|
|
|
|
স্বাদের আকালেই অকাল বোধন |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
আর দু’সপ্তাহ।
স্কুল-কলেজে ছুটি পড়ল বলে। অফিস লক্ষ্মীপুজো অবধি বন্ধ থাকে না বটে, কিন্তু অন্তত সপ্তমী থেকে দশমী ঝাঁপে লাঠি। অর্থাৎ দুপুরে-রাতে জমিয়ে পেটপুজোর ফুরসত।
কিন্তু কী খাবেন? কী-ই বা খাওয়াবেন ঘরের রাঁধুনিরা? সে-ই তো থোড় বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোড়। আগের দিনের মা-মাসিমার হাতের সুধা তো বিস্মৃতপ্রায়!
কথা হল, যতই নামজাদা হোক না কেন, হোটেলও কিন্তু জোগাতে পারে না বাঙালির পাত থেকে ক্রমশ হারিয়ে যেতে থাকা সেই সব কুলীন ডেলিকেসি। অন্তত সব।
অগত্যা বাঙালির মান বাঁচাতে, জান বাঁচাতেও বটে, দুর্গাপুরেরই কয়েক জন ঘরণী মাঠে নামলেন। মনে করিয়ে দিলেন এমনই কিছু ‘ইস্পেশ্যাল’ রান্নার কথা। |
চিতল মাছের মুইঠ্যা |
পেশায় চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের বিদিশা গুহ নিয়োগীর রান্নাটাই নেশা। মনে করিয়ে দিলেন মূলত ও পার বাংলার এই খানদানি রান্নার কৌশল। তাঁর জবানিতে পরিষ্কার করে গাদা থেকে মাছ বের করে নিন।
|
বিদিশা গুহ নিয়োগী |
একটি বড় সাইজের আলু সিদ্ধ করে তাতে পরিমাণ মতো নুন, এক চামচ শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো আর হলুদ গুঁড়ো দিয়ে মাছের সঙ্গে মেখে নিন। আলাদা পাত্রে দু’কাপ জল দিয়ে ফুটতে দিন। ফুটতে শুরু করলে মাছের মিশ্রণ গোল-গোল তাল পাকিয়ে (মুইঠ্যা) ফুটন্ত জলে ফেলে দিন। ৭ থেকে ১০ মিনিট ফোটার পরে জল থেকে তুলে মাঝারি সাইজের টুকরো করে ছাঁকা তেলে ভেজে নিন। এর পরে কড়াইয়ে ৫ চামচ তেল দিয়ে তেজপাতা ও শুকনো লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে বাকি বাটা মশলা দিয়ে তেল বেরনো অবধি কষতে থাকুন। মুইঠ্যার ‘স্টক’টা এক কাপ কষানো মশলায় দিন। সেটা ফুটে উঠলে মুঠের ভাজা পিসগুলো দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখুন। ফুটে ঝোল ঘন হলে ঘি এবং গরম মশলা দিয়ে নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন। |
|
কী লাগে: চিতল মাছের গাদা থেকে বের করা দু’শো গ্রাম মাছ, আলু দু’টি, সর্ষের তেল ১০০ মিলিলিটার, ঘি এক টেবিল চামচ, তেজপাতা দু’টি, গরম মশলা গুঁড়ো এক চা চামচ, টম্যাটো পিউরি এক টেবিল চামচ, চিলি পাউডার এক টেবিল চামচ, কাঁচা লঙ্কা ২টি, নুন-চিনি-হলুদ পরিমাণ মতো, বাটা মশলা-পেয়াঁজ ২টি, রসুন দুই কোয়া, আদা ছোট এক টুকরো, জিরে, ধনে আধ চামচ করে। |
রেশমি নাগেট |
তিলক রোডের বাসিন্দা মধুমিতা গুহ শেখালেন অনেকেরই অচেনা এক রান্না। তাঁর নির্দেশ প্রথমেই সিদ্ধ নিউট্রি
|
মধুমিতা গুহ |
নাগেট ও সিদ্ধ ডাল বেটে নিন। কড়াইয়ে সামান্য তেলে আধ টেবিল চামচ রসুন ও ৩ টেবিল চামচ পেঁয়াজ বাটা, ডাল ও নিউট্রি নাগেট বাটা এবং সামান্য নুন-মিষ্টি দিয়ে কষান। তার পরে মাঝারি সাইজের বল বানিয়ে থালায় রাখুন। আলাদা পাত্রে ডিম আর ময়দা দিয়ে ব্যাটার বানিয়ে নিন। আলতো হাতে বলের গায়ে ব্যাটার লাগিয়ে ছাঁকা তেলে বাদামি করে ভেজে তুলে রাখুন। অন্য কড়াইয়ে সামান্য তেল দিন। তেল হাল্কা গরম হলে বাকি রসুন, আদা, পেঁয়াজ বাটা দিয়ে নাড়তে থাকুন। লাল হয়ে এলে কাজু কিসমিস বাটা, টম্যাটো পিউরি, কাঁচা লঙ্কা চিরে দিয়ে সামান্য নেড়ে পরিমাণ মতো জল দিয়ে ঢেকে দিন। ফুটে উঠলে চিনি দিয়ে ভেজে রাখা বল তাতে ছেড়ে, সামান্য গরম মশলা ও ঘি দিন। মাখা-মাখা হয়ে এলে নামান। খাইয়েরা জমিয়ে বসলে চেরা কাঁচালঙ্কা আর মটরশুঁটি দিয়ে পরিবেশন করুন। |
|
কী লাগে:জল ঝরানো সিদ্ধ নিউট্রি নাগেট ১০০ গ্রাম, সিদ্ধ ছোলার ডাল ৫০ গ্রাম, ডিম একটি, মাঝারি সাইজের তিনটি পেঁয়াজ বাটা, আদা বাটা হাফ টেবিল চামচ, রসুন পেস্ট এক টেবিল চামচ, কাজু কিসমিসের পেস্ট ২ টেবিল চামচ, সাদা তেল পরিমাণ মতো, টম্যাটো পিউরি দুই টেবিল চামচ, কাঁচা লঙ্কা তিনটি, নুন পরিমাণ মতো, চিনি এক টেবিল চামচ, ময়দা ২ টেবিল চামচ। |
পেঁপের চাপড় ঘণ্ট |
অহল্যা বাঈ পথের প্রবীণা জয়ন্তী বাগচি স্মৃতি থেকে তুলে আনলেন অতুলনীয় এক নিরামিষ রান্না। শান্ত গলায়
|
জয়ন্তী বাগচি |
বলে গেলেন পেঁপে কুড়িয়ে নিয়ে গরম জলে সামান্য ভাপিয়ে নিন। জল ঝরিয়ে রাখুন। আগের রাতে ভিজিয়ে রাখা মটর ডাল বেটে তাতে সামান্য নুন দিয়ে চ্যাপ্টা করে হাল্কা ভেজে কড়াইয়ে ভাঙা ভাঙা করে তুলে রাখুন। এর পরে কড়াইয়ে ফের তেল গরম করে তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা, গোটা জিরে ফোরন দিয়ে জল ঝরানো পেঁপে ছাড়ুন। হাল্কা নাড়াচাড়া করে নুন-চিনি দিয়ে ফের নাড়তে থাকুন। হাল্কা বাদামি রঙের হলে চাপড় দিয়ে নাড়াচাড়া করে ঘি দিয়ে নামিয়ে রাখুন। গরম ভাতে পরিবেশন করুন। |
|
কী লাগে: মাঝারি সাইজের একটি কুড়ানো পেঁপে, মটর ডাল বাটা, জিরে ১ টেবল চামচ, গোটা শুকনো লঙ্কা ২টি, তেজপাতা ২টি, কাঁচা লঙ্কা ৪টি, নুন-চিনি-ঘি। |
পটল পাতুরি |
পাতুরি কি শুধু ভেটকি মাছেরই হয়? নিরামিষ হয় না? জয়ন্তীদেবীই শেখালেন কায়দাকানুন পটল হাল্কা ভাবে ছাড়িয়ে নুন-হলুদ মাখিয়ে ভেজে নিতে হবে। এর পরে দু’টি কাঁচা লঙ্কা, সরষে, কুড়ানো নারকেল ও দই এক সঙ্গে দিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। কড়াইয়ে তেল দিয়ে ওই পেস্ট নুন, হলুদ আর চিনি দিয়ে একটু নেড়ে ভাজা পটল দিয়ে দিন। ঘন হয়ে এলে কাঁচা লঙ্কা ও কাঁচা সরষের তেল ছড়িয়ে গরম-গরম পরিবেশন করুন। |
|
কী লাগে: গোটা পটল ৮টি, নারকেল আধমালা, সাদা সর্ষে এক চামচ, টক দই চার চামচ, হলুদ গুঁড়ো-চিনি-নুন পরিমাণ মতো, সর্ষে তেল, গোটা কাঁচালঙ্কা ৪টি। |
সংকলন: অর্পিতা মজুমদার
ছবি: বিকাশ মশান |
|
|
|
|
|