|
|
|
|
ঘর গুছিয়ে এখনও তৈরি নয় দল, ক্ষুব্ধ আডবাণী |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • সুরজকুণ্ড (হরিয়ানা) |
কয়েক দশক ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা দলের বিরুদ্ধেই আজ যেন ক্ষোভ সামলাতে পারছেন না লালকৃষ্ণ আডবাণী।
দীর্ঘ কয়েক দশকের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় প্রবীণ এই বিজেপি নেতা বুঝতে পারছেন, কংগ্রেস তথা ইউপিএ-র এখন যা অবস্থা, তাতে নির্ধারিত সময়ের আগেই হয়ে যেতে পারে লোকসভার ভোট। অথচ দল এখনও অপ্রস্তুত! দলে ঐক্য চুলোয়, নেতায়-নেতায় লড়াই। নতুন বন্ধুরাও হাত বাড়াচ্ছেন না। প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি নিয়ে সরব হবে কী, পাল্টা দুর্নীতির অভিযোগে জেরবার বিজেপি নেতৃত্ব! স্বয়ং বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীর বিরুদ্ধে উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। এই অবস্থায় দল কী করে কংগ্রেসের বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প হয়ে উঠবে, তা নিয়েই উদ্বিগ্ন এই প্রবীণ নেতা।
জিন্না-বিতর্কের সময়ে দলে আরএসএসের প্রভাবের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে পদ থেকে সরে গিয়েছিলেন আডবাণী। অথচ গডকড়ীর হাত ধরে আজও দলের নিয়ন্ত্রণ সঙ্ঘের হাতে। লোকসভা নির্বাচন এগিয়ে আসছে, অথচ বিজেপি এখনও এককাট্টা হতে পারছে না বলে একাধিক বার সরব হয়েছেন আডবাণী। অনেকের মতে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বাসনা এখনও ছাড়তে পারেননি আডবাণী। কিন্তু সঙ্ঘ তাঁকে ‘মেন্টর’-এর ভূমিকাতেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছে। সুরজকুণ্ডের বৈঠকের শেষ দিনে ‘মেন্টর’-এর ভূমিকাই পালন করলেন তিনি। এবং দলের ক্ষয়িষ্ণু চেহারাটিই আজ মেলে ধরলেন সকলের সামনে। ক্ষোভের সঙ্গেই।
বোঝালেন, সনিয়া গাঁধী-মনমোহন সিংহের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-মূল্যবৃদ্ধি আর খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে লড়াইয়ে নামার আগে নিজেদের ঘর সামলানো প্রয়োজন। শুধু কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললেই হবে না, নিজেদের ইতিবাচক বিকল্প হিসেবে তুলে ধরতে হবে। সে জন্য দলে একতা চাই। নেতায়-নেতায় খেয়োখেয়ি বন্ধ করতে হবে। সর্বোপরি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে নেমে নিজেদের গায়ে যাতে দুর্নীতির দাগ না লাগে, তা সুনিশ্চিত করতে হবে। সব রাজনৈতিক দল কম-বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত, বিজেপির ক্ষেত্রে সেই ধারণা বদলানোর কথা বলে পরোক্ষে গডকড়ীকেও সতর্ক করে দিলেন এই প্রবীণ নেতা।
আডবাণী ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, “ক্ষোভের এই বহিঃপ্রকাশ হবে না কেন? অটলবিহারী বাজপেয়ীর পর আডবাণীই দলের সর্বোচ্চ নেতা। নিজের হাতে দলকে তৈরি করেছেন। কিন্তু আজ দলের এ কী দশা! আরএসএস যাঁকে সভাপতি পদে এনে বসিয়ে দিয়েছে, আজ তাঁর বিরুদ্ধেই একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে!” সেই সঙ্গেই তাঁর ব্যাখ্যা, “এনডিএতে একটি নতুন শরিকও আসছে না। উপরন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতারা বিরোধী দলের জায়গা কেড়ে নিচ্ছেন! মানুষ কংগ্রেসের প্রতি আশাহত হতে পারে, কিন্তু বিজেপির প্রতি আশা রাখবে কী করে?”
গডকড়ী শিবিরের নেতারা আডবাণীর সমালোচনা করে বলছেন, “উনি যদি এতই কথা বলেন, তা হলে ঘোষণা করছেন না কেন, প্রধানমন্ত্রী পদের লড়াইয়ে তিনি নেই?” কিন্তু আডবাণী-ঘনিষ্ঠ নেতাদের বক্তব্য, “এর আগে উত্তরপ্রদেশের মতো বড় রাজ্য নিছক ভুল কৌশলের জন্য হেলায় হারিয়েছেন গডকড়ী। আডবাণী যখন আজ লোকসভার জন্য কেন্দ্র ধরে ধরে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করে দিতে বলছেন, তখন তাঁর কোনও হেলদোল নেই!” |
|
|
|
|
|