাংশু মুখোপাধ্যায়। রুদ্রাংশু পরিষ্কার জানালেন, ‘‘লিবার‌্যাল আর লিবার‌্যালাইজেশন শব্দ দুটির অর্থ আলাদা। লিবার‌্যাল আরও বেশি ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য চায়। রাষ্ট্রের খবরদারি নয়।” আগামী ২০ বছরে রাষ্ট্রের খবরদারি ক্রমে বাড়বে, ভারতীয় লিবার‌্যালরা ডোডো পাখির মতো অবলুপ্ত হয়ে যাবেন বলে মনে করেন রুদ্রাংশু।
আগামী ২০ বছর কেমন যাবে? তা নিয়েই ছিল আলোচনা। মণিশঙ্কর আইয়ার জানালেন, লিবার‌্যালাইজেশন বা সংস্কারের ফল এখনও দেশের বেশির ভাগ মানুষের কাছে পৌঁছয়নি। কমাতে হবে ‘হ্যাভ আর ‘হ্যাভ নট’দের আসমান-জমিন ফারাক।’ হর্ষ নেওটিয়া অনেকটা তাঁর পথে, “উন্নয়ন নিয়ে শুধু পাশ্চাত্যের মডেলটি অনুসরণ করলে চলবে না। নিয়ে আসতে হবে ভারতীয় মূল্যবোধ।” অরিত্র সরকার বললেন, “নয়ের দশকে উদারনীতির প্রথম দিকে শিক্ষা, পানীয় জল, নিকাশি প্রকল্পে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সেগুলিতে এ বার গুরুত্ব দিতে হবে।”
কিন্তু কলকাতার অ্যাসেমব্লি অফ গড চার্চ স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র হিন্দোলের বই তো নিছক ‘লিবার‌্যালাইজেশন’ নিয়ে নয়। সেখানে ’৯০-এর কলকাতা থেকে একুশ শতকের দিল্লি ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি, মুম্বইয়ের জীবন, অনেক কিছুই উঠে এসেছে। কিন্তু বইয়ের নাম ‘লিবার‌্যালস’ কেন? ছেলেবেলায় হিন্দোলের পাশের বাড়ির কাকিমা গোপনে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে প্রেম করতেন। বালক হিন্দোলের মা বলেছিলেন, ‘আমরা বাপু অত লিবার‌্যাল নই।’ অর্থনীতি নয়, সেই বাঙালি জননীর কাছে লিবার‌্যাল শব্দের একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চিহ্ন ছিল।
সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি সবই রয়েছে ওই ‘লিবার‌্যালস’ নামে! বাবা মধ্যবিত্ত সরকারি চাকুরে। ফলে প্রেমিকার সঙ্গে ঝিলমিল, নিকো পার্ক এবং ‘সামপ্লেস এলস’-এ যাওয়ার জন্য বাবার পকেট কাটেন হিন্দোল। পাড়ায় তাঁর যে বন্ধুকে রকবাজ ভাবা হত, সে সম্মান পেল কেব্ল লাইন আসার পরে। উঁচু পোস্টে উঠে কেব্ল টিভির তার টানে সেই ছেলে। কেব্ল-ব্যবসা তখন বাঙালি ছেলের কাছে আর অচ্ছুৎ নয়! মানসিকতায় বদল ঘটে গিয়েছে তার।
সঞ্জীব গোয়েন্কা উদারনীতি বা লিবার্যালাইজেশনের পথে এই মানসিকতার বদলটাই চান। “বদলাতে হবে মনোবৃত্তি। শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা নয়। ছোট স্তরে আটকে না থাকে ভাবতে হবে আরও বড় স্তরের কথা।”
লিবার‌্যাল এই বড় স্তরের কথাই ভাবে। কলকাতায় স্কুল জীবনের কথা লিখেছেন হিন্দোল। ‘ভাল রেজাল্ট আমার কাছে সব কিছু পাওয়ার চাবি, জানতাম,’ লিখছেন তিনি। হায়ার সেকেন্ডারিতে সায়েন্স নিয়ে যাচ্ছেতাই ফল, অতঃপর জামিয়া মিলিয়ায় সাংবাদিকতা পড়া। এই যে কলাবিদ্যার পাঠক্রম....মধ্যযুগে একেই বলত লিবার‌্যাল।
লিবার‌্যালদের ভয় পায় কে?
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.