মানুষের পক্ষে যা অসম্ভব, তা-ই সম্ভব করবে প্রযুক্তি। বাঘের ডেরা সুন্দরবন হয়ে পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এ বার চালু হচ্ছে বৈদ্যুতিন নজরদারি। সুন্দরবনের ন’টি অগম্য এলাকায় এই নজরদারি চালাবে রাজ্যের উপকূল পুলিশ বাহিনী। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরা প্রতি মুহূর্তের চলমান ছবি পাঠাবে পুলিশকে। যার মাধ্যমে জেনে নেওয়া সম্ভব হবে ওই সব এলাকায় মাছ ধরার ট্রলার ও অন্য নৌকার গতিবিধি ও কার্যকলাপ।
সম্প্রতি জলপথে নজরদারির জন্য ১৮টি দ্রুতগতি সম্পন্ন আধুনিক যন্ত্রচালিত নৌকা এসেছে রাজ্য উপকূল পুলিশের হাতে। কিন্তু সেগুলি চালানোর মতো দক্ষতা উপকূল পুলিশের কারও নেই। সে জন্য উপকূল পুলিশ নৌবাহিনী ও উপকূলরক্ষী বাহিনীর মোট ৫০ জন অবসরপ্রাপ্ত জওয়ানকে নিয়োগ করবে। তাঁদের জন্য বেতনের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে ঝুঁকি-ভাতাও, যা মূল বেতনের ৩০ শতাংশ।
সুন্দরবনের এই সব এলাকাগুলি দুর্গম হওয়ার কারণে সেখানে পুলিশের পক্ষে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু এই সুযোগে ঢুকে পড়তে পারে জঙ্গিরা। তাই এই সব অগম্য এলাকায় প্রযুক্তির সাহায্যে নজরদারির ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের উপকূল পুলিশের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল রাজ কানোজিয়া। শুক্রবার সিকিওরিটি ওয়াচ ইন্ডিয়া (এস ডব্লিউ আই), ভারত চেম্বার অব কমার্স এবং কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘সিকিওরিং কলকাতা’ নামে নিরাপত্তা বিষয়ক এক আলোচনা সভায় কানোজিয়া বলেন, “সুন্দরবনে গোয়েন্দা-তথ্য জানার ব্যাপারে আমরা এখনও অনেক পিছিয়ে। কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হল, গোয়েন্দা-তথ্য সরবরাহ করতে পারেন এমন লোকই আমরা পাচ্ছি না। আবার কিছু জায়গা এতটাই দুর্গম যে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করাই সম্ভব হচ্ছে না। আমরা এ রকম ন’টি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় শীঘ্রই বৈদ্যুতিন নজরদারি শুরু করছি। বৈদ্যুতিন নজরদারির জন্য একটি পৃথক কন্ট্রোল রুম-ও থাকবে। তা ছাড়া, যাতে আমরা নিয়মিত গোয়েন্দা-তথ্য পাই, সে জন্য সাধারণ মানুষ, বিশেষত মৎস্যজীবীদের সঙ্গে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে যোগাযোগ নিবিড় করার চেষ্টা করছি।” নৌবাহিনী ও উপকূলরক্ষী বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ১৫ জন জওয়ানকে ইতিমধ্যেই নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কানোজিয়া।
২৬/১১-র হামলায় দেখা গিয়েছে, জঙ্গিরা প্রতিবেশী দেশ থেকে মুম্বই পৌঁছেছিল জলপথ দিয়েই। ওই হামলার পরে গোটা দেশের জলপথ ও উপকূলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে ঢেলে সাজতে উদ্যোগী হয় কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলি। তখনই দেখা যায়, দেশের অন্যতম অরক্ষিত জায়গা হল সুন্দরবন। অনেকটাই তার ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য। পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিবেশী দেশ থেকে জলদস্যুরাও ইদানীং মাঝেমধ্যে ভারতের মৎস্যজীবীদের উপর আক্রমণ করছে। লুঠপাট তো আছেই, সেই সঙ্গে অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে।
সতর্কতা হিসেবে মাস দেড়েক আগে সুন্দরবনের হেমনগর এলাকায় নতুন সীমান্ত চৌকি তৈরি করে সেখানেই এখন প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা ট্রলারগুলিতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে ভারতে ঢোকার ছাড়পত্র। আগে যেটা করা হত নামখানায়। কিন্তু ততক্ষণে প্রতিবেশী দেশের নৌকাগুলি এ দেশে ঢুকে ১৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ফেলত বলে ঝুঁকি থাকত। তাই, এ বার আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরোনোর ঠিক পরেই হেমনগরে সেগুলির তল্লাশি হচ্ছে। বর্তমানে রাজ্যে ছ’টি উপকূলবর্তী থানা কাজ করছে। আরও আটটি থানা শীঘ্রই কাজ শুরু করবে। কানোজিয়া ছাড়াও এ দিনের আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্য পুলিশের |
এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) সুরজিৎ করপুরকায়স্থ, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মারুফ রাজা, অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার অরুণ রায় প্রমুখ। |