|
|
|
|
প্রতি মাসে হোম পরিদর্শনে এ বার কমিটি গড়ার নির্দেশ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
হোমগুলির হাল ফেরাতে এ বার আরও এক ধাপ এগোল রাজ্য। গুড়াপ কাণ্ডের পর থেকেই যদিও বেনিয়ম দেখলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল সরকার, শুরু হয়েছিল ঢাকঢোল পিটিয়ে হোম পরিদর্শন, তবু রাজ্যের অনেক হোমেই নানা অব্যবস্থার ছবি মিলছিল। সরকারি হোম থেকে আবাসিক পালানো বা নানা দুর্নীতি পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এমনকী মেদিনীপুরের সরকারি হোম থেকেও এর আগে একাধিকবার আবাসিক পালানোর ঘটনা ঘটে। এ সব রুখতেই এ বার নিয়মিত হোম পরিদর্শনের জন্য কমিটি তৈরির নির্দেশ দিল রাজ্য সরকার। জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অরিন্দম দত্ত বলেন, “সরকারি বা বেসরকারি প্রতিটি হোমের খুঁটিনাটি খোঁজ নিতে মাসে একবার করে হোম পরিদর্শন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মহকুমাশাসকদের। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদ মর্যাদার বা তার উপরের আধিকারিকদের পরিদর্শন করতে বলা হয়েছে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি হোক বা বেসরকারি, প্রতিটি হোমই নিয়মিত পরিদর্শন করতে হবে সরকারি আধিকারিকদের। রিপোর্ট জমা দিতে হবে রাজ্যেও। রাজ্য স্তরের কমিটিতে থাকবেন সচিব পদ মর্যাদার আধিকারিকেরা। আর জেলা স্তরে সরকারি আধিকারিকদের পাশাপাশি হোম সম্বন্ধে অভিজ্ঞ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যদেরও রাখতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক দেবকুমার ভট্টাচার্য বলেন, “কমিটি তৈরির পদক্ষেপ করা হচ্ছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
প্রশাসনির রিপোর্টে উঠে আসে, হোমের অব্যবস্থার জন্য সরকারি হোমের কর্মী সঙ্কট একটা বড় কারণ। বেশিরভাগ হোমেই একাধিক পদ শূন্য। এই শূন্য পদের কিছুটা যাতে পূরণ করা যায় সে জন্যও উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য সরকার। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত চুক্তির ভিত্তিতে কিছু পদে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার।
পশ্চিম মেদিনীপুরে সব মিলিয়ে ৩২টি হোম রয়েছে। তার মধ্যে ২টি সরকারি হোম। বাকিগুলি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত। সরকারি হোমদু’টি মধ্যে ১টি বিদ্যাসাগর বালিকা ভবন, অন্যটি ভবঘুরে আবাস। বিদ্যাসাগর বালিকা ভবনে বর্তমানে ২১৮ জন আবাসিক রয়েছেন। কিন্তু কর্মী সঙ্কট প্রবল। ৫০ জন কর্মীর মধ্যে ২৩টি পদই শূনা। মেডিক্যাল অফিসার নেই, ৩ জন রাঁধুনীর ১ জনও নেই, ৩ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের মধ্যে ১ জন রয়েছেন। এই হোমে স্কুলও রয়েছে। কিন্তু শিক্ষক নেই। রয়েছেন কেবল প্রধান শিক্ষক। ৪ জন সহ শিক্ষকের সমস্ত পদই শূন্য। ভবঘুরে আবাসে ৪০০ জন আবাসিক থাকার বব্যস্থা রয়েছে। বর্তমানে ২২৬ জন রয়েছেন। এখানেও ৫৭ জন কর্মীর মধ্যে ১৮টি পদ শূন্য। নেই চিকিৎসকও। প্রশাসনের আশ্বাস, এই দু’টি হোমে দুই চিকিৎসক-সহ ৩৩টি পদে চুক্তির ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগ করা হবে। সমাজ কল্যাণ দফতর জানায়, এই ৩৩টি পদে কর্মী আপাতত নিয়োগ হলে কর্মী সঙ্কট অনেকটাই কমবে। সমস্যাও অনেকটাই মিটবে বলে প্রশাসনের আশা।
কিন্তু বর্তমানে হোমের প্রধান সমস্যাগুলি কী? প্রশাসনের সাম্প্রতিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, সরকারি হোমে কর্মী সঙ্কটই অন্যতম সমস্যা। বিদ্যাসাগর বালিকা ভবনে রাঁধুনী না থাকায় স্ব-সহায়ক দলের একজন মহিলাকে দিয়ে রান্না করানো হয়। কিন্তু তাঁর পক্ষে ২১৮ জনের রান্না করা দুষ্কর। তাই এই কাজে হাত লাগাতে হয় আবাসিকদেরও। এছাড়া রয়েছে আবাসিকদের উপর যথাযথ নজরদারির অভাব। চিকিৎসকের অভাব। এমনকী ঝাড়ুদার না থাকায় পরিচ্ছন্নতারও অভাবও রয়েছে। আর বেসরকারি হোমগুলির ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা সময়ে টাকা না পাওয়া। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে প্রথমে নিজেদের টাকাতেই আবাসিকদের থাকা-খাওয়া-পোশাক পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করতে হয়। কখনও ৬-৮ মাস বা কখনও ১ বছর পর সরকার সেই টাকা দেয়। ফলে কোনওরকমে চালিয়ে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়েছে তাদের। প্রশাসসন জানায়, এই ব্যবস্থার বদল আনতেই নিয়মিত পরিদর্শনের উদ্যোগ।
এ ছাড়া শুধুমাত্র বেসরকারি হোমের উপর নির্ভরশীল না হয়ে প্রতিবন্ধীদের জন্য জেলায় অন্তত ৪টি হোম ও এড্স আক্রান্তদের জন্য ১টি হোম তৈরির ব্যাপারেও উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। প্রতিবন্ধীদের জন্য জেলায় ১১টি হোম রয়েছে। তবে সবই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নিয়ন্ত্রিত। ২০১০ সালেই এ বিষয়ে ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড প্রোটেকশন সোসাইটির অনুমোদন নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। এড্স আক্রান্তদের হোমটি দাসপুরে করার কথা উল্লেখও ছিল প্রস্তাবে। এখনও অবশ্য সেই প্রস্তাব গৃহীত হয়নি। যাতে এবার এ বিষয়ে রাজ্য সরকার পদক্ষেপ করে সে জন্য প্রশাসনিকভাবে উদ্যোগ গ্রহন করা হচ্ছে। |
|
|
|
|
|