প্রেসক্রিপশনে ‘ব্র্যান্ড’ নামের পরিবর্তে ‘জেনেরিক’ নামে ওষুধ লেখার জন্য সরকারি ডাক্তারদের প্রতি নির্দেশ জারি করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু এ বার খোদ স্বাস্থ্য দফতরেরই পরিকল্পনায় সরকারি হাসপাতালে ‘যৌথ উদ্যোগের’ যে সব ফার্মাসি চালু হতে চলেছে, সেখানে জেনেরিক নামের ওষুধের পাশাপাশি ব্র্যান্ড নামের ওষুধও বিক্রি হবে। সরকারের এ হেন ‘দ্বিমুখী’ মনোভাব নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসকদের বড় অংশ।
স্বাস্থ্য-সূত্রের খবর: বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ, জেলা ও মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ, সংক্ষেপে পিপিপি) দোকান খুলে কম দামে ওষুধ বিক্রির জন্য ১৪টি ওষুধ সংস্থার সঙ্গে রাজ্যের চুক্তি হয়েছে। দোকানগুলোয় বাজারের তুলনায় ৬০%-৭০% কম দরে ওষুধ মিলবে বলে স্বাস্থ্য-কর্তাদের দাবি। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘সব ঠিকঠাক চললে পুজোর পরেই প্রকল্পটি চালু হয়ে যাবে। দোকানগুলো চব্বিশ ঘণ্টা খোলা থাকবে। প্রথম দফায় ১৫টা দোকান চালু হবে। পরে ধাপে ধাপে আরও কুড়িটা।”
এবং স্বাস্থ্য-কর্তারা জানাচ্ছেন, পিপিপি’র ফার্মাসিতে ১৪২টি জেনেরিক নামের ওষুধ মজুত রাখতে সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর বাড়তি হিসেবে যে কোনও ব্র্যান্ডের ওষুধ রাখা যাবে। কিন্তু কোনও রোগী যদি অভিযোগ করেন যে, তাঁকে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের ওষুধ কিনতে চাপ দেওয়া হচ্ছে, তা হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, এমনকী চুক্তিও বাতিল হতে পারে। কিন্তু ওখানে শুধু জেনেরিক নামের ওষুধ বিক্রি বাধ্যতামূলক হল না কেন?
এক স্বাস্থ্য-কর্তার ব্যাখ্যা, “সামগ্রিক পরিস্থিতি না-বদলালে জবরদস্তি এটা সম্ভব নয়। আগে জেনেরিক ওষুধের মান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া দরকার।” অন্য দিকে ওষুধ সংস্থাগুলোর দাবি, শুধু জেনেরিক ওষুধ বেচে তাদের লাভ হবে না। রাজ্যের অন্যতম এক ওষুধ সংস্থার এক কর্তার বক্তব্য, “জেনেরিক ওষুধ বেচতে আমাদের সমস্যা নেই। কিন্তু বহু লোক ব্র্যান্ডের ওষুধই চান। ওঁদের মতো খদ্দের হাতছাড়া হলে মুশকিল। তা ছাড়া শুধু জেনেরিক ওষুধ বিক্রি করে তো ৬০-৭০ শতাংশ ছাড় দেওয়া যাবে না!”
স্বাস্থ্য-কর্তারা বলছেন, নতুন এই প্রচেষ্টায় ব্র্যান্ড-জেনেরিক নামের বিবাদ অবান্তর। দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “দামের কারণে ওষুধ ক্রমশ সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য-বাজেটের বড় অংশ ওষুধ খাতে বরাদ্দ করেও সমস্যার সুরাহা করা যায়নি। জনওষধি প্রকল্প ব্যর্থ। তাই যৌথ উদ্যোগে দোকান খুলে কম দামে ওষুধ বিক্রিতে উদ্যোগী হয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” স্বাস্থ্যভবনের আশা, প্রকল্পটি সফল হলে পেসমেকার-স্টেন্টের মতো জীবনদায়ী সরঞ্জাম নিয়ে গজিয়ে ওঠা অসাধু চক্রেও রাশ পরানো যাবে।
পূর্বতন বাম আমলেও পেসমেকার, স্টেন্টে সরকারি নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হাসপাতাল চত্বরে দোকান খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। টেন্ডার ডাকার প্রক্রিয়া শুরু করেও তা বাস্তবায়িত করা যায়নি। নতুন প্রকল্প চলবে কী ভাবে? স্বাস্থ্য-সূত্রের খবর:হাসপাতাল চত্বরে দোকান খোলার জায়গা দেবে সরকার। নিখরচায় জলের লাইন মিলবে। বিদ্যুৎ-মিটারের বন্দোবস্ত অবশ্য সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থাকেই করে নিতে হবে। পিপিপি’র ফার্মাসি’র জন্য স্বাস্থ্য দফতর একটা ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম’ তৈরি করে দেবে। রোগীকল্যাণ সমিতি দেখবে, তা মানা হচ্ছে কি না। প্রতি তিন মাস অন্তর সমিতিই দোকানের কাজকর্ম খতিয়ে দেখবে। |