খুনের মামলায় ১৯ জনের যাবজ্জীবন
লাকারই একটি চালকলে চুরির মামলায় মূলসাক্ষী ছিলেন ছেলে। হাজার হুমকি সত্ত্বেও ছেলেকে সত্যি কথা বলার জন্যই অনুপ্রাণিত করেছিলেন দোস্ত মহম্মদ। ছেলের সাক্ষ্যগ্রহণের কয়েক দিনের মধ্যেই প্রতিশোধ নিতে খুন করা হয় সেই দোস্ত মহম্মদকে (৩৮)। ২০০২ সালের ওই ঘটনায় দীর্ঘদিন বিচার চলার পর সোমবার রামপুরহাট আদালতের ফাস্ট ট্র্যাক তৃতীয় আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন।
সরকার পক্ষের আইনজীবী সুমন্তশেখর রায় বলেন, “গত শুক্রবারই ২১ জন অভিযুক্তের মধ্যে ১৯ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। এ দিন বিচারক মানসকুমার বসু দোষীদের প্রত্যেকেরই যাবজ্জীবন সাজার নির্দেশ দেন।” এ দিনের সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন শিষফুল খান, রাইহান খান, লুৎফর খান, মনি মোল্লা, নুর ইসলাম মোল্লা, ময়না শেখ, জালাল শেখ, আনার মোল্লা, আজমাউল মোল্লা, মহম্মদ তকি শেখ, মঙলু শেখ, মোতাহার মোল্লা, জিকির খান, দিলবার খান, বজলে মোল্লা, বাজাউল খান, সাইদুল শেখ, সারিবুল শেখ ও মোক্তার শেখ।
জানা গিয়েছে, ২০০২ সালের ৫ অক্টোবর রাতে মুরারই থানার কামারখুর গ্রামের বাসিন্দা দোস্ত মহম্মদ ওরফে দসুকে খুন করা হয়।
আকুল পরিজন। সাজা ঘোষণার পর রামপুরহাট আদালত থেকে জেলে
নিয়ে যাওয়ার পথে। সোমবার সব্যসাচী ইসলামের তোলা ছবি।
দোস্ত মহম্মদের ভাই বজলে রহমান ওই ঘটনায় গ্রামেরই ২১ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। বজলে রহমানের অভিযোগ ছিল, ঘটনার দিন রাত ৮টা নাগাদ দোস্ত মহম্মদ ও বজলে রহমান গ্রামেরই ঘেরাবাড়ি নামে একটি জায়গা দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। ওই সময় সাক্ষ্য দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দোস্ত মহম্মদের উপর প্রতিশোধ নিতে ওই চুরির মামলায় অভিযুক্তেরা লোহার রড, ধারালো অস্ত্র নিয়ে চড়াও হয়। দাদাকে মার খেতে দেখে বজলে প্রাণভয়ে মাঠ দিয়ে ছুটে পালিয়ে যান। অভিযুক্তেরা গ্রামে প্রচণ্ড বোমাবাজি করে পালিয়ে যায়। ঘটনার খবর পেয়ে তাঁদের বাবা সামসুদ্দিন শেখ ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলেকে মুরারই গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা সেখানেই দোস্ত মহম্মদকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এ দিন সকাল থেকেই আদালত চত্বর জনতার ভিড়ে ছাপিয়ে উঠেছিল। মুরারই থানার কামারখুর, বর্ধনপাড়া, পঞ্চহোড়। হিয়াতনগর-সহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৌতূহলী মানুষ ভিড় জমান। অশান্তি এড়াতে আদালত চত্বরে আগাম পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সাড়ে ১১টার পর সাজা ঘোষণা হতেই আসামীদের দেখতে পুলিশের গাড়ি ঘিরে উৎসাহী জনতার ভিড় জমে যায়। তাঁদেরই মধ্যে কেউ কাঁদছেন, কেউ ক্ষুব্ধ হয়ে চিৎকার করে বলছেন বিনা দোষে সাজা হল। অনেকেরই মুখে আবার দেখা মিলল হাসিরও। আদালতের এই রায়ে তাঁরা খুশি। দোষীদের সাজা শুনতে এসেছিলেন দোস্ত মহম্মদের ভাই ও ছেলেও। বজলে রহমান বলেন, “দেড় বছর আগে হওয়া ওই চুরির ঘটনাটির মূল সাক্ষী ছিল আমার ভাইপো। সে ওই মিলেই কাজ করত। গ্রামেরই কিছু লোক ওই চুরিতে যুক্ত ছিল। ভাইপো যাতে সাক্ষ্য না দেয় তার জন্য তারা দাদাকে হুমকিও দিত। হুমকি উপেক্ষা করেই ভাইপোকে সাক্ষ্য দিতে উৎসাহী করেছিলেন দাদা। সাক্ষ্য দেওয়ার কয়েক দিনের মাথায় ওই চুরিতে জড়িতেরাই প্রতিশোধ নিতে দাদাকে নৃশংস ভাবে খুন করে।”
এই রায়ের বিরুদ্ধে অবশ্য উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছেন দোষীদের আত্মীয়স্বজনেরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.