কলেজ যখন রণাঙ্গন ২...
রাজনীতি থাক, সঙ্গে থাক পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ
প্রতি বারের মতো এ বছরও ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হতে না হতেই অশান্তি শুরু হয়ে গিয়েছিল বিভিন্ন কলেজে। মেদিনীপুর, খড়্গপুর, সাঁকরাইল, ডেবরা, হিজলিপ্রতিটি কলেজেই ছাত্র সংঘর্ষ হয়েছে। কোথাও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) সঙ্গে ছাত্র পরিষদের (সিপি) সংঘর্ষ হয়েছে। কোথাও টিএমসিপি’র সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে এসএফআই। এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ। এখানে খোদ অধ্যক্ষই আক্রান্ত হয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে টিএমসিপি’র বিরুদ্ধে।
বিভিন্ন মহল মনে করছে, ‘দখলদারির মানসিকতা’ই সংঘর্ষে ইন্ধন দিচ্ছে। আগে জেলা জুড়ে ‘দাপট’ ছিল এসএফআইয়ের। পালাবদলের পরেও সেই এক মানসিকতা। এসএফআইয়ের জায়গায় শুধু এসেছে টিএমসিপি। প্রায় প্রতিটি কলেজেই টিএমসিপি’র প্রভাব বেড়েছে। সংগঠনও ‘মজবুত’ হয়েছে। টিএমসিপি সংগঠন বাড়িয়ে এসএফআইকে ‘একঘরে’ করার চেষ্টা করছে। আর এসএফআই চাইছে ‘জমি’ ধরে রাখতে। মেদিনীপুর, খড়্গপুর, সবংয়ের মতো যে সব জায়গায় সিপি’র সংগঠন রয়েছে, তারাও ‘জমি’ ধরে রাখতে মরিয়া। আর এই পরিস্থিতিতেই ঘটছে একের পর এক অনভিপ্রেত ঘটনা। জখম হচ্ছেন কলেজ পড়ুয়ারা। মেদিনীপুর কলেজের ভোটকে ঘিরে গত বছরও জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে ‘হামলা’র অভিযোগ উঠেছিল। এ বার কমার্স কলেজের নির্বাচন ঘিরে সেই একই অভিযোগ উঠেছে টিএমসিপি’র দিকেই। যদিও তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের বক্তব্য, এ সব সাজানো ঘটনা। নির্বাচনের আগে ‘সহানুভুতি’ আদায়ের চেষ্টা।
শুধু ভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের মধ্যে মারামারি নয়, ‘পরিবর্তনে’র পরে টিএমসিপি’র গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের জেরেও একাধিক কলেজে অশান্তি ছড়িয়েছে। মেদিনীপুর কলেজের কথাই ধরা যাক। প্রায় এক দশক পর গত বছরই এই কলেজের ছাত্র সংসদ দখল করে বাম-বিরোধীরা। ক্ষমতায় আসে টিএমসিপি। তাও গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে ছেদ পড়েনি। সংসদের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি বা অন্য পদ কারা পাবেন, তা নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বচসা বাধে। পরিস্থিতি দেখে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, দু’পক্ষই সাধারণ সম্পাদক হিসেবে একটি করে নাম প্রস্তাব করবে। তার উপর ভোটাভুটি হবে। যে সব থেকে বেশি ভোট পাবে, সেই সাধারণ সম্পাদক হবেন। সেই মতো দুই গোষ্ঠীই নাম প্রস্তাব করে। ৫২ জন ভোট দেন। একপক্ষ পেয়েছিল ২৫টি ভোট। অন্য পক্ষ ২৭টি। এখানেই শেষ নয়, এক সময় সংসদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার তোড়জোড়ও শুরু করেছিল ‘বিক্ষুব্ধ’ গোষ্ঠী। টিএমসিপি’র জেলা নেতৃত্বও মানেন, এমন ঘটনা না হলেই ভাল হত।
যাঁদের জন্য কলেজ, সেই ছাত্রছাত্রীরা কি এ সব চান? বা তাঁদের সমস্যা-দাবির কথা কি ছাত্র সংগঠনগুলি ভাবে? বরং ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য, কলেজে পড়তে এসে অনেকেই ‘হিংসা’র শিকার হচ্ছেন। খড়্গপুর কলেজের এক ছাত্রীর কথায়, “কলেজে অশান্তি হলে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশটাই নষ্ট হয়। রাজনীতি থাকুক। সংসদ থাকুক। তবে হিংসা বন্ধ হোক। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলেই উদ্যোগী হন।” তাঁর বক্তব্য, “অশান্তি এড়াতে ছাত্র সংগঠনগুলি যেমন দায় এড়াতে পারে না, তেমন কর্তৃপক্ষেরও কিছু পদক্ষেপ করা উচিত। ছাত্রছাত্রীদের দাবি নিয়ে আন্দোলন হতেই পারে। তবে সে ক্ষেত্রে উচ্ছৃঙ্খলা কাম্য নয়।”
রঞ্জন চক্রবর্তী,
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অশান্তি অনভিপ্রেত। শান্তিপূর্ণ ভাবে কলেজে নির্বাচন হোক। ছাত্রছাত্রীরা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করুক।

• উদয়চাঁদ পাল,
ক্যাম্পাসে অশান্তি করা অনুচিত। পড়াশোনার পরিবেশ বজায় রাখতে সকলকে উদ্যোগী হতে হবে। সমস্যার কথা লিখিত ভাবেও জানানো যায়।

• গৌতম মাইতি,
আমরা চাই, ক্যাম্পাসে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ থাকুক। ছাত্র সংগঠনগুলির উচিত, ছাত্রছাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধা, দাবি-দাওয়া কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরা। সংঘর্ষ, অশান্তি এড়াতে সকলকে সংযত থাকতে হবে।

• পূজা বাগমার,
পড়াশোনার পরিবেশ বজায় রেখে ছাত্র সংগঠনগুলি আন্দোলন করুক। অধ্যক্ষ-শিক্ষক-ছাত্র নিগ্রহ সমর্থন করা যায় না। বিশৃঙ্খলা এড়াতে সকলকে উদ্যোগী হতে হবে।
বেলদা কলেজের এক ছাত্রের কথায়, “ছাত্র সংগঠনগুলির উচিত, সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কথা ভাবা। তাঁদের দাবি-দাওয়া কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরা।” তাঁরও মত, “সকলকে আরও সংযত হতে হবে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষকে ‘কঠোর’ হতে হবে।” ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য, অধ্যক্ষ-শিক্ষক-ছাত্র নিগ্রহের ঘটনাকে কেউ সমর্থন করতে পারে না। এ ধরনের ঘটনায় বরং উদ্বেগ বাড়ে। তার প্রভাব পড়ে কলেজের পঠনপাঠনে। ডেবরা কলেজের এক ছাত্র বলেন, “পড়াশোনার সুস্থ পরিবেশ বজায় রেখেই আন্দোলন চলতে পারে। কিন্তু, তা না- করে একদল ছাত্র কলেজ ক্যাম্পাসে রাজনীতিকেই অধিক গুরুত্ব দেয়। এতেই গোলমাল বাধে।”
এই গোলমালটাই চান না ছাত্রছাত্রীরা। তাঁরা চান শিক্ষাঙ্গন যেন কখনই রণাঙ্গন না হয়ে ওঠে। সেখানে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকুক। রাজনীতিও থাকুক। তবে হিংসা নয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.