ফ্লাওয়ার শো হয়। ফ্যাশন শো হয়। তেমনই হঠাৎ করে যৌথ সিক্সার্স শো-ও যে হতে পারে, শুক্রবারের প্রেমদাসায় দেখিয়ে গেলেন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের ‘টু ডব্লিউ’। ওয়াটসন আর ওয়ার্নার।
দুপুর-সন্ধে মিলিয়ে চারটে ইনিংস হল প্রেমদাসার একই পিচের ওপর। চার বারই বল ওপেন করেছে স্পিনার। মর্মার্থ খুব সহজ: বল পড়ে ঘুরছে। এরই মধ্যে শেষ ইনিংসে বল করার সুযোগ পেয়েছিল ধোনির ভারত। যখন স্পিনের সবচেয়ে অনুকুল সময়। শেন ওয়াটসন আর ডেভিড ওয়ার্নার সেটাকেই বেছে নেন ছক্কার প্রদর্শনী বসানোর সময় হিসেবে। অস্ট্রেলীয় ইনিংসে চার-ছয়ে একশো রান হল। তার মধ্যে ছক্কা দশটা। টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও মাত্র ১৪০ তাড়া করতে গিয়ে প্রতিপক্ষ দশটা ছয় মারে না। শুক্রবারটাই একটা আজব দিন ছিল। যে দিন তার টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে অন্যতম একটা বিচ্ছিরি ম্যাচ হারল ভারত। ৩২ বল বাকি থাকতে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হেরে যাওয়া, এটা প্রায় টেস্ট ম্যাচে ৪২ অলআউট হয়ে যাওয়ার সমতুল্য। |
ছক্কার এক-একটা হিট আকাশে উড়ে উড়ে বাইরে পড়ছিল অসীম আশঙ্কাকে বুকে নিয়ে। আজকের প্রথম ম্যাচটা শেষ ওভারে জিতে পাকিস্তান রয়েছে ভীষণ উদ্দীপিত। রোববার তাদের সামনে ভারত। পাকিস্তানিরাও যদি এ রকম কোনও প্রদশর্নীর আয়োজন করে, তা হলে সে দিনই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে ছুটি। আর নিউজ চ্যানেলে বসে সেটার ব্যাখ্যার সুযোগ পাবেন ভারতের এক প্রবীণ ক্রিকেটারমোহিন্দর অমরনাথ। এ বার ধোনির সমালোচনা করলে তো আর তাঁর চাকরি যাবে না। এক অপরাধে যে দু’বার শাস্তি হয় না।
সুপার এইটে ভারত যে দিকে পড়েছে, সেটা প্রকৃত ‘গ্রুপ অব ডেথ’। তার চারটে দলকেই শুক্রবার দেখা গেল। যার প্রথমটা সবুজ বনাম এত কাছাকাছি সবুজ যে, ফুটবল হলে রেফারি নির্ঘাৎ এক দলকে জার্সি খোলাতেন। দ্বিতীয় ম্যাচটা ভারত-অস্ট্রেলিয়া। চারটে টিমের মধ্যে ভারতকে টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে অদক্ষ আর বুড়োটে লাগল। ধোনি অবশ্য সাংবাদিক সম্মেলনে বলে গেলেন, “এমন শোচনীয় হারের জন্য দায়ী বৃষ্টি। ওদের ইনিংসের শুরুতে বৃষ্টি হওয়াতে আমাদের স্পিনার বল গ্রিপ করতে পারেনি। হয় ফুলটস দিয়েছে, নয় শর্ট পিচ ফেলেছে।” কিন্তু ভারতীয় ব্যাটিং? সেই সময় তো কোনও বৃষ্টির ব্যাপার ছিল না? ব্যাটিংয়ে মাত্র ১৪০ কেন? ধোনি এ বার বললেন, “হ্যাঁ, ওখানে আরও ২০-২৫ রান বেশি করা উচিত ছিল।” |
কোথাও যেন মনে হল ম্যাচ হেরেও কড়া আত্মবিশ্লেষণ করা থেকে দূরে থাকছেন ভারত অধিনায়ক। কী ফিটনেসে, কী স্কিলে, অসম্পূণর্র্ লাগল ধোনির ভারতকে। ভারত অধিনায়ক বৃষ্টির দোহাই দিলেন। কিন্তু স্পিনাররা বল গ্রিপ করতে না পারুক, পেসাররাও তো কোনও আঁচড় কাটতে পারল না। প্রশ্ন উঠে গেল দলে কয়েক জনের উপস্থিতি নিয়ে। যেমন:
যুবরাজ সিংহ: আদৌ কি সুস্থ? বিশ্বকাপ খেলার মতো মারমার কাটকাট ফিটনেস কি হয়েছে? নাকি তাঁকে রেখে দলের ক্ষতিই হচ্ছে?
জাহির খান: এ বছর আইপিএল সমেত ৩৮ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তিন উইকেট পেয়েছেন মাত্র দু’বার। ইকনমি রেট দশেরও ওপরে। এ দিন তাঁর বলে এলবিডব্লিউয়ের জোরালো আবেদন নাকচ হল ঠিকই, কিন্তু এই গতি নিয়ে তিনি নতুন বলে ভাঙবেন কী করে?
বীরেন্দ্র সহবাগ: তাঁকে এ দিন বসিয়ে রাখাটা কি বিতর্কিত হতে পারে? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় দলের এক ক্রিকেটার প্রশ্ন তুলেছেন মনোজ তিওয়ারি যদি সেঞ্চুরি করে নিয়মিতরা টিমে আসায় পনেরোটা ম্যাচ বসে থাকতে পারে, তা হলে সহবাগের জন্য রোহিত শর্মাকে বসানো হল না কেন? |
টিম ইন্ডিয়া সাধারণ ভাবে প্র্যাক্টিস করে সবচেয়ে কম। বেশির ভাগ দিনই ঐচ্ছিক অনুশীলন থাকে। ম্যাচের পরের দিন তো করেই না। ন’উইকেটে হারার পর অবশ্য মিডিয়া বিজ্ঞপ্তি এল, শনিবার দুপুর তিনটে থেকে প্র্যাক্টিস। ‘টু ইউ’ উমর আকমল আর উমর গুল যে ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন তাতে শেষ বেলার বাড়তি প্র্যাক্টিসেও কাজ হবে তো?
|