পুজোর মুখে নাগরিক পরিষেবা এবং অনুন্নয়নের অভিযোগ তুলে কংগ্রেস-তৃণমূল ‘জোট’ পরিচালিত শিলিগুড়ি পুরসভার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে চলেছে বামফ্রন্ট। এর প্রথম কর্মসূচি হিসাবে পুর এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে ৬টি জনসভা করবেন বাম নেতারা। আজ, শনিবার বিকালে চম্পাসারি থেকে ওই সভা শুরু হচ্ছে। এরপরে আশ্রমপাড়া, জংশন-মাল্লাগুড়ি, ঝংকার মোড়, সুভাষপল্লি এবং টিকিয়াপাড়াতে আগামী ৯ অক্টোবর অবধি জনসভাগুলি হবে। মূলত, বেহাল রাস্তা, জঞ্জাল অপসারণ, পানীয় জল, গরিবদের ভাতা-সহ পুরসভায় দুর্নীতির অভিযোগগুলি নিয়ে সভা হবে।
সিপিএমের শিলিগুড়ি জোনাল সম্পাদক তথা কাউন্সিলর মুকুল সেনগুপ্ত বলেন, “শহরের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। সমস্ত পরিষেবা ভেঙে পড়েছে। পুরসভার হেলদোল নেই। নতুন কোনও প্রকল্প নেই। কেবল সরকারের টাকা নেই, টাকা নেই বলা হচ্ছে। এটা মানা যায় না।” সরকারের যুক্তি না মানার কারণ হিসাবে মুকুলবাবু জানান, কোটি কোটি টাকা খরচ করে আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উৎসব, উত্তরবঙ্গ উৎসব, ত্রিফলা আলো লাগানো হচ্ছে। সেতু, রেলিং রং করা হচ্ছে। সবই খুব ভাল কাজ হচ্ছে। কিন্তু তাহলে পূর্ত, পুরসভা, এসজেডিএ-র আওতাভুক্ত রাস্তা কেন সারাই কেন হবে না? জঞ্জাল কেন অপসারণ ঠিকঠাক হবে না কেন? পানীয় জলের কেন সমস্যা হবে। এই সব কাজ না করে কেবল শহর সাজা’র কাজ হচ্ছে। আর মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এমনকি, শহরে পার্কিং-র নামে এলাকা ভিত্তিক ‘দাদাগিরি’র লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে বলেও মুকুলবাবুরা এ দিন অভিযোগ করেছেন। দলীয় সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক পুরসভায় লাগাতার আন্দোলন শুরু করেছেন বামেরা। পুর কর্মীদের দাবিদাওয়া, উচ্ছেদ, বেআইনি নির্মাণ, ডেঙ্গি প্রবণতা ঠেকাতে মশারি নিয়ে বিক্ষোভ পর্যন্ত হয়েছে। এবার এই আন্দোলন পুরসভার বাইরে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফ্রন্ট নেতারা। বিশেষ করে, কংগ্রেস-তৃণমূল জোট ভাঙার পরে এই আন্দোলনের তীব্রতা আরও বাড়ানোর কথা চলতি সপ্তাহের জেলা বামফ্রন্টের বৈঠক ঠিক হয়। বামফ্রন্টের কয়েকজন নেতা জানান, জোট ভেঙে গেলেও পুরসভা এখনও দুই দল একসঙ্গে রয়েছে। একে অপরের বিরুদ্ধে কার্যত রোজই বিষাদগার করে চলেছে। দল ভাঙানোর খেলাও শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় অনিশ্চিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে মানুষের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করলে আগামীতে ফ্রন্টের জন্য তা লাভজনক হতে পারে বলে ওই নেতারা মনে করছেন।
সিপিএম নেতা তথা কাউন্সিলর জয় চক্রবর্তী বলেন, “রাজ্য সরকারের মতই জোটের পুরবোর্ড প্রতিটি প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হয়েছে। পরিষেবা, উন্নয়ন শুধু নয় গরিব মানুষের বিভিন্ন ভাতা গত ৮ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। মশা মারার তেলের বদলে আরশোলা মারার তেল বিলি হচ্ছে। কী হচ্ছে পুরসভা, কিছু বোঝা যাচ্ছে না।” এদিন কংগ্রেস কাউন্সিলর তথা পুরসভার চেয়ারম্যান নান্টু পালের দলবদল করে তৃণমূলে যাওয়াকেও কটাক্ষ করেছেন সিপিএম নেতারা। মুকুলবাবু বলেন, “আমরা বুঝতে পারি না, উনি কখন কোন দলে আছেন। উনি মুখ্যমন্ত্রীর আদর্শ শিষ্য। তৃণমূলনেত্রী যেমন কখনও বিজেপি, কখনও কংগ্রেসের সঙ্গে থাকেন। তেমনি নান্টুবাবুও দল বদলে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতেই ভালবাসেন।” সেই সঙ্গে চেয়ারম্যানের দলবদল নিয়ে পুরসভার কাজকর্মে কোনও সমস্যা হবে কী না তা খতিয়ে দেখতে আইনি সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বলেও মুকুলবাবুরা জানিয়েছেন। |