মিড ডে মিল নিয়ে দুর্নীতি-সহ একাধিক অভিযোগে দু’টি স্কুলে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখাল ছাত্রছাত্রীরা। শুক্রবার বসিরহাট মহকুমার বাদুড়িয়া ও সন্দেশখালিতে ওই ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভের জেরে সন্দেশখালির স্কুলটিতে রাত পর্যন্ত আটকে রাখা হয় প্রধান শিক্ষক-সহ অন্য শিক্ষকদের।
ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বাদুড়িয়ার আটঘরা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের কম খেতে দিয়ে মিড-ডে মিলের চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠলে তদন্তে নামে শিক্ষা দফতর। কেবল কম খেতে দেওয়াই নয়, পোশাকের জন্য টাকা এলেও তা ছাত্রছাত্রীদের না দেওয়া, ছুটিতে থাকা পার্শ্বশিক্ষকের বেতন তুলে নেওয়া, স্কুলের ঘর তৈরির টাকা নয়ছয়, পঠনপাঠনের নিম্নমান নিয়েও অভিযোগ ওঠে। এ সব নিয়েই প্রতিবাদে এ দিন স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্রছাত্রীরা। প্রধান শিক্ষক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “অভিযোগগুলি অনেকাংশে সত্য। মিড ডে মিলের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চলছে। আসলে পরিকল্পনা করে আমাকে ফাঁসিয়েছেন পরিচালন সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক। আমি তদন্তকারীদের সমস্তই জানিয়েছি।” প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পরিচালন সমিতির সম্পাদক শেখ আমানুল্লা বলেন, “ডিলারের থেকে সই করে চাল নেন প্রধান শিক্ষক। তাঁর গাফিলতির জন্যই কয়েকজন ছাত্রছাত্রী পোশাক পায়নি।” |
সভাপতি অহিদ আলি বিশ্বাস বলেন, “সম্প্রতি স্কুলে প্রধান শিক্ষক না থাকায় মিড ডে মিলের চাল এলে দেখা যায় ৮ কুইন্টাল চাল এসেছে। যডিও ডিলার যে কাগজ দেয় তাতে লেখা ছিল ১৮ কুইন্টাল। কেন এমন হল জানতে চাইলে ডিলার জানায় প্রথম থেকেই এমনটা হয়ে আসছে। এর পরেই চাল নিয়ে দুর্নীতি ধরা পড়ে।” সবাপতির দাবি, প্রধান শিক্ষককে ঘটনা জানাতে তিনি তাঁকে হুমকি দেন। বাদ্য হয়ে তিনি বিষয়টি বিডিও এবং এসআই- কে জানান। এর পরেই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যদিকে, সন্দেশখালির কানমারি বিদ্যামন্দিরে গরমে ক্লাস ঘর থেকে পাখা খুলে নেওয়ার প্রতিবাদ করায় এক ছাত্রকে প্রধা শিক্ষক মারধর করার প্রতিবাদে ক্লাসে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষকদের ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় ছাত্ররা। রাত পর্যন্ত তাঁদের আটকে রাখা হয়। স্কুল সূত্রের খবর, সম্প্রতি স্কুলে বিদ্যুৎ আসায় দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের ক্লাসে দু’টি পাখা লাগানো হয়। এর পর নবম শ্রেণির পড়ুয়ারাও পাখার দাবি তুললে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে তাদের বচসা বাধে। সেই সময় পাখা দু’টি খুলে আনা হয়। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় এক ছাত্রকে প্রধান শিক্ষক চড় মারেন বলে অভিযোগ। এর পরেই ছাত্ররা বিক্ষোভ শুরু করে। সামিল হন অভিভাবকেরাও। প্রধান শিক্ষক নিরুপম সরকার বলেন, “স্কুলের ৬টি ঘরে ৬টি পাখা লাগানোর জন্য দশম শ্রেণি থেকে একটি পাখা খোলা হয়েছিল। তাতে রেগে গিয়ে ছাত্ররা স্কুলের সম্পত্তি ভাঙচুর করলে একজনকে মেরেছি। এমন কিছু ঘটনা নয়।” তবে অভিভাবকদের অভিযোগ, শুধু পাখা নিয়েই বিক্ষোভ নয়। মিড ডে নিয়ে দুর্নীতি, শিক্ষকদের সময়মতো ক্লাসে না আসা ইত্যাদির প্রতিবাদেই এই বিক্ষোভ। শেষপর্যন্ত ক্লাসে পাখা লাগানো ও অন্যান্য অভিযোগ নিয়ে প্রধান শিক্ষক তদন্তের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ ওঠে। |