ছয় জেলার জাতীয় সড়কের অধিকাংশ বেহাল হয়ে পড়লেও তা সারাতে গড়িমসির অভিযোগে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের অফিসের সামনে ধর্নায় বসলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান গৌতম দেব। সোমবার শিলিগুড়ির কাছে ভক্তিনগরে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের প্রকল্প অধিকর্তার অফিসের সামনে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রায় ৪ ঘণ্টা ধর্নায় বসে থাকেন। প্রকল্প অধিকর্তা রাজকুমার চৌধুরী ধর্না মঞ্চে গিয়ে পুজোর আগেই রাস্তা সারানোর আশ্বাস দেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা দার্জিলিং জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি গৌতম দেব বলেন, “উত্তরবঙ্গে জাতীয় সড়কগুলি পুকুরের আকার নিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ওই অবস্থা চলছে। নিত্যদিন দুর্ঘটনা হচ্ছে। যানজটে পড়ে সাধারণ নাজেহাল হয়ে পড়ছেন। হাইকোর্টের বিচারপতি রাস্তার ওই দশায় মামলা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। আমরা তিনবার জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের অফিসে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। কিন্তু তাঁরা আশ্বাসের বাইরে কিছু করছেন না। কেন্দ্রীয় সরকার উত্তরবঙ্গের প্রতি চরম বঞ্চনা করছে। এটা চলতে পারে না। এবারে রাস্তা ঠিক না হলে দাজির্লিং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারে তৃণমূল তীব্র আন্দোলনে নামবে। যে আন্দোলনের আঁচ দিল্লিতে গিয়ে পৌঁছবে।” তিনি অভিযোগ করেন, উত্তরবঙ্গকে রাজ্যের অন্য এলাকা থেকে আলাদা করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। |
প্রকল্প অধিকর্তা বলেন, “বেহাল সড়ক সারাইয়ের কাজ শুরু করা হয়েছে। বৃষ্টির জন্য কাজে সমস্যা হচ্ছে। কয়েক জায়গায় কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। আশা করছি পুজোর আগে রাস্তা সারাইয়ের কাজ শেষ করা যাবে। এ ছাড়া ফোর লেনের কাজের প্রক্রিয়া অক্টোবরের মধ্যে শুরু হবে। তা হলে রাস্তা নিয়ে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।” কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলার সভাপতি (সমতল) শঙ্কর মালাকারের কটাক্ষ, “জাতীয় সড়ক নিয়ে আন্দোলন করছেন ভাল কথা। রাজ্য সড়কগুলির হাল ফেরাতেও মন্ত্রীকে আন্দোলন করুন। তাতে আমরাও সামিল হব।” প্রশাসন সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি থেকে কোচবিহার যাওয়ার রাস্তা ৩১ (ডি) জাতীয় সড়ক দীর্ঘদিন ধরে বেহাল হয়ে পড়ে রয়েছে। ফুলবাড়ির পর থেকে রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ হওয়ায় বাস চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শিলিগুড়ি থেকে জলপাইগুড়ি বা কোচবিহারে যাওয়ার বাসগুলি আমবাড়ি-ফালাকাটার গলির রাস্তা ধরে যাতায়াত দিয়ে করছে। যাত্রীদের অভিযোগ, কোচবিহার থেকে শিলিগুড়ি যাতায়াতে যেখানে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগার কথা সেখানে ৮ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে। জলপাইগুড়ি থেকেও যাতায়াতের দ্বিগুণের বেশি সময় লাগছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ফুলবাড়ি থেকে ময়নাগুড়ি ১৭ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা বেহাল হয়ে রয়েছে। এই অবস্থায় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। এদিন সকাল ১১টা নাগাদ গৌতম দেবের নেতৃত্বে দুই মাইলে একটি সিনেমা হলের সামনে থেকে মিছিল বের করে তৃণমূল। দীর্ঘ মিছিল গিয়ে ভক্তিনগরে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের অফিসে সামনে মঞ্চে অবস্থান শুরু করে। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সচিব কৃষ্ণ পাল, সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র কুন্ডু, ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মার নেতৃত্বে একটি দল প্রকল্প অধিকর্তাকে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। রাস্তা সারাই না হলে অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে বলেও কৃষ্ণবাবু হুমকি দেন। কংগ্রেস থেকে সদ্য তৃণমূলে যাওয়া নান্টু পাল অবস্থান বিক্ষোভে যোগ দেন। |