রবিবার মেহতাব হয়তো সুইপার
‘আমার কোচিংয়ে ইস্টবেঙ্গলের সেরা ম্যাচ চার্চিলের বিরুদ্ধেই’
ফেড কাপ ফাইনাল খেলা তাঁর কাছে জলভাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইস্টবেঙ্গলকে তিন মরসুম কোচিং করাচ্ছেন, তিনবারই লাল-হলুদ ফেড কাপ ফাইনালে। তা সত্ত্বেও মর্গ্যান মনে করছেন, বৃহস্পতিবার রাতে চার্চিল ব্রাদার্সকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠাটাই তাঁর কোচিংয়ে ইস্টবেঙ্গলের সেরা পারফরম্যান্স। “সাতাশ মাস কোচিং করাচ্ছি, গত কালের ম্যাচটাকেই সবার আগে রাখব। টিমস্পিরিট, চাপ কাটিয়ে জেতার ক্ষমতা, দু’ঘণ্টা ধরে উজাড় করে দেওয়া...নাহ, সব মিলিয়ে আর কোনও ম্যাচ ধারে-কাছে দেখতে পাচ্ছি না,” বলে দিলেন মর্গ্যান।
হট ফেভারিট সুভাষ ভৌমিকের চার্চিলকে হারানোর পর মুহূর্তেই মর্গ্যান জানিয়েছিলেন, জয়ের রাতটা উপভোগ করতে চান। ভোর হতেই তিনি আবার আপাদমস্তক পেশাদার। ডিফেন্সের দুই স্তম্ভ ওপারা এবং গুরবিন্দর কার্ড সমস্যায় ফাইনালের বাইরে চলে যাওয়ায় লাল-হলুদ শিবির কার্যত হাত-পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসেছে। মেহতাবের মতো স্পিরিটেড ফুটবলারও বলছেন, “ওপারার না থাকাটা বিরাট ক্ষতি। কী ভাবে পূরণ হবে বুঝতে পারছি না।” তখন মেহতাবদের অকুতোভয় ব্রিটিশ কোচ এ সব ভেবে রাতের ঘুম নষ্ট করতে চাইছেন না। বললেন, “আমার তো আরও দু’জন স্টপার আছে। হোটেলেই আছে। রাজু গায়কোয়াড় জাতীয় দলের ফুটবলার, অর্ণব মণ্ডল গতবার খুব ভাল খেলেছে। ওদের এনেছি তো এ রকম সিচুয়েশনের জন্যই। ওরা খেলবে। ওদের ওপর আমার আস্থা আছে।”
ইস্টবেঙ্গলের টিম হোটেলে মর্গ্যানের ছবি তুলেছেন শঙ্কর নাগ দাস
কিন্তু কালীঘাট মিলন সংঘের বিরুদ্ধেই রাজু-অর্ণব জুটি যে ভাবে তিন গোল হজম করিয়েছে দলকে? ফাইনালে পারবে? হেসে ওঠেন হাল সিটি-র প্রাক্তন ডেভলপমেন্ট কোচ। হাতে ধরে রাখা আই-প্যাডটা টেবিলে রেখে, চশমাটা নাকের সামনে আরও ঝুঁলিয়ে মর্গ্যান: কেন পারবে না? একটা ম্যাচে খারাপ খেললেই কি সব ম্যাচ কেউ খারাপ খেলে? আমারও তো সব সিদ্ধান্ত কাজ দেয় না! রাজু যত না ক্লাবের হয়ে খেলেছে তার চেয়ে বেশি খেলেছে আন্তর্জাতিক ম্যাচ। নেহরু কাপে বিদেশি স্ট্রাইকার সামলেছে। এখানে পারবে না কেন? অর্ণবও বিদেশির বিরুদ্ধে খেলেছে।
ছ’দিনে চারটে ম্যাচ। সে জন্য শুক্রবার প্র্যাক্টিস ছিল না । চিডিদের সবাইকে ছুটি দিয়েছিলেন। কিন্তু পাশাপাশি ফাইনালে ওঠার পরেই ফুটবলারদের কথা বলার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন মর্গ্যান। ফাইনালের আগে সামান্যতম ‘সমস্যা’ও টিম হোটেলে ঢুকতে দিতে নারাজ লাল-হলুদ কোচ। চার্চিল ম্যাচের মহানায়ক লালরিনডিকা তাঁর নামের অর্থ মিজো ভাষায় কী, (‘লাল’ শব্দের অর্থ রাজা আর ‘ডিকা’ মানে অধিকার।) তা মিডিয়াকে বলতে গিয়েও কোচের ধমক খেলেন। হোটেলের লবিতে সাংবাদিক দেখলেই এড়িয়ে যাচ্ছিলেন সৌমিক, খাবরারা।
ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে সাতাশ বছর টিম ম্যানেজার হয়ে দেশ-বিদেশে ঘুরছেন স্বপন বল। অসংখ্য কোচ সামলেছেন, দেখেছেন খুব কাছ থেকে। বলছিলেন, “মর্গ্যানের টিম চালানোর স্টাইলটা অনেকটা প্রদীপদার (পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়) মতো। কখনও ধমকে-চমকে, কখনও বন্ধুর মতো মিশেএ ভাবেই দল চালান মর্গ্যান। কারও কোনও ব্যক্তিগত বিষয়ে দলের ক্ষতি না হলে তাতে মাথা গলান না। সবচেয়ে বড় কথা, স্কিল নয়, প্রথম দল গড়ার ব্যাপারে প্রাধান্য দেন ক্ষমতাকেমানে যে শেষ পর্যন্ত ম্যাচে লড়বে।”
গ্রুপ লিগ থেকে কেঁদে-ককিয়ে ওঠা। তার পরেই চার্চিল-বধ। কী ভাবে অসাধ্যসাধন হল? ইস্টবেঙ্গল কোচ বললেন, “আমি জানতাম বেটো যে জায়গাটায় খেলে সেখানে ওকে আটকানোর সেরা অস্ত্র আমার হাতে ছিল মেহতাব। ওকে লাগিয়ে দিয়েছিলাম। হেনরির দৌড়টা আটকাতে বলেছিলাম ওপারাকে। আর সবাইকে বলে দিয়েছিলাম, গোল দিতে না পারি, গোল খাওয়া চলবে না। এক সময় ধরে নিয়েছিলাম ম্যাচটা টাইব্রেকারে যাচ্ছে। কিন্তু ডিকার গোলটা সেটা হতে দেয়নি।” ফাইনালেও কি একই স্ট্র্যাটেজি? মর্গ্যান চশমা তুলে হেসে ফেললেন। “আমি টিমে সাধারণত খুব একটা পরিবর্তন করি না। খেলার স্টাইলও একই থাকে। তবে স্ট্র্যাটেজিটা উল্টো দিকের দল দেখে ঠিক করি।”
তা হলে দু’ঘণ্টারও বেশি সময় সুইমিং পুলের ধারে বসে আই-প্যাডে কীসের খোঁজ করছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ? কী লিখে রাখছিলেন পাশে রাখা কাগজে? সুইমিং পুলে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ নিষেধ ছিল। কিন্তু জানা গেল, ফাইনালে রক্ষণ সংগঠনে কী করা উচিত তা নিয়ে নানা পারমুটেশন-কম্বিনেশন করছিলেন ব্রিটিশ কোচ। চুঁইয়ে যা খবর বেরিয়ে আসছে, তাতে রাজু-অর্ণবকে সামনে রেখে মেহতাবকে সুইপার করে দিয়ে নতুন স্ট্র্যাটেজির কথা নাকি ঘুরছে মর্গ্যানের মাথায়। না কি খাবরাকে দেখা যাবে নতুন ভূমিকায়? নানা অঙ্ক কষেই চলেছেন মর্গ্যান। ওই জন্যই তো এই মুহূর্তে তিনি ভারতীয় ক্লাব ফুটবলের চাণক্য!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.