বিষাক্ত চোলাই খেয়ে মৃতদের পরিবার ক্ষতিপূরণের টাকা হাতে হাতে পাবে না। ওই টাকা নগদে বা চেকে দেওয়া যাবে না বলে কলকাতা হাইকোর্ট শুক্রবার জানিয়ে দিয়েছে। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, ওই টাকা মৃতদেরর নিকটাত্মীয়ের নামে ডাকঘরে মাসিক সুদ প্রকল্পে জমা রাখতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার মাসে মাসে শুধু সুদের টাকা তুলতে পারবে।
২০১১ সালে বিষমদ খেয়ে ১৭২ জনের মৃত্যুর পরে রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছিল, মৃতদের মাথাপিছু তাঁদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি যাতে অবিলম্বে ক্ষতিপূরণের টাকা কাজে লাগাতে পারে, সেই জন্য এ দিন অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। হাইকোর্ট এ দিন জানিয়ে দিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি ডাকঘরে জমা থাকা দু’লক্ষ টাকার পুরোটা কোনও দিনই তুলতে পারবে না। তবে মেয়ের বিয়ে বা অন্য কোনও বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিলে তারা জমা টাকার কিছুটা তোলার জন্য জেলাশাসকের কাছে আবেদন জনাতে পারবে। জেলাশাসক অনুমতি দিলে তারা জমা টাকার কিছু অংশ তুলতে পারবে। তবে ডাকঘরে টাকা জমা পড়ার এক বছরের মধ্যে এই ধরনের আবেদন করা যাবে না।
২০১১ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটের সংগ্রামপুর, উস্তি, মন্দিরবাজার থানা এলাকায় বিষমদ খেয়ে ৩০০ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। দু’দিন দিনের মধ্যে মৃতের সংখ্যা ১৭২-এ পৌঁছয়। আইনজীবী চিত্তরঞ্জন পাণ্ডা হাইকোর্টে জনস্বার্থের মামলা করে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার যদি নগদ টাকা পায়, কিছু দিনের মধ্যেই নানা ভাবে তা খরচ করে ফেলবে। সরকার যে-উদ্দেশ্য নিয়ে ক্ষতিপূরণ দেবে বলে ঘোষণা করেছে, সেই উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। তাই ক্ষতিপূরণের টাকা এমন ভাবে দেওয়া হোক, যাতে পরিবারগুলির কিছু সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়। বিষমদে মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ নিয়ে আরও কয়েকটি জনস্বার্থের মামলা হয়েছে। সেই সব মামলা চলবে বলে এ দিন জানিয়েছে হাইকোর্ট।
বিষমদ কাণ্ডে মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা নিয়ে হাইকোর্টে অন্য জনস্বার্থের মামলাগুলির শুনানি হবে পুজোর ছুটির পরে। হাইকোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি আগামী ৪ অক্টোবর অবসর নিচ্ছেন। তাই এর পরে ওই সব মামলার শুনানি হবে পরবর্তী প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। বিষাক্ত চোলাইয়ে ব্যাপক প্রাণহানির তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, সংগ্রামপুর স্টেশন সংলগ্ন তিন-চারটি মদের ভাটি থেকে ওই বিষমদ সংগ্রহ ও পান করা হয়েছিল। ওই সব ভাটির মালিক খোঁড়া বাদশা, তার স্ত্রী সাকিলা বিবি-সহ ২১ জনের বিরুদ্ধে মগরাহাট, উস্তি, মন্দিরবাজার থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়। পরে তদন্তভার নেয় সিআইডি। খোঁড়া বাদশা, সাকিলা-সহ ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে সাকিলা বিবি জামিন পেলেও বাদশা-সহ ১৮ জন এখনও জেল-হাজতে রয়েছে। |