মণ্ডপে মানুষের হাসিই পুরস্কার জরিশিল্পীদের
ড়িয়ে ছিটিয়ে সুতো, দড়ি, আঠা, বোর্ড। গভীর মনোযোগে কাজে ব্যস্ত কয়েক জন। চুমকি, পাথর, কাচ, ভেলভেটে তৈরি হবে গলার হার, বুকের চেলি, কোমরবন্ধ, কানপাশা। মণ্ডপের বাহারি আলোয় ঝলমল করবে সে সব। তখন অবশ্য তাঁদের কথা কেউ মনে রাখবে না। জরির সাজের এই কুশীলবেরা চলে যাবেন পরিচিত অন্ধকারে।
কালনা শহরে মূলত ৮টি কারখানায় এখন প্রতিমার জরির সাজ তৈরি হয়। দেড়শোরও বেশি শিল্পী যুক্ত এই কাজে। সব চেয়ে বড় কারখানাটি রয়েছে বড়মিত্রপাড়ায়। ৫০ জন শিল্পী কাজ করেন সেখানে। তাঁরা জানান, রাখি পূর্ণিমার পর থেকেই শুরু হয় গয়না তৈরির কাজ। কলকাতার বড়বাজার থেকে নিয়ে আসা হয় সাজ তৈরির জিনিসপত্র। তবে প্রতিমা শিল্পীদের যদি বিশেষ কোনও চাহিদা থাকে, হয়তো কোনও বিশেষ বাহারি রং অথবা বিশেষ নকশা, তা-ও তৈরি করে দেন এই শিল্পীরা। সারা বছরই এই কাজ করলেও দুর্গাপুজোয় এমন বরাত মেলে বেশি, জানিয়েছেন শিল্পীরা।
কালনার এই শিল্পীরা জানালেন, এক সময়ে শোলার সাজের চাহিদা ছিল বেশি। কিন্তু এখনকার দস্তুর মতো জরির সাজই বেশি পছন্দ ব্যবসায়ী থেকে মৃৎশিল্পীদের। একে উজ্জ্বল সোনালি রং, তার উপর নিপুণ হাতের রকমারি নকশাকাটা। বড়মিত্রপাড়ার কর্মী, কাটোয়ার বনকাপাশি এলাকার লক্ষ্মীনারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “বেগুনি, তুঁতে, সবুজ, রানি, কমলা, কালো বা হালকা লাল রঙের হয় জরির কাজ। এত রং, এত জৌলুস অন্য কোনও সাজ দিতে পারে না। তাই বিদেশেও এর চাহিদা।”
কালনার বড়মিত্রপাড়ায় ব্যস্ত শিল্পীরা। —নিজস্ব চিত্র।
এই কারখানার মূল শিল্পী অমর পাল বলেন, “এ বার হাজার দেড়েক সাজ তৈরির লক্ষমাত্রা রয়েছে। তার একটা বড় অংশ যাবে কলকাতার কুমোরটুলিতে।” তিনি জানান, ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আফ্রিকায় সাজ পাঠানো হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়াও অসম, অন্ধ্রপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ-সহ দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে চাহিদা রয়েছে এই জরির কাজের। অমরবাবুর দাবি, প্রায় ১৬ বছর ধরে কালনার জরির কাজের চাহিদা বাড়ছে কলকাতায়। প্রতিযোগিতায় নামছে বড় বড় মণ্ডপগুলি। উত্তরপ্রদেশ থেকে কালনার জরির সাজ নিতে এসেছিলেন কুমারেশ সরকার। তিনিও উচ্ছ্বসিত। তাঁর কথায়, “অযোধ্যা-সহ দেশের নানা প্রান্তে প্রতিমাশিল্পীদের কাছে ৬০টি সাজ বিক্রি করেছি। সবই কালনা থেকে নিয়ে যাওয়া।”
তবে অমরবাবুর বাবা অসীম পালের ক্ষোভ, জরি শিল্পে এখন প্রয়োজন অনুযায়ী লোক মেলে না। পাশেই রাখি আর প্লাস্টিকের কারখানা রমরমিয়ে বাড়ায় সেখানেই চলে যাচ্ছেন অধিকাংশ। আশঙ্কা, শেষ মুহূর্তে কিছু বরাত না বাতিল করে দিতে হয়। শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কারখানাতেও চলছে প্রস্তুতি। কারখানার ম্যানজার রমেন পাল বলেন, “৭০ শতাংশ ক্ষেত্রেই বরাত দেন ব্যবসায়ীরা। বাকি ৩০ শতাংশ বরাত মৃৎশিল্পীরাই সরাসরি দিয়ে থাকেন। তাঁর কথায়, “ত্রিপুরা, অসম ছাড়াও রাজ্যের মালদহ বা জঙ্গিপুরেও পাড়ি দিচ্ছে এখানকার সাজ। কলকাতা তো আছেই!” পুজোর চার দিন মণ্ডপে ঢল নামবে মানুষের। মণ্ডপ, আলো, প্রতিমা, উদ্যোক্তাদের প্রশংসা বা বিচারকদের বিচারে বাদ যাবে না কিছুই। শুধু আঁধারে রয়ে যাবেন এই শিল্পীরা। তাতে অবশ্য তাঁদের দুঃখ নেই। অমরবাবুর কথায়, “প্রতিমা দেখে মানুষের খুশিমাখা মুখ দেখেই বুঝে যাই, আমরা পেরেছি। এটাই তো সবচেয়ে বড় পুরস্কার।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.