পঞ্চায়েত ভোট কেন তারা এগিয়ে আনতে চাইছে, নির্বাচন কমিশনের কাছে শুক্রবার নির্দিষ্ট ভাবে তার ব্যাখ্যা দিতে পারল না রাজ্য সরকার। সোমবার তারা সম্পূর্ণ তথ্য দিতে পারবে বলে জানিয়েছে। তাই আগামী সপ্তাহেই এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। ফলে ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে রাজ্যের প্রস্তাব আপাতত ঝুলেই রইল।
ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ বন্ধ রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগামী ইংরেজি নববর্ষে পঞ্চায়েত ভোট করতে চাইলেও তাতে এক সুরেই আপত্তি তুলেছে কংগ্রেস এবং সিপিএম। তাদের আপত্তি, ভোটার তালিকার কাজ বন্ধ রাখা নিয়ে। যদিও তৃণমূল শিবিরের মতে, এখনই নির্বাচনের মুখোমুখি হতে ভয় থেকেই সিপিএম-কংগ্রেসের এমন আপত্তি।
রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষ বৃহস্পতিবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখে পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ অক্টোবরের পরিবর্তে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের পর করার অনুরোধ করেন। তিনি চিঠিতে লেখেন, আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতির জন্য জেলাশাসক থেকে নীচের স্তরের সরকারি কর্মীরা কাজ শুরু করেছেন। ফলে একই সঙ্গে দু’টি কাজ তাঁরা করতে গেলে সমস্যা হবে। তাঁর চিঠি পাওয়ার পরে নির্বাচন কমিশন একই সঙ্গে মুখ্যসচিব এবং মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুনীল গুপ্তের কাছে বেশ কিছু তথ্য চেয়ে পাঠায়। যার অন্যতমই হল পঞ্চায়েত নির্বাচনের আইনের প্রত্যয়িত প্রতিলিপি।
সেই সঙ্গে কমিশন জানতে চেয়েছে, বর্তমান ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের মেয়াদ কত দিন রয়েছে, জানুয়ারি থেকে আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিল পযর্ন্ত রাজ্যের সামাজিক অবস্থা, আবহাওয়ার অবস্থা, পরীক্ষার সময় সূচি-সহ যাবতীয় তথ্য। মহাকরণ সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার অন্য সব তথ্য এ দিন পাঠাতে পারলেও পঞ্চায়েত আইনের প্রত্যয়িত প্রতিলিপি কমিশনের কাছে পাঠাতে পারেনি। তবে মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের পক্ষ থেকে এ দিনই সব তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পর কমিশন রাজ্যের প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন এখনও সময়সূচি পরিবর্তনের কোনও নির্দেশ না-দেওয়ায় ১ অক্টোবর সারা রাজ্যের ৭৬ হাজার বুথে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। ওই দিন থেকেই ভোটার তালিকা সংশোধন শুরু হবে। রাজ্য নির্বাচন দফতর সূত্রের খবর, সাধারণ ভাবে এক বার ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু হয়ে গেলে বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় ছাড়া তা স্থগিত রাখা হয় না। তবে নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কমিশনের রয়েছেই।
ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ স্থগিত রাখতে রাজ্যের আর্জির বিরুদ্ধে কমিশনের কাছে দরবার করেছেন কংগ্রেস ও বাম নেতারা। তাঁরা একমত যে, যত আগে নির্বাচন হবে, ততই সুবিধা পাবে শাসক দল। তৃণমূল সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে জানুয়ারিতে পঞ্চায়েত ভোটের জন্য প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, ভোটার তালিকার কাজ শেষ করতে গেলে এপ্রিল-মে মাসের আগে ভোট করা যাবে না। সেই কারণেই পুরনো ভোটার তালিকা নিয়েই ভোটে যেতে চাইছে তৃণমূল।
সিপিএমের নীলোৎপল বসুর নেতৃত্বে চার বাম দলের নেতারা এ দিনই দিল্লিতে কমিশনে গিয়েছিলেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যও দিল্লিতে মানস ভুঁইয়াকে কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ বন্ধ না-করার জন্য কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের কাছেও আপত্তি জানিয়েছে তারা। প্রদীপবাবু বলেন, “ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় কোনও ভোট করানো যায় না। এই কাণ্ডজ্ঞান রাজ্য সরকারের নেই! নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে সাংবিধানিক অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যায় না।”
ভোটার তালিকায় নাম তোলা এবং সচিত্র পরিচয়পত্র নাগরিকত্বের প্রমাণ। জাতীয় স্তর থেকে এআইসিসি-ও যাতে সরব হয়, সে বিষয়েও দিল্লির সঙ্গে প্রদীপবাবুরা কথা বলছেন। নীলোৎপলবাবুরও বক্তব্য, “এক বার ভোটার তালিকা সংধোশনের প্রক্রিয়া শুরু করে দেওয়ার পরে তা বন্ধ করে দিলে অন্য সঙ্কেত যাবে। তা ছাড়া, আগে ভোট হলেও নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দায়িত্ব নিতে পারবেন না। তখন পঞ্চায়েতের কাজেও নতুন সমস্যা তৈরি হবে।” একই সুরে মানসবাবুর অভিযোগ, “পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা। এইভাবে ভোট এগিয়ে আনাটা অসাংবিধানিক।” |