|
|
|
|
গুরুত্ব কমিয়ে মোদীকে ব্রাত্য করে রাখল বিজেপি |
অনমিত্র সেনগুপ্ত • সুরজকুণ্ড (হরিয়ানা) |
মাত্র মাস চারেক আগের কথা। মুম্বইয়ে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে তিনিই ছিলেন ‘চোখের মণি’।
অথচ একেবারে অন্য ছবি দেখল সুরজকুণ্ড।
জাতীয় কর্মসমিতি এবং পরিষদের তিন দিনের বৈঠকে কার্যত ব্রাত্য হয়ে রইলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে পরবর্তী লোকসভা ভোটে যাওয়ার কথা উঠছিল। জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে বিজেপি নেতৃত্ব বুঝিয়ে দিলেন, বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত করে উঠতে পারেনি দল।
আগামী লোকসভা নির্বাচনে মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে দেখতে চায় দলেরই একটি অংশ। মোদীর সমর্থনে ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছে সঙ্ঘ পরিবারও। রাজ্যে ভোটের মুখে মোদীও ব্যক্তিগত মহলে জানিয়েছিলেন, তাঁর নাম প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে ঘোষণা না করলেও চলবে। অন্তত বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব গুজরাত নির্বাচনের আগে আভাস দিন যে, মোদীর নেতৃত্বেই লোকসভা নির্বাচনে লড়বে দল। মোদীর যুক্তি, সে ক্ষেত্রে মাস দু’য়েক পরের বিধানসভা ভোটে বিপুল ভাবে জেতার সম্ভাবনা আছে দলের। কিন্তু কর্মসমিতি ও পরিষদের তিন দিনের বৈঠক শেষে প্রশ্ন উঠছে, সত্যিই কি মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে দেখতে চায় সঙ্ঘ?
বিজেপির এ বারের কর্মসমিতি ও পরিষদের বৈঠকে ‘উন্নয়ন পুরুষ’ হিসেবে তুলে ধরা হল মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চহ্বাণকে। উন্নয়নের প্রশ্নে দফায় দফায় মধ্যপ্রদেশ সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করেন শীর্ষ নেতৃত্ব। আর্থিক মন্দার মধ্যেও কৃষিতে বৃদ্ধির হার ৪ থেকে ১৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়ায় শিবরাজকে শংসাপত্র দেন নিতিন গডকড়ী। লালকৃষ্ণ আডবাণীও একাধিক বার মধ্যপ্রদেশ সরকারের তারিফ করেন। অথচ উন্নয়নের সূচকে অনেক উপরে থাকা গুজরাত কার্যত উপেক্ষিতই রইল দলীয় নেতৃত্বের বক্তব্যে।
মোদী শিবির অবশ্য মনে করছে, আসলে এখনই মোদীর নাম প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করতে নারাজ সঙ্ঘ পরিবারই। কেন না তাতে আখেরে সুবিধা হবে কংগ্রেসের। মোদীর কট্টর ভাবমূর্তি ও গোধরা-জুজু দেখিয়ে ফের ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে এক ছাতার তলায় আনার জন্য ঝাঁপাবে কংগ্রেস। মোদীর নামে এনডিএ-র জোটে আসতে চাইবেন না নীতীশ বা বিজু পট্টনায়করা। তা ছাড়া মোদীর উত্থানে আপত্তি আছে দলের অন্য অনেকেরও। ফলে পরিষদের বৈঠকে প্রথম দিন নিজের রাজ্য সম্পর্কে বলা ছাড়া জাতীয় ইস্যুতে কার্যত ব্রাত্য করে রাখা হয় তাঁকে। এমনকী গতকাল পরিষদের বৈঠকে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক নিয়ে মোদী-সহ অন্য মুখ্যমন্ত্রীদের বক্তব্য রাখার কথা থাকলেও ‘সময়ের অভাবে’ তা বাতিল করে দেন গডকড়ী। বাধ্য হয়ে দর্শকাসনে বসে থাকা মোদী অনুষ্ঠান প্রাঙ্গন ছেড়ে চলে যান। দলের এক নেতার কথায়, “দলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকেরা মোদীর বক্তব্য শোনার জন্য উদ্গ্রীব। কিন্তু বলার সুযোগ পেলেন না মোদী!” কর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হওয়ায় বিজেপি নেতৃত্ব গত কাল আশ্বাস দেন, শুক্রবার, শেষ দিনে রাজনৈতিক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নেবেন মোদী। কিন্তু সেই সুযোগও তাঁকে আজ দেননি দলীয় নেতৃত্ব। পরে অবশ্য জনসভায় বক্তব্য রাখেন মোদী।
প্রশ্ন উঠছে, কী এমন হল যে এ ভাবে মোদীকে কার্যত ব্রাত্য করে রাখল বিজেপি? অনেকের মতে, এর পিছনে একাধিক কারণ আছে। কর্মসমিতির প্রথম দিনে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মোদীকে জাতীয় রাজনীতিতে আরও গুরুত্ব দেওয়ার জন্য দাবি ওঠে। তাতে উদ্বেগ বাড়ে নেতৃত্বের। সকলের জন্য উন্মুক্ত পরিষদের বৈঠকে মোদী-পন্থীদের দাবি আরও জোরালো হতে পারে, এই আশঙ্কায় কোনও মুখ্যমন্ত্রীকেই সে ভাবে বলার সুযোগ দেয়নি দল। তা ছাড়া, কট্টর ভাবমূর্তির জন্য দল ও এনডিএ শরিকদের একাংশ মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে নারাজ। শরিকদের ইতিবাচক বার্তা দিতেই দলের একাংশ তুলনায় ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি সম্পন্ন শিবরাজ সিংহ চহ্বাণকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। |
|
|
|
|
|