|
|
|
|
ভর্তুকির টাকা এ বার সরাসরি যাবে ব্যাঙ্কে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
অর্থনীতির স্বাস্থ্য ফেরাতে ক’দিন আগেই ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি ও রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ছাঁটাই করেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। অপচয় বন্ধ করে ভর্তুকির বোঝা কমাতে দ্রুততার সঙ্গে এখন আরও সংস্কার চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর পরবর্তী লক্ষ্য, সামাজিক প্রকল্পের অর্থ সরাসরি উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক আক্যাউন্টে পৌঁছে দেওয়া। এ ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প রূপায়ণের জন্য আজই একটি চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
পরে তাঁর সচিবালয় সূত্রে বলা হয়েছে, সামাজিক প্রকল্পের অর্থ এ বার গোটা দেশের মানুষের কাছে ‘ইলেকট্রনিক ক্যাশ ট্রান্সফার’ পদ্ধতিতে পৌঁছে দেবে সরকার। একশো দিনের কাজ প্রকল্পের মজুরি, স্কলারশিপ, বার্ধক্য পেনশন, জননী সুরক্ষা ভাতার মতো আর্থিক সুবিধার টাকা সরাসরি পাঠানো হবে উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে। এর মাধ্যমে গণবণ্টন ব্যবস্থায় দুর্নীতি রোধ করে স্বচ্ছতা আনা ও ভর্তুকির বোঝা কমানো সম্ভব হবে আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী। সে জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটির সময় বেঁধে রূপায়ণ চাইছেন তিনি। আর তাই প্রকল্প রূপায়ণের রূপরেখা রচনা করে যে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়া হয়েছে, তার নেতৃত্ব দেবেন স্বয়ং মনমোহন।
দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কেন্দ্রের ভর্তুকি ও সামাজিক প্রকল্প বাবদ অর্থের অপচয় নিয়ে অভিযোগ নতুন নয়। একদা রাজীব গাঁধী বলেছিলেন, কেন্দ্র ১ টাকা খরচ করলে আখেরে মানুষের কাছে ২০ পয়সা পৌঁছয়। কেন না, ভুয়ো রেশন কার্ড থেকে শুরু করে গণবণ্টন ব্যবস্থায় যেমন প্রচুর ফাঁকফোকর রয়েছে, তেমনই সামাজিক প্রকল্পের টাকা বহু ক্ষেত্রে ফড়েরা হাতিয়ে নেয় বলেও অভিযোগ। ফলে সরকার প্রকৃতপক্ষে যা খরচ করে, তার অনেকটাই অপচয় হয়ে যায়। সেই ছিদ্র বন্ধ করতে পারলে স্বাভাবিক ভাবেই ভর্তুকির বোঝা কমবে। যা কি না সরকারের এখন সব থেকে বড় মাথাব্যথা।
সরাসরি ক্যাশ ট্রান্সফারের ভাবনার জন্ম সেখান থেকেই। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের কথায়, “খাদ্য, পেট্রোলিয়াম ও সার বাবদ ভর্তুকি সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে ভর্তুকির বোঝা অনেকটাই কমে যাবে। যার অর্থ, সরকারের আর্থিক ঘাটতি কমানো সম্ভব হবে।”
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, মনমোহনের এই সংস্কারের পদক্ষেপের একটি সামাজিক এবং রাজনৈতিক দিকও রয়েছে। প্রস্তাবিত এই ব্যবস্থা যেমন ভর্তুকির বোঝা কমাবে, তেমনই উপভোক্তারা তাঁদের প্রাপ্য টাকা পুরোটাই পাবেন। ফলে একশো দিনের কাজের মতো প্রকল্পে আর তছরুপ হবে না। সরকারের এই প্রকল্পের সুষ্ঠু রূপায়ণের মাধ্যমে আম-আদমিকে খুশি করে রাজনৈতিক ফসল তুলতে পারবে কংগ্রেসও।
বস্তুত, ভর্তুকি ও সামাজিক প্রকল্পের অর্থ সরাসরি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের শুরু থেকেই সক্রিয় কেন্দ্র। মূলত সে কারণেই অভিন্ন পরিচয়পত্র তথা আধার কার্ড দেওয়ার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। আধার নম্বর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে জুড়ে ক্যাশ ট্রান্সফার পদ্ধতি প্রয়োগ
করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, পঞ্জাব, রাজস্থান, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ, কর্ণাটক, পুদুচেরি ও সিকিমের কয়েকটি এলাকায় পরীক্ষামূলক ভাবে এই প্রক্রিয়া চালানো হয়েছে। তার ফলাফল খুবই উৎসাহব্যঞ্জক।
তা দেখেই প্রধানমন্ত্রী গোটা দেশে এই ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে আজ একটি রূপরেখাও তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে প্রকল্প রূপায়ণের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়েছেন মনমোহন। যে কমিটিতে অর্থ, তথ্য-প্রযুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, সংখ্যালঘু বিষয়ক, স্বাস্থ্য, খাদ্য-সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা থাকবেন। এই কমিটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজ ও সমন্বয় করবে। সময় বেঁধে প্রকল্প রূপায়ণের জন্য এই মন্ত্রকগুলির সচিবদের নিয়ে একটি ন্যাশনাল এগজিকিউটিভ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে গড়া হয়েছে প্রকল্প রূপায়ণ কমিটি।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, স্থির হয়েছে প্রতিটি মন্ত্রকের আওতায় একটি ইলেকট্রনিক বেনিফিট ট্রান্সফার কমিটি থাকবে। যে কমিটি উপভোক্তাদের তালিকা, তাদের টাকা পাঠানোর নিয়মনীতি, নিয়ন্ত্রণ ও নিরীক্ষণের কাজ করবে। |
|
|
|
|
|